ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসার নামে প্রতি বছর লাখ লাখ রোগী বিদেশ যাচ্ছে ॥ তিন শতাধিক এজেন্ট সক্রিয়

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৭ মে ২০১৬

চিকিৎসার নামে প্রতি বছর লাখ লাখ রোগী বিদেশ যাচ্ছে ॥ তিন শতাধিক এজেন্ট সক্রিয়

নিখিল মানখিন ॥ বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে তিন শতাধিক এজেন্ট ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। এজেন্টদের কারণেই বিদেশে পাড়ি জমান অনেক রোগী। বিদেশী চিকিৎসার সুনাম এবং দেশী চিকিৎসার দুর্নাম রটিয়ে প্রচারণা চালায় এসব এজেন্ট। তারা অত্যন্ত কৌশলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশীয় চিকিৎসার মান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তারা এ দেশের চিকিৎসা সেক্টরে প্রভাব রাখে। সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সম্মেলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে। অনেক দেশীয় চিকিৎসকও এই এজেন্টদের কাছে বিক্রি হয়ে যান। এজেন্টদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অনেক দেশীয় চিকিৎসক রোগীদের বিদেশে (নিজেদের চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে) যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার পক্ষে গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিক্যাল ট্যুরিজম সেন্টার। গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর চাঁনখারপুলে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের’ নির্মাণকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত সম্ভব। বহু লোক বিদেশে চলে যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। যারা বড়লোক তারা বিদেশে যাবে, তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সমমানের চিকিৎসা আমাদের দেশের ডাক্তাররা দিতে পারবে নাÑ এটা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ আমার দেশের ডাক্তাররা যথেষ্ট মেধাবী। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। উন্নত ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মেধাবী আখ্যায়িত করে তাদের কাজের সুযোগ করে দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে এজেন্টের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার নামে লাখ লাখ রোগী পাঠানো হচ্ছে। চিকিৎসা বাবদ দেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশ চলে যায়। দেশব্যাপী তিন শতাধিক এ রকম এজেন্ট রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার রোগী বিদেশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ভারতেই যাচ্ছে গড়ে প্রতি মাসে ১৫ হাজার রোগী। বাকিরা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া যাচ্ছে বলে এজেন্ট প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন। এ হিসাবে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই লাখ লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান বলে এজেন্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এসব এজেন্ট প্রতিনিধি ভিসা প্রসেস ও সংশ্লিষ্ট দেশের ডাক্তারের সঙ্গে সাক্ষাত করানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। এজন্য তারা প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে তিন হাজার টাকা ফি নেন বলে জানিয়েছেন। এ প্রক্রিয়া ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ প্রশাসনের বড় বড় কর্মকর্তা ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিরা অনেক সময়ে বিদেশে ভ্রমণ করার সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন, যার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। তাতেও কোটি কোটি টাকা খরচ হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। রাজধানীর ধানম-ির এমন একটি প্রতিষ্ঠান ইনটেক্স কেয়ার (গ্লোবাল ট্রেড লিংক)। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তারা ভারতের বিখ্যাত হাসপাতালসমূহে হার্ট, ক্যান্সার, কিডনি চিকিৎসা, লিভার চিকিৎসা, বাইপাস সার্জারি, হাঁটুর অপারেশন, বোনম্যারো প্রতিস্থাপনসহ সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর কাজ করে থাকেন। এছাড়া তারা মেডিক্যাল ভিসা সহায়তা ও এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করান। এজন্য তারা মাঝে মধ্যে এ সংক্রান্ত সহায়তার কথা তুলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেন। সূত্র জানায়, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য বিদেশে রোগী পাঠান সারাদেশের তিন শতাধিক এজেন্ট। এর মধ্যে রাজধানী থেকেই দেড় শতাধিক এজেন্ট শুধু ভারতেই রোগী পাঠান। আর ২০ থেকে ২৫টি এজেন্ট আছেন, যারা অন্যান্য দেশে রোগী পাঠান। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বড় বড় জেলা থেকে এ রকম এজেন্টরা রোগী পাঠান বলে তারা উল্লেখ করেন। ইনটেক্স কেয়ার সূত্র জানায়, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে ভারতেই পাঠানো হয় গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী। আর বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহ তথা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া যান আরও ১০ থেকে ১৫ জন রোগী। প্রত্যেকের কাছ থেকে ভিসা প্রসেস ও ডাক্তার এ্যাপয়েন্টমেন্টসহ নানা কাজের সহায়তার জন্য তিন হাজার টাকা নেয়া হয়। তারা জানান, দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীরা এভাবে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন বলে এজেন্ট প্রতিনিধি জানিয়েছেন। ওই সূত্র দাবি করে, তাদের মতো এ রকম প্রতিষ্ঠান সারাদেশে তিন শতাধিক রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করানো হয়। সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশ থেকে দিন দিন বিদেশে রোগী যাওয়ার মাত্রা বাড়ছে। আগে তার এজেন্টের মাধ্যমে প্রতি মাসে ভারতে ৩০ থেকে ৪০ রোগী চিকিৎসার জন্য গেলেও এখন তা অনেক বেড়ে গেছে। সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর এজেন্টদের মাধ্যমে বিদেশে চিকিৎসাসেবা নেয়ার প্রবণতা বেশি। কারণ বিদেশে চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। যাদের কাছে প্রচুর অর্থ আছে কেবল তারাই বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু মধ্য-বিত্ত ও নিম্ন-বিত্ত শ্রেণীর রোগীর সংখ্যা খুবই কম। আর গরিব রোগীদের এভাবে চিকিৎসা নেয়ার মতো সামর্থ্য নেই বলে জানান ইনটেক্স কেয়ারের কর্মকর্তারা। মহাখালীতে অবস্থিত জিডি এ্যাসিস্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে রোগী পাঠায়। মূলত তারা মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাসেবার জন্য বাংলাদেশ থেকে রোগী পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ডাক্তারের এ্যাপয়েন্টমেন্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং রোগী কোন হাসপাতালে যাবেনÑ এসব বিষয়ে কাউন্সিলিং করে থাকেন। এ বাবদ তারা কোন ফি নেন না। তবে ভিসা প্রসেসিং বাবদ ৪ হাজার টাকা দিতে হয় রোগী বা তার অভিভাবককে। তিনি জানান, তারা দুই বছর ধরে মালেশিয়ায় রোগী পাঠানো শুরু করেছেন। সে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির কাজে ব্যস্ত ছিলেন তারা। মূলত ২০১৫ সালে ৭০ জনেরও বেশি রোগী পাঠিয়েছেন। তারা শুধু মালেশিয়ায় রোগী পাঠান। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাসেবা নেয়ার জন্য বাংলাদেশী রোগীদের মধ্যে উদ্বুদ্ধ করে হেলথকেয়ার উইকও পালন করেছে। মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাসেবা নিতে বাংলাদেশীদের সচেতনতা করতে জিডি এ্যাসিস্ট লিমিটেড কাজ করছে। দেশীয় চিকিৎসাব্যবস্থার পক্ষে গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিক্যাল ট্যুরিজম সেন্টার ॥ ব্যবসায়িকভাবে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি এদেশে গড়ে উঠা মেডিক্যাল ট্যুরিজম সেন্টারগুলো। ‘এফ এ্যান্ড এফ মেডিক্যাল ট্যুরিজম সেন্টার, ঢাকা’ সেগুলোর একটি। লোকসানে পড়ে বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে এ সেন্টার। এ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী মোঃ আবদুল ফজল জনকণ্ঠকে জানান, এ প্রতিষ্ঠান বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগী পাঠানোর কাজ করত। সব ব্যবস্থা করে দেয়ার সুবাদে বিদেশী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট একটা কমিশন দিত। কিন্তু ভিসা হাতে পাওয়ার পর রোগীরা আমাদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করত। বিদেশে গিয়ে রোগীরা আমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হাসপাতাল এড়িয়ে নিজেদের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করত। এতে কমিশন থেকে বঞ্চিত হতাম আমরা। একজন রোগীকে বিদেশে পাঠানোর চূড়ান্ত ব্যবস্থা করতে আমাদের ভাল পরিমাণ টাকা খরচ হতো। এভাবে চলতে গিয়ে বড় ধরনের লোকসানে পড়ি। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফেলি। বর্তমানে দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। তবে ব্যক্তিগত চেষ্টায় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যায়। পরিচিত লোকজনের মাধ্যমেও কেউ কেউ পাড়ি জমায় বলে জানান এফ এ্যান্ড এফ মেডিক্যাল ট্যুরিজম সেন্টার ঢাকার সমন্বয়কারী মোঃ আবদুল ফজল। একই কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ‘ফাহাদ মেডিক্যাল ট্যুরিজম লিমিটেড’। তবে বাংলাদেশে এখনও ব্যাংক হাসপাতাল, সিঙ্গাপুরের এ্যাপোলো হাসপাতাল ও বুমরুল গ্র্যাড হাসপাতালের প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রতিনিধিরা রোগী সংগ্রহ করে নিজেদের চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের অন্যান্য কারণ ॥ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, দেশের সর্বত্র প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার অবকাঠামো বেশ মজবুত। কিন্তু দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রযুক্তিগত দিক এখনও সর্বজনীনভাবে আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠতে পারেনি। স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো শক্তিশালী হলেও আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মেডিক্যাল ট্যুরিজম বলতে বোঝায়, যখন কেউ চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যজনিত কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা একই দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান এবং স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বা রোগমুক্ত থাকতে চান। বিদেশে চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়ার কারণসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল্লাহ আল সাফী মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, তথ্য বিভ্রাটের শিকার হয়ে অনেকে বিদেশে যায়। ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যরা বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পেতেই বিদেশে গিয়ে থাকেন। অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কেউ কেউ দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখতে পারেন না। তাদের অনেকে দেশের প্রথম শ্রেণীর সকল হাসপাতালের খোঁজখবর নেন না। আর অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা বাধ্য হয়েই বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। দেশে এখনও কিছু সংখ্যক জটিল রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। লিভার সংযোজন ও কার্ডিয়াক হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশনের ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় রোগীকে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। বিদেশে যাওয়ার পেছনে দেশীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত দুর্বলতাকে দায়ী করলেন ডক্টর ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই মাহবুব। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশীরা মূলত দুটি কারণে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। এক শ্রেণীর মানুষ বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করেন। আর দেশে চিকিৎসা গ্রহণের পরও শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে ওই রোগী বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করে থাকেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবকাঠামো অনেক শক্তিশালী। কিন্তু এখনও দেশের সর্বত্র বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নেই। শুধু তাই নয়, কিছু জটিল রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়ে গেছে। কয়েক মাসে দেশে শুরু হয়েছে বোনম্যারো প্রতিস্থাপন কার্যক্রম। তাও আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক। পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি অপারেশন সম্পন্ন হলেও দেশের কোন হাসপাতালেই স্থায়ীভাবে লিভার সংযোজন কার্যক্রম শুরু হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা নয়, জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর জন্যই মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমায় বলে অধ্যাপক ডাঃ রশিদী-ই মাহবুব জানান। বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, যখনই মানুষ দেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান, তখনই মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই ব্যয়িত অর্থ বৈধভাবে খরচ হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি বড় অংশ চলে যায়। পাশাপাশি অবৈধভাবে অনেকে খরচ মেটানোর জন্য অর্থ বহন করেন। গবেষণাকালে দেখা গেছে, সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে গিয়ে থাকেন। এই সামর্থ্যরে মধ্যে তিনটি উপাদান রয়েছেÑ আর্থিক সঙ্গতি, লোকবলের সঙ্গতি, যোগাযোগের সঙ্গতি। মূলত আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে থাকে মানুষ চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, চীন ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাবে কিনা। চিকিৎসার সময়ে রোগীর সঙ্গে এটেন্ডেন্ট নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রসেসিংও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে তাতে সরাসরি যোগাযোগ কিংবা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগে চিকিৎসা নিয়েছেন অথবা এখনও ওই দেশে অবস্থান করছেনÑ সেটিও মেডিক্যাল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে ওই রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট হাসপাতালকে নির্বাচন করা অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেকেই ভারতে মেডিক্যাল ট্যুরিজমের জন্য গিয়েছেন।
×