ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আটকে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ মে ২০১৬

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ  কমিটি আটকে গেছে

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় কাউন্সিলের পর দেড় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি। চার দফায় ৪২ জনকে পদ দেয়ার পর আটকে গেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ৯০ শতাংশ কেন্দ্রীয় নেতা এখনও নতুন কমিটিতে পদ না পাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে হাইকমান্ড নাখোশ হতে পারে ভেবে কেউ মুখ খুলছেন না। সূত্রমতে, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া যেতে পারে এমন পাঁচ শতাধিক নেতার নামের একটি তালিকা লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়। এর পর দফায় দফায় বিভিন্ন পদে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে কমিটিতে ক’জন নেতার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে কমিটিতে পরবর্তী ধাপে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত থাকা নেতাদের নামও আর প্রকাশ করা হচ্ছে না। এদিকে, জাতীয় কাউন্সিলের পর যেসব নেতাকে বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন পদ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় তাদের মধ্যে এখন চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ, চার দফা কমিটি ঘোষণার পর আগের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় তারা এখন দলে নিজের পদ কী তাও বলতে পারছেন না। এছাড়া আগের কমিটিতে যে পদ ছিল তাও বহাল থাকবে না পদোন্নতি বা পদাবনতি হবে তাও বলতে পারছেন না। আর কমিটির বিষয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া আর কেউ কিছু বলতে পারছেন না, বিধায় এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ারও কোন সুযোগ পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে কোন কোন সিনিয়র নেতা দলীয় কর্মকান্ডে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকছেন। তবে বিএনপির এমন কিছু নেতা আছেন যারা ঘোষিত চার দফা কমিটিতে যে স্তরের নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে সে স্তরে থাকার যোগ্য। কিন্তু এ স্তরের তাদের নাম না থাকায় কেউ কেউ আরও বেশি হতাশ হয়েছেন। ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের কর্ম অধিবেশনে প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও তাঁর লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানকে পুনরায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আর ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে পুনরায় কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ৯ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির ১৬ নেতার নাম। এর মধ্যে সাতজন যুগ্ম-মহাসচিব ও নয়জন সাংগঠনিক সম্পাদক। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া সাতজন যুগ্ম-মহাসচিবের মধ্যে রয়েছেনÑ আগের কমিটির একই পদে থাকা ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, আগের কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আগের কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, আগের কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী। তৃতীয় দফায় ঘোষিত বিএনপির নয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আগের কমিটির একই পদে থাকা ফজলুল হক মিলন (ঢাকা বিভাগ) ও আসাদুল হাবিব দুলু (রংপুর বিভাগ) রয়েছেন। বাকি সাতজন নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেনÑ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন (চট্টগ্রাম বিভাগ), আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা বিভাগ), আগের কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (রাজশাহী বিভাগ), আগের কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক ইমরান সাহেল পিন্স (ময়মনসিংহ বিভাগ), আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জীবন, আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ ( প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ) ও আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল বিভাগ)। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ঘোষিত তালিকায় স্থান পান আরও ২১ নেতা। এদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে স্থান পান সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব) আনোয়ারুল আজিম (প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগ)। আর বাকি ২০ জন হলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০ সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা হলেনÑ ঢাকা বিভাগে আবদুস সালাম আজাদ ও শহীদুল ইসলাম বাবুল, চট্টগ্রাম বিভাগে মাহাবুবুর রহমান শামীম ও আবুল হাশেম বকর, রাজশাহী বিভাগে আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা ও শাহীন শওকত, খুলনা বিভাগে অনিন্দ ইসলাম অমিত ও জয়ন্ত কু-ু, বরিশাল বিভাগে আখন্দ কুদ্দুস ও মাহবুবুল হক নান্নু, সিলেট বিভাগে দিলদার হোসেন সেলিম ও কলিম উদ্দিন মিলন, রংপুর বিভাগে শামসুজ্জামান ও সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগে মোশতাক মিয়া ও আবদুল আউয়াল খান, ময়মনসিংহ বিভাগে শরীফুল আলম ও ওয়ারেস আলী মামুন, প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে আলী নেয়াজ মাহমুদ খৈয়াম ও সেলিমুজ্জামান সেলিম। যোগ্য অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ঘোষিত বিএনপির কমিটিতে বিভিন্ন পদে স্থান পাওয়ার আশা করলেও নিজেদের নাম না দেখে হতাশ হয়েছেন। আবার এতবড় পদ পাওয়ার আশা না করেও নতুন নির্বাহী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ (প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ) ও আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল বিভাগ)। এছাড়াও নতুন কমিটিতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন আগের কমিটির কোন পদে না থেকেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে হিসেবে। আর ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া শহীদুল ইসলাম বাবুল ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। এ কমিটির আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। আগের কমিটিতে সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা জয়ন্ত কু-ু এবার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন কমিটির অন্য সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে কলিম উদ্দিন মিলন, মাহবুবুল আলম নান্নু, আখন্দ কুদ্দুস ও শাহীন শওকত আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। অথচ আগের কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ বেশ ক’জন সক্রিয় নেতা রয়েছেন যারা এখনও কোন পদ পাননি। আবার যে সকল পদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তার উপরে কিংবা নিচেও তাদের স্থান দেয়া বেমানান হবে বলে দলের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন। বিএনপির আগের কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে ঘোষণা করা হবে এবং কাকে কোন পদ দেয়া হবে তা চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলতে পারবেন। তবে আমাদের পরামর্শ চাইলে অবশ্যই আমরা আমাদের কথা তাকে জানাব। আর তারেক রহমান বিদেশে থাকলেও তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তাই দলের যে কোন বিষয়ে তিনি তার মতামত দিতেই পারেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, দলকে ঢেলে সাজানোর কথা বলে আমরা জাতীয় কাউন্সিল করেছি। কিন্তু দলের কমিটি গঠন নিয়ে এখন সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা কাম্য নয়। তবুও আশা করব যোগ্য ও মেধাবী নেতাদের স্থান দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।
×