ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বস্তরের মানুষের আনন্দ উল্লাস

নওয়াব প্যালেস সংরক্ষণ করবে সরকার

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৭ মে ২০১৬

নওয়াব প্যালেস সংরক্ষণ  করবে সরকার

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নওয়াববাড়ির ঐতিহাসিক প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকায় পুরাকীর্তি আইন অনুযায়ী পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ বিবেচিত হওয়ায় সরকার প্রাচীন এই স্থাপনা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত একটি সিদ্ধান্ত আদেশ বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছেছে। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন টেলিফোনে জানিয়েছেন তিনি এই সিদ্ধান্তের কাগজ পেয়েছেন। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, নওয়াববাড়ি বিক্রি হওয়ার আগে ও বিক্রির পর বগুড়ার ঐতিহ্য রক্ষায় দৈনিক জনকণ্ঠে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বগুড়ায় এই খবর প্রচার হওয়ার পর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে উৎসাহী লোকজনের উদ্যোগে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায়। প্রতিটি পয়েন্টে আনন্দিত লোকজন সরকারের এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত হয়ে বলাবলি করে ‘বগুড়ার ঐতিহ্য রক্ষা পেল।’ তারা সরকারকে অভিনন্দন জানায়। একই সঙ্গে শুধু সংরক্ষন নয় এই স্থাপনা সরকারকে অধিগ্রহণের আহ্বান জানায়। সরকারের ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে পুরাকীর্তি সংরক্ষণের এই বিজ্ঞপ্তিটি পরবর্তী গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেটে প্রকাশের জন্য দুই ফর্দ বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ সরকারী মুদ্রানালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, তারাও এমন খবর পেয়েছে। পরবর্তী সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিয়মানুযায়ী সরকার কোন স্থাপনা সংরক্ষণ করলে সরকারই তার দেখভালের দায়িত্ব নেয়। এই ক্ষেত্রে বগুড়ায় অবস্থিত প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার দুই বিভাগের অপরিসর ও সঙ্কুচিত অফিসটি নওয়াব প্যালেসে স্থানান্তরের কথাও উঠেছে। নওয়াবের এই বসতভিটা কিনেছেন বগুড়ার প্রথম সারির তিন ধনী। তারা হলেন বগুড়া চেম্বারের বর্তমান সভাপতি মাসুদার রহমান মিলন, সহ-সভাপতি শফিকুল হাসান জুয়েল ও সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল গফুর। দলিলে দাতা স্বাক্ষর আছে মোহাম্মদ আলীর ৩ ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ২ ছেলে সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও সৈয়দ হামদে আলীর। তারা মোহাম্মদ আলীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী হামিদা বানুর ছেলে। মোহাম্মদ আলীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী লেবাননী মহিলা আলিয়ার এক ছেলে এক মেয়ে যথাক্রমে সৈয়দ মাহমুদ আলী ও মাহমুদাকে না জনিয়েই গোপনে এই সম্পত্তি বিক্রি করা হয়। উল্লেখ্য, এ বছর ১৪ জানুয়ারি সৈয়দ মাহমুদ আলী কানাডা থেকে বগুড়া এসে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বংশের শেষ বসতভিটা রক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। এই প্যাালেসের উত্তর ধারে কয়েক একর ওয়াক্্ফ’ ভূমি বিক্রি করা হয়। যা কিনে নেয় বিড়ি ফ্যাক্টরির দুজন মালিক ও একটি বেসরকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। সরকারী নিয়মে ওয়াক্্ফ’ সম্পত্তি বেচা-কেনা নিষেধ। তার পরও এই ভূমি বিক্রি হয়েছে। সেখানে তিনটি বহুতল মার্কেট গড়ে উঠেছে। প্যালেসের সামনের একাংশ বছর তিনেক আগে বিক্রি করা হয় বড় ব্যবসায়ী রানার গ্রুপের কাছে। সেই দলিলেও আন্ডার ভেল্যুয়েশনে মাত্র ৬ কোটি টাকা লিখা হয়। তখন ভূমিসহ ওই স্থাপনার দাম ছিল অন্তত ৪০ কোটি টাকা। সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল স্থাপনা। এখানেও রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে।
×