ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-কুয়েত ঘনিষ্ঠতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৭ মে ২০১৬

বাংলাদেশ-কুয়েত ঘনিষ্ঠতা

সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা এবং জঙ্গীবাদ মুসলিম উম্মাহ এবং সমগ্র মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আজকের বিশ্বে। একই সঙ্গে এটি মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ ও কুয়েত এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রশ্নে দেশ দুটি জিরো টলারেন্স নীতিকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সিরিয়া এবং লিবিয়াতে সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট সমস্যাবলী সমাধানে একযোগে কাজ করার ব্যাপারেও দুটি দেশ মতৈক্যে পৌঁছেছে। অবশ্য বাংলাদেশ জঙ্গী ও সন্ত্রাস নিরসনে জাতিসংঘ এবং ওআইসির নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও দুটি দেশ অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, জনশক্তি রফতানি, সামরিক ও আইসিটি ক্ষেত্র সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছে। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ্্র বাংলাদেশে তিন দিন সফরকালে বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হলো। একই সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। ২৩ দফা যৌথ ঘোষণায় তা আবারও প্রমাণিত হলো। কুয়েত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট রাষ্ট্র হলেও জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ এটি। বাংলাদেশ ও কুয়েতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৯৭৩ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৭৪ সালে সে দেশের আমির ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুকে লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর এই দুই মুসলিম দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার দৃঢ় ভিত্তিতে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেই আস্থা এখনও অটুট রয়েছে। দু’দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর কাজ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশ সফর করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেন। নব্বই দশকে দেশ দুটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করে। সফল প্রতিরক্ষা সহযোগিতার শুরু সেখান থেকেই। ইরাকী আগ্রাসন থেকে কুয়েতের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক বাহিনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা সম্পর্ককে গভীরতর করে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারের একটি কুয়েত। তবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়া হার হ্রাস পায়। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৬ সালে কুয়েত জনশক্তি নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। শেখ হাসিনা ২০১০ সালে কুয়েত সফরকালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ২ লাখের বেশি কর্মী কুয়েতে রয়েছেন। বাংলাদেশ এ সংখ্যা বাড়াতে চায়। এজন্য যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিজাত পণ্য, নিটওয়্যার ও হিমায়িত খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য রফতানি করে থাকে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা গেলে দু’দেশই উপকৃত হবে। কারণ এদেশের ওষুধ, সিরামিক সামগ্রী, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়ার তৈরি পণ্যের মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ খাতও এখন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে উভয় দেশই লাভবান হবে। তেলসমৃদ্ধ দেশটিকেও বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের অব্যাহত পতনের ধাক্কা সামলাতে এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। কম মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়ার জন্য বাংলাদেশই উপযুক্ত বলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে। দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চারটি চুক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তার ঘটাল। সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র সন্ধান এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে উভয় দেশই লাভবান ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এতে মুসলিম উম্মাহর শক্তি আরও দৃঢ় হবে।
×