ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচ্ছন্ন নগরীর নতুন সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৭ মে ২০১৬

পরিচ্ছন্ন নগরীর নতুন সংস্কৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিচ্ছন্ন ঢাকা গঠনের লক্ষ্যে রাজধানীতে বসানো হচ্ছে ময়লা ফেলার বিন। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে এই ময়লার বিন। নগরবাসীও এ বিনগুলোর যথাযথ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। তবে এর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরবর্তী পরিচর্যার ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের। ময়লা ফেলার বিন বসানোকে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে রাজধানীর ফুটপাতের দৃশ্য। শহরের অধিকাংশ সড়ক ধরে হাঁটলেই এখন চোখে পড়ে এমন ময়লার ঝুড়ি। হাতে থাকা পানির খালি বোতল, চিপস কিংবা চকোলেটের প্যাকেট চলতে চলতে একটা ডাস্টবিনের জন্য অপেক্ষা না করে রাস্তায় ফেলে দেয়া যেভাবে নিয়ম বনে গিয়েছিল, সেখানে গত কয়েক দিনেই বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। আগে রাজধানীর যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলায় তা পরিষ্কার করতে হিমশিম খেতে হতো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এ সমস্যা সমাধানে রাজধানীতে রাস্তার পাশে ছোট ছোট বিন বসানো শুরু করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) প্রায় ২ হাজার বিন স্থাপন করেছে। ডিএসসিসি বিন বসানোর কাজ শুরু করে গত সপ্তাহের সোমবার। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) গত শনিবার নগরীর বনানী-কাকলী এলাকায় বিন বসানোর কাজ শুরু করে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পথচারীদের অনেকেই তাদের পুরনো অভ্যাস বদলে রাস্তার পাশের বিনগুলোতে ময়লা ফেলছেন। অল্প ব্যবধানে বিন বসানোর কারণে নগরবাসী এর সুবিধা ভোগ করতে পারছেন বলে জানান অনেক পথচারী। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনগুলো ছোট হওয়ায় কম দূরত্বে এগুলো বসানো হয়েছে। এতে সবাই খুব অল্প কষ্টেই এই বিন হাতের নাগালে পান। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও জানা গেছে, কোন ধরনের প্রচার ছাড়াই নগরবাসীর এ ধরনের সচেতনতা তৈরি হওয়ায় উৎসাহ পাচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং কর্মকর্তারা। তাই আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ ধরনের ১০ হাজার সাতশ’ ডাস্টবিন বসানোর জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও তার পরিচর্যার জন্য আলাদা দলও তৈরি করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, এ বছরকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় বিন বসানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে, রাজধানীর অধিকাংশ নাগরিক এসব বিন ব্যবহার করছেন। তারা কষ্ট করে হলেও চলার পথে তাদের হাতে থাকা ময়লা বিনে ফেলছেন। এটা খুব ভাল লক্ষণ যে, নগরবাসী নিজে থেকেই সচেতন হচ্ছেন। তবে এখনও সবাই এই বিন ব্যবহার করছেন না। তাই আমরা চেষ্টা করব সবাইকে সচেতন করতে। তবে আমরা বর্তমানে যে সাড়া পাচ্ছি, এভাবে ধীরে ধীরে সবাই সচেতন হলে আমাদের পক্ষেও এসব সেবামূলক কাজ খুব দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় ৫ হাজার ৭০০টি ডাস্টবিন বসানোর লক্ষ্য রয়েছে। মে মাসের মধ্যেই এসব বিন বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জানা গেছে, যেসব স্থানে জনগণের ভিড় বেশি, আপাতত সেখানে ১৫০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করা হচ্ছে। আর যেখানে জনসমাগম কম হয়, সেখানে স্থাপন করা হচ্ছে ৩০০ মিটার পর পর। এছাড়া ডিএসসিসি ইতোমধ্যে ২৫টি বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন চালু করেছে। যেসব এলাকায় বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন শুরু হয়েছে, সেখানে আর কেউ রাস্তায় ময়লা রাখতে পারছেন না। ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, যে সমস্ত স্থানে জনগণের ভিড় বেশি হয়, সেখানে আমরা ১৫০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করছি। আর যেখানে জনসমাগম কম হয় সেখানে প্রতি ৩০০ মিটার পর পর বিন স্থাপন করা হবে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে এ ধরনের ৭২টি বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন চালু হলে নগরীর রাস্তার ওপরে কোন ময়লা থাকবে না। এ কাজে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন ডিএসসিসি কর্মকর্তারা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, রাজধানীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমরা আমাদের কাজ করে যাব। তবে আমরা তখনই সফল হতে পারব, যখন দেখব নগরীর প্রতিটা মানুষ শহরকে নিজের মনে করে পরিষ্কার রাখছে। তাহলে বিনগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। নগরপরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন, শুরুটা ভাল হলেও এর সফলতা নির্ভর করছে সঠিক তদারকির ও পরবর্তী সময়ের পরিচ্ছতার ওপর। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেও উদ্যোগী হতে সিটি কর্পোরেশন প্রতি আহ্বান তাদের।
×