স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশক হত্যাকা-ে জাতিসংঘের তদন্ত দাবি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬ মানবাধিকার সংগঠন। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে দেয়া এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের বর্তমান ‘উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে’ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে একটি ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো হলো-পেনআমেরিকা, আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিশার্স ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম টু পাবলিশ কমিটি, কানাডিয়ান জার্নালিস্ট ফর ফ্রি এক্সপ্রেশন, সেন্টার ফর এনকোয়ারি, সিটি অব এসাইলাম পিটসবুর্গ, আইকর্ন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট, ইংলিশ পেন, ইউরোপিয়ান হিউম্যানিস্ট ফেডারেশন, ফ্রিডম হাউস, ফ্রিমিউজ, হেগ পিস প্রোজেক্ট, হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট, ইনডেক্স অন সেন্সরশিপ, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়ন, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া সাপোর্ট (আইএমএস) ও পেন বাংলাদেশ।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ভিন্নমত প্রচারের কারণে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত নয়জন লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজনকে গতমাসেই হত্যা করা হয়েছে। এর বাইরেও ভিন্ন মত প্রকাশের কারণে অনেকেই আক্রমণের শিকার হয়েছেন; হুমকির মুখে বাধ্য হচ্ছেন সন্ত্রস্ত জীবনযাপনে। হত্যায় জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের ধরতে বাংলাদেশ সরকার ‘ব্যর্থ কিংবা অনিচ্ছুক’ বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তারা হত্যাকারীদের পরিবর্তে খুন হওয়া লেখক, ব্লগার, প্রকাশক ও রাজনৈতিক কর্মীদেরই দায় দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনাও করা হয় বিবৃতিতে। পহেলা বৈশাখে এক অনুষ্ঠানে ধর্মীয় প্রসঙ্গ নিয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে সতর্ক করে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “একটা ফ্যাশন দাঁড়িয়ে গেছে যে, ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই তা হয়ে গেল মুক্তচিন্তা। আমি এটাকে মুক্তচিন্তা দেখি না। আমি এটাকে দেখি নোংরামি। এত নোংরা নোংরা লেখা কেন লিখবে? আমি আমার ধর্ম মানি, আমি যাকে নবী মানি তার সম্পর্কে নোংরা কথা যদি কেউ লেখে, সেটা কখনও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। এ ধরনের বক্তব্য ‘খুনীদের উৎসাহিত’ করছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
নিহতদের ওপর দায় চাপানো এসব বক্তব্য এমন এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যেখানে খুনীরা উৎসাহিত হচ্ছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার ধ্বংস হচ্ছে।”
জঙ্গীদের ‘হিটলিস্টে’ থাকা ব্লগার ও লেখকদের বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ‘যথাযথ নিরাপত্তা’ না দেয়ায় বিবৃতিতে হুমকির মুখে থাকা এসব ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। পেন আমেরিকা গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে এক চিঠিতে বাংলাদেশে হুমকির মুখে থাকা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের ‘মানবিক কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: