ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তেল শোধনাগার স্থাপনে সহযোগিতার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৬ মে ২০১৬

তেল শোধনাগার স্থাপনে সহযোগিতার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ তেল শোধনাগার স্থাপনে কুয়েতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নেয়ার জন্য কুয়েতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের এসব প্রস্তাবকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে কুয়েত। এছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। বাংলাদেশীদের জন্য কুয়েতের ভিসা সহজীকরণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের বিষয়ে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নীতিতে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ ও কুয়েত আলোচনা অব্যাহত রাখবে। ঢাকায় কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ঘোষণায় এসব বলা হয়েছে। এদিকে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের জন্য কুয়েতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিন দিনের সরকারী সফর শেষে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আলসাবাহ বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তিনি একান্ত বৈঠক করেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়ে দুই দেশ একযোগে ২৩ দফা যৌথ ঘোষণা করেছে। যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপনে সহযোগিতার জন্য কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রেক্ষিতে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল সাবাহ জানিয়েছেন, বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাত ও তেল শোধনাগার উন্নয়নে কুয়েতের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে কুয়েত। কুয়েতে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক জনশক্তি নিয়োজিত থাকায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে পেশাজীবী, দক্ষ, আধা দক্ষ কর্মীরা কুয়েতের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। কুয়েতে আরও জনশক্তি নেয়ার জন্য কুয়েতের প্রতি অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ হাসিনার প্রস্তাবকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে নেবে বলে জানিয়েছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুত-জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, মানবসম্পদ, অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ও কুয়েত একযোগে কাজ করবে। বিনিয়োগসংক্রান্ত চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কুয়েতের বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ককে ‘চমৎকার’ হিসেবে অভিহিত করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া দুই দেশের সামরিক সহযোগিতা চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেছেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সামরিক সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হবে। সিরিয়ার জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে কুয়েতের ভূমিকার প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া সিরিয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। জেনেভা ইশতেহার অনুযায়ী সিরিয়ার সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য রক্তপাত শেষ করে স্বাধীনতা ও অখ-তা সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া গণতান্ত্রিক সিরিয়ার জন্য জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ ও মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন উভয় প্রধানমন্ত্রী। শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় উভয় দেশ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া উভয় পক্ষ মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ভিসাসহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ও কুয়েত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোক্তা, পর্যটক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পরিবাররের সদস্যদের ভিসা সহজীকরণের জন্য অনুরোধ জানান। বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ উন্নয়ন, সামরিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা ও ভিসা সহজীকরণসংক্রান্ত চারটি চুক্তি সই হয়েছে। এসব চুক্তির ফলে বাংলাদেশে কুয়েতি বিনিয়োগের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে নিয়মিত অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানে একমত হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাসের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া আরব শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকল প্রতিবেশীকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ও কুয়েত। উভয় পক্ষই ইসরাইলের পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ও তার পবিত্র স্থানসমূহের মধ্যে অব্যাহত বসতি নির্মাণসহ কোন একতরফা কর্ম থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের বিষয়ে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নীতিতে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ ও কুয়েত আলোচনা অব্যাহত রাখবে। মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ইরাক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দুই দেশ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া ইয়েমেনের শান্তি আলোচনার জন্য কুয়েতের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে উভয় দেশ। এই চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ইরান ও উপসাগরীয় অঞ্চলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া ঢাকা সফরের সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশই দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃতিতে একমত হয়েছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া তিনি জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে বলে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। কুয়েতের চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (কেসিসিআই) ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) মধ্যে ব্যবসায়িক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের এই ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি প্রটোকল সই হয়েছে। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এশিয়ার পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকায় আসেন। বাংলাদেশের পর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় আসেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক ॥ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন, বর্ধনশীল প্রবৃদ্ধি এবং বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বিষয়টি উল্লেখ করে কুয়েত সরকারকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বিরোধীদলীয় নেতা এই আহ্বান জানান। আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ সাক্ষাতে বিরোধীদলীয় নেতা বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতের সম্পাদিত চুক্তির জন্য কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে এ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এ চুক্তির ফলে কুয়েত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। সাক্ষাতকালে তিনি বলেন তাঁর সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করে যাবে। সাক্ষাতকালে উপস্থিত ছিলেন কুয়েতের উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ্ আল-খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ্, উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থ ও ভারপ্রাপ্ত তেলমন্ত্রী আনাছ খালেদ আল সাবাহ, শিক্ষামন্ত্রী ড. বদর হামাদ-আল ইসা, বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, বিরোধীদলীয় হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর এমপি এবং হুইপ সেলিম উদ্দীন এমপি প্রমুখ।
×