ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্ব পালনের এক বছর

হাজারো সমস্যা সমাধানে নিরন্তর ছুটছেন ঢাকার দুই মেয়র

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ মে ২০১৬

হাজারো সমস্যা সমাধানে নিরন্তর ছুটছেন ঢাকার দুই মেয়র

মশিউর রহমান খান ॥ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্ণ করলেন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। গত বছরের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের পর ৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক। এই এক বছরে দুই মেয়রই কাগজে-কলমে অনেক পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও আশার কথা শুনিয়েছেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ কয়েকটি বিষয়ে তাঁদের দৃশ্যমান কিছু তৎপরতাও চোখে পড়েছে নগরবাসীর। তবে দুই সিটির ৯৩ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সড়ক আগের মতোই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির ‘প্রতিযোগিতা’ সড়কের দুর্দশাকে দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। ফলে বরাবরের মতোই ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ নগরবাসী। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যোগ থাকলেও এ সময় রাস্তা থেকে পুরনো ময়লার ডাস্টবিন সরেনি একটিও। রাস্তা ও ফুটপাথ দখলকারীরা বেপরোয়া হয়েছে আগের চেয়েও বেশি। বর্ষাকালের জলাবদ্ধতার নমুনার দেখা মিলছে গ্রীষ্মকালেই। জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কোন রূপরেখাও কেউ এ সময়ে দিতে পারেননি। দখল হওয়া পার্ক ও খেলার মাঠ উদ্ধারে নেই তেমন তৎপরতা। বেড়েছে ট্রেড লাইসেন্স ফি। অবশ্য দুই মেয়রই বলছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তাঁরা বসে নেই। নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর। এক বছরে কিছু কাজও করতে পেরেছেন বলেও দাবি দু’জনের। নগর উন্নয়নে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। অদূর ভবিষ্যতে এসবের সুফল নগরবাসী পাবেন বলে মনে করছেন তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ॥ গত বছরের ৬ মে শপথ নিলেও ১৭ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। প্রায় শূন্য কোষাগার ও চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকা এক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন তিনি। অনুমিতভাবেই ৫৭ ওয়ার্ডের বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রত্যাশা পূরণে হিমশিম খেতে থাকেন তিনি। নির্বাচনের আগে নগরসমস্যা সমাধানে ঘোষিত ইশতেহারে ৫টি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন সাঈদ খোকন। সেগুলো হলো- যানজট নিরসন, দূষণমুক্ত, নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গা; পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতসেবা নিশ্চিত করা, পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর মহানগরী এবং দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও নাগরিকদের নিরাপদ জীবন। উদ্যোগ ও বাস্তব চিত্র ॥ গত এক বছরে এর কোনটিই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। যানজট এখনও নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তবে কয়েক দফায় পুলিশ ও বাস মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে এর সমাধান করার চেষ্টা করেছেন মেয়র। কিন্তু সে সমস্ত বৈঠক যানজট সমস্যার সমাধানে কাজে লাগেনি। ফুটপাথ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু দখলদারদের দৌরাত্ম্যে ফুটাপাথেই মারা গেছে সে উদ্যোগ। সকালে উচ্ছেদের পর বিকেলেই আবার ফুটপাথের নিয়ন্ত্রণ হকারের দখলে! এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, পুলিশের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিশাল অঙ্কের চাঁদাবাজির ঘটনা। তারপরও মেয়র চ্যালেঞ্জ নিয়ে গত ১২ নবেম্বর ‘ক্লিন গুলিস্তান’ গড়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। তাই দখলমুক্ত ফুটপাথ নগরবাসীর স্বপ্ন হয়েই থাকল। বুড়িগঙ্গার দূষণরোধে মেয়র আন্তরিক। এ জন্য প্রকল্প গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এটি শুরু হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। ফলে এর সুফল পেতেও ধৈর্য ধরতে হবে নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে বড় কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পরিবর্তে গুরুত্ব দিয়েছেন তাৎক্ষণিক সমাধানে। গত বছর বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ওয়াসার কর্মকর্তাদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। প্রতিশ্রতি দিয়েছেন এ বছর বর্ষার আগেই ড্রেন পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিবেন। সেই লক্ষ্যে কাজও করেছেন। তবে জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসারও দায় রয়েছে বলে মনে করেন মেয়র। ডিএসসিসির প্রায় প্রতিটি সড়কই এখন ভাঙ্গাচোরা। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা দক্ষিণে প্রায় ৩০০ সড়কের নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এর সুফল পেতে নগরবাসীকে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। মেয়র সড়কবাতি জ্বালানোর মাধ্যমে অন্ধকার দূর করতে এলইডি লাইট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে টিএসসি থেকে শাহবাগ হয়ে কাওরানবাজার পর্যন্ত সড়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রম ঢাকার অন্যান্য মূল সড়কে এর কাজ চলছে। তবে এখনও বেশিরভাগ এলাকা অন্ধকারই রয়ে গেছে। নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। রাজধানীর প্রতিটি সড়কের মাঝে বড় বড় কনটেনার বসিয়ে রাখা হয়েছে। বেশির ভাগ রাস্তাজুড়েই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখেন। এতে দুর্গন্ধে চলা দায়। এডিপির একটি প্রকল্পে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে তাও করতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পান্থকুঞ্জ ও হাজারীবাগে দু’টি স্টেশন নির্মাণকালে মামলার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মেয়রকে তেমন কোন উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ১০জন কাউন্সিলরকে নিয়ে দু’টি কমিটি গঠন করা হলেও তাদের কাজের ফলাফলও শূন্য। তিনি বাড়ি বাড়ি ময়লা ফেলার ব্যাগ দেয়ার ঘোষণা দিলেও খুব কম লোকই তা পেয়েছে। মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। ডিসেম্বরে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন তিনি। এর কিছু সুফলও পেয়েছেন নগরবাসী। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তার দুই ধারে ছোট ছোট ডাস্টবিনও স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ওপরে কন্টেনারের ময়লা যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সেজন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নিয়েছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা। মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, প্রশাসনিক দিক থেকে আর্থিক সঙ্কট দূর করা ছিল তাঁর প্রথম চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও দাতা সংস্থার কাছে তিনি সহযোগিতা চেয়েছেন। অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশী দাতা সংস্থার প্রতিনিধির সাথেও বৈঠক করেছেন। তারা বিভিন্ন প্রকল্প দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দু-একটি প্রকল্প পেয়েছেনও। সরকারের আড়াই শ’ কোটি টাকার পাশাপাশি আরও ৫০০কোটি টাকার প্রকল্প পাওয়া গেছে। এগুলোর কিছু শুরু হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রাস্তার পাশে খাবার বিক্রেতাদের মধ্যে প্রথমে ১০০টি পরে আরও বেশকিছু স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গাড়ি উপহার দিয়েছেন। রমজানে বাজারমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং ও খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। এবারও সেই ব্যবস্থা রয়েছে। বেদখল হয়ে থাকা খেলার মাঠগুলো নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে তৎপর হয়েছেন। ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠ দখলমুক্ত করা হয়েছে। পাবলিক টয়লেটের সমস্যা সমাধানে রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। দুর্নীতিরোধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। ফিঙ্গার প্রিন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা। কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করা হয়েছে। গুলিস্তানসহ অন্যান্য রাস্তা ও ফুটপাথের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক র‌্যালি করা হয়েছে। মেয়র এক্ষেত্রে জনগণের আরও সহযোগিতা কামনা করেছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ৬ মে শপথ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ১০ মে থেকে। নির্বাচনের আগে তিনি ‘আমরা ঢাকা’ শিরোনাম দিয়ে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ‘সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধানযাত্রা’ সেøাগান দিয়ে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা, অংশগগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ছিল তার। তিনি মশকমুক্ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকীকরণ, স্মার্ট কার্ড প্রদান, ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, স্কুলে হেলথ প্রোগ্রাম চালু, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য মিডিয়া সেন্টার করাসহ বিভিন্ন স্বপ্ন দেখান। দায়িত্ব নেয়ার এক বছুর পূর্ণ করেছেন তিনিও। উদ্যোগ ও বাস্তব চিত্র ॥ পরিচ্ছন্ন-সবুজ-আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র হয়েছেন আনিসুল। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও নগরজীবনে উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তন আসেনি। বিশাল প্রত্যাশার বিপরীতে কাজ বুঝে নেয়া ও প্রকল্প গ্রহণ করতেই সময় পার করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে তার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো, গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুরসহ উত্তরের বেশ কিছু সড়ক যানজটমুক্তকরণ ও অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ তাঁর উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান তৎপরতা। তবে এসবের শতভাগ সুফল বাস্তবে মানুষ এখনও পায়নি। উল্টো রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এর ঢেউ এখনও দেখা যায় কোথাও কোথাও। অভিজাত এলাকা নিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন গঠিত হলেও ডাস্টবিনের যন্ত্রণা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। নাকে রুমাল দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বারিধারা এলাকায় ভেতরে সমিতির উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করলেও তা ফেলা হচ্ছে নতুনবাজারের অদূরে মূল সড়কে। বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে সব সময় এখানে ময়লা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। দুর্গন্ধে চলা যায় না। তবে ডিএনসিসি বেশ কয়েকটি স্থানে মিনি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ করেছে। এর কয়েকটি রয়েছে রাস্তার গাঘেঁষে। তা ছাড়া এগুলোও খোলা জায়গায় হওয়ায় এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। মশকমুক্ত করার জন্য গত অর্থবছরে ২০০টি হস্তচালিত স্প্রে মেশিন ও ১০০টি ফগার মেশিন কেনা হয়েছে। এ বছর আরও ১০০টি ফগার মেশিন, ১০০টি স্প্রে মেশিন এবং চারটি হুইল ব্যরো মেশিন কেনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তারপরও নগরীতে মশার উৎপাত কমেনি এতটুকুও, বরং ডেঙ্গুর উপদ্রব এ বছর বিগত কয়েক বছরের থেকে বেশি হয়েছে। মেয়র ফরমালিনমুক্ত খাবার উপহার দিতে বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নয়ন হয়নি। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই তাদের অবৈধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কাছে চরম অসহায় হয়ে এখন এ কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। কোরবানির পশুহাটের সিন্ডিকেটও ভাঙতে পারেননি তিনি। মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ, স্কুলে হেলথ প্রোগ্রাম চালু, সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য মিডিয়া সেন্টার করার কথা থাকলেও তার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিলবোর্ড অপসারণে বেশকিছু সফলতাও দেখিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। নানা বাঁধা পেরিয়ে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক থেকে অবৈধ পার্কিং সরাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। পার্কিংমুক্ত করেছেন কল্যাণপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়ক ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সড়ক। কাওরানবাজারের অবৈধ দখলদারদের সরে যেতে বার বার আল্টিমেটাম দিলেও সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা সরতে রাজি নয়। আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরই সরকারের সহযোগিতা পান। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য আগে থেকেই মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া ২০০ কোটি টাকা একনেক সভায় চূড়ান্ত করা হয়। তিনি গত অর্থবছরের ৮০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার বাজেটের স্থলে নতুন বছরে তার দ্বিগুণ ১৬০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বাজেট দেয়ার সাহস দেখান। অবশ্য এর মধ্যে সরকারী অনুদান ও বিদেশী সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প থেকে ৬১১ কোটি টাকা আয় হওয়ার প্রত্যাশা ছিল তার। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গুলশান-বারিধারা ও বনানী এলাকার রাস্তা-ফুটপাথ ও ড্রেন উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকা, উত্তরা এলাকার উন্নয়নে ১২০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য এলাকার উন্নয়নে আরও ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। এ জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়া। বেশকিছু এলাকায় রাস্তা নির্মাণও সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। মেয়র আনিসুল হক জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি, কাউন্সিলরগণ এবং ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২২টি পয়েন্টে ইউ-লুপ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তেজগাঁও রাস্তার ওপর থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড অপসারণ করা হয়েছে। মহাখালী, কল্যাণপুর ও গাবতলী সড়ককে পার্কিংমুক্ত করা হয়েছে। কাওরানবাজার থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ঢাকাকে গ্রিন ও ক্লিন করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ গাছের চারা বিতরণের কর্মসূচী শুরু করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৮০ ভাগেরও বেশি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাস্তার ওপর যাতে ময়লার স্তূপ না থাকে সে জন্য ৭২টি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শতাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, আরও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। ১৬৯ জন কর্মচারীকে আন্তঃবদলি করে কাজে গতি আনার চেষ্টা করেছেন। বাজার মনিটরিং, এলাকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে অনেক কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, শীঘ্রই জনগণ এর সুফল পাবে। তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া ফুটপাথ দখলমুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
×