ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ মে ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

অন্ধকারের শক্তি হাঁ করে আছে। গিলে খেতে চায় মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন। একটার পর একটা চক্রান্ত চলছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এর পরও সত্য যে, পিছু হটছে না বাংলাদেশ। এর ভাল প্রমাণÑ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সহস্র বাধা সত্ত্বেও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারকার্য এগিয়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির পক্ষে চূড়ান্ত রায় শুনিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় ঘৃণ্য খুনীর ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দিনের প্রথম ভাগে খবরটি আসতেই বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় এক ধরনের স্বস্তি নেমে আসে। দীর্ঘকাল ধরে বিচারের দাবিতে সরব সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফাঁসি বহাল রাখার রায়কে স্বাগত জানান। এদিন যথারীতি শাহবাগে ছিলেন ইমরান এইচ সরকার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার চত্বরে সমবেত হয়েছিলেন আন্দোলনের আরও বেশ কয়েকজন সংগঠক ও কর্মী। শামস রাশীদ জয়, সৈকত ভৌমিক, পিকলু চৌধুরী, শরিফুর হাসান, নুসরাত জাহান লাকী, জাহির আহমেদ আসিফ প্রমুখের সঙ্গে কিছু সময় কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ মানুষগুলো টেলিভিশনে নেই। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে যে আন্দোলন, তার পুরোভাগে ছিলেন। নিজামীর ফাঁসির রায় বহালের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শামস রাশীদ জয় বললেন, যাদের বিচার চলছে সবাই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। এদের প্রত্যেকের ফাঁসির রায় আমাদের জন্য স্বস্তির। আমরা কলঙ্কমুক্ত হই। দেশ নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা সব সময় আছে জানিয়ে এ এ্যাক্টিভিস্ট বলেন, এর পরও আমাদের সজাগ থাকতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম সজাগ থাকবে বলেই মনে করেন তিনি। অবশ্য সজাগ থাকার তেমন কোন লক্ষণ নেই পুলিশে। একের পর এক মানুষকে দিনে-দুপুরে চাপাতি দিয়ে কোপানো হচ্ছে। অপরাধীদের ধরতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে গত কয়েকদিনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ফার্মগেটে দেখা গেল, মূল সড়কে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। সড়ক বিভাজনে আলাদা পিলার কাকতাড়ুয়ার মতো করে দাঁড়িয়েছে। ঘাড়ে দুটি করে সিসি ক্যামেরা। কারণ তৎক্ষণাত জানা যায়নি। তবে নিরাপত্তা জোরদার করতেই যে এমন ব্যবস্থা, সেটা অনুমান করা যায়। নিরাপত্তা প্রশ্নে আরও যত যা আছে তা করা উচিত। কারণ এভাবে চলতে থাকলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। দেশের মানুষ নিশ্চয়ই তা চায় না। রবিবার ২৫ বৈশাখ। কবিগুরুর জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। উপলক্ষটি সামনে রেখে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে উৎসব অনুষ্ঠান। এরই মাঝে রাজধানীতে শুরু হয়ে গেছে উৎসব অনুষ্ঠান। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে চলছে পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানমালা। এখানে কবিগুরু বন্দনা করছে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা। বুধবার উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবারও উৎসবমুখর ছিল গোটা এলাকা। এবার এমন এক সময়ে রবীন্দ্রনাথের জন্মোৎসব উদযাপন করা হয়েছে যখন ধর্মের নামে মানুষ খুনে মেতেছে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী। মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অন্ধকার এ সময়টিকে বিবেচনায় রেখে আয়োজকরা উৎসবের সেøাগান নির্ধারণ করেছেনÑ দূর করো সংশয় শঙ্কার ভার/ যাও চলি তিমিরদিগন্তের পার। সেøাগানের বিশ্লেষণে গিয়ে সংস্থার সভাপতি জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী তপন মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে আমরা একটা অন্ধকার সময় পার করছি। বিভিন্ন সংশয়-শঙ্কার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই বলে এখানে থেমে গেলে চলবে না। বরং যে কোন মূল্যে আলোর দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে সকলের প্রতি আমরা এই আহ্বান জানাব। তিনি বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা বহু বছর ধরে উৎসবটি আয়োজন করে আসছে। এর লক্ষ্যÑ সাধারণ মানুষকে রাবীন্দ্রিক ধারায় উদ্বুদ্ধ করা। আরও একটু ব্যাখ্যায় গিয়ে তিনি বলেন, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। অশান্তি চাই না। এখন যে দানবের হুঙ্কার কানে আসছে, এই হুঙ্কার আমরা আর শুনতে চাই না। এমন চাওয়া, শুভ বোধ-ই রাবীন্দ্রিক ধারা। আয়োজকরা জানান, উৎসবের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিবেশনা। নৃত্যনাট্য চ-ালিকা পরিবেশন করে নৃত্যনন্দন। আজ শুক্রবার তৃতীয় দিনে সঙ্গীতের পাশাপাশি থাকবে কিবগুরুর কবিতা থেকে আবৃত্তি। একই রকম আয়োজন থাকবে চতুর্থ দিন শনিবার। আয়োজনের শেষদিন রবিবার কবিগুরুর জন্মদিন। এদিন থাকবে বিশেষ আয়োজন। সঙ্গীতায়োজনের পাশাপাশি উদযাপন করা হবে কিংবদন্তি শিল্পী কলিম শরাফীর ৯২তম জন্মবার্ষিকী। সম্মাননা জানানো হবে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ারকে। সব মিলিয়ে চমৎকার আয়োজন। বিপুল আয়োজনে বৃহস্পতিবার প্রদান করা হলো শিল্পকলা পদক ২০১৫। স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় সাত গুণী শিল্পীকে পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়। বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতি সচিব আক্তারী মমতাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পদকপ্রাপ্ত সাত শিল্পী হলেন- চারুকলায় সৈয়দ আবুল র্বাক আল্ভী, নৃত্যকলায় সালেহা চৌধুরী, লোকসংস্কৃতিতে নাদিরা বেগম, নাট্যকলায় কাজী বোরহানউদ্দীন, যন্ত্রসঙ্গীতে সুজেয় শ্যাম, আবৃত্তিতে নিখিল সেন ও কণ্ঠসঙ্গীতে মিহির কুমার নন্দী। সম্মাননাস্বরূপ পদকপ্রাপ্তদের দেয়া হয় এক লাখ টাকা ও স্বর্ণপদক।
×