ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ জালিয়াতির তিন মাসেও মূল হোতা চিহ্নিত হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ মে ২০১৬

রিজার্ভ জালিয়াতির তিন মাসেও মূল হোতা চিহ্নিত হয়নি

রহিম শেখ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনার ৩ মাসেও মূল হোতা এখনও চিহ্নিত হয়নি। ইতোমধ্যে ফিলিপিন্সের ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ দেশটির বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দায় চিহ্নিত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল আসামিরা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিনেট, বিচার বিভাগসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত কোন কূলকিনারাই করতে পারেনি। কেননা, ফিলিপিন্সের সন্দেহভাজন ৭ ব্যক্তি টাকা লুটের ঘটনায় একে অপরকে দোষ দিচ্ছেন। এ ঘটনায় ফিলিপিনো সিনেটের ব্লু-রিবন কমিটির ছয়টি শুনানি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য কিছুই হয়নি। রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কারা জড়িত তা এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সবকিছুই আটকে আছে তদন্তের জালে। ঘটনা তদন্তে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। এদিকে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টেও দায় চিহ্নিত হয়নি। অন্যদিকে ফিলিপিন্স সরকারের তৎপরতায় দেশটির অর্থ পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিলের কাছে কয়েক দফায় অর্থ হস্তান্তর হলেও আইনী জটিলতায় আটকে আছে অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি। জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সুইফট মেসেজ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮০০ কোটি টাকা অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ফিলিপিন্সে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং বাকি অর্থ শ্রীলঙ্কায় পাচার হয়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শ্রীলঙ্কায় পাচার অর্থ তারা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছেন। অর্থ লোপাটের ওই ঘটনাটি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে গোপন রাখলেও পরে তা গণ্যমাধ্যমে প্রকাশ হয়। এই ঘটনায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কা আলাদাভাবে তদন্ত করছে। ফিলিপিন্সে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন সংস্থা সংসদের উচ্চ কক্ষ সিনেট কমিটি, মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষ, জাতীয় তদন্ত ব্যুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব কর্তৃপক্ষকে ডেকে ৬ দফায় শুনানি করেছেন। সিনেট কমিটির সর্বশেষ শুনানিতেও জেরার মুখোমুখি করা হয় সন্দেহভাজন ৭ ব্যক্তিকে। মূল হোতার নাম তো দূরের কথা জবানবন্দীতে তারা একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক দিগুইতো শুনানিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে ব্যবসায়ী জগতের বড় বড় খেলোয়াড় জড়িত। আমি শুধু দাবার চাল হিসেবে ব্যবহার হয়েছি। আমাকে ব্যবহার করেছেন ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জা ট্যান। এরমধ্যে কিম অং-ই সেই ব্যক্তি, যিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার পেয়েছিলেন এবং এ্যাকাউন্ট থেকে তুলেছিলেন। তবে অং নিজের স্বীকারোক্তিতে মায়ার দাবি অস্বীকার করে বলেন, তিনি মায়ার কাছে শুধু শুহুয়া গাও নামে একজন ডিপোজিটরকে পাঠিয়েছিলেন। একদিকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরতও দিয়েছেন চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কিম অং। বৃহস্পতিবার শেষ দফায় দেশটির এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) কাছে ৫৩ লাখ ডলার ফেরত দেন তিনি। আগামী ১২ মে ফিলিপিন্স সিনেটে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ১২ মে ফিলিপিন্স সিনেটে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
×