ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের সম্মান বাড়াতে চান মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৬ মে ২০১৬

দেশের সম্মান বাড়াতে  চান মুস্তাফিজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র এক বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে গেছেন। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটেও গত বছরের শুরুতে তাকে কেউ চিনত না। কিন্তু এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সব বোদ্ধা, সমালোচক ও বিশ্লেষকদের কাছে প্রশংসা এবং যেকোন ব্যাটসম্যানের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে বাঁহাতি এ পেসার বোলিং ঝলক দেখিয়ে চলেছেন। এই প্রথম কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটার এত মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে আইপিএলের মতো জনপ্রিয় আসরে ধারাবাহিকভাবে দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে খেলছেন। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও সুনাম বয়ে আনছেন তিনি। মুস্তাফিজ নিজেও সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, আইপিএল হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, যেকোন পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম করতে মনোযোগী তিনি। বাড়াতে চান দেশের সম্মান এবং সেজন্য ওড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা। সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রাম তেঁতুলিয়া, সেখানেই বড় হয়েছেন মুস্তাফিজ। বড় ভাইয়ের ভাঙ্গাচোরা সাইকেলের পেছনে চড়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অনুশীলনের জন্য আসতে হতো তাকে। কিন্তু সেখান থেকেই আচমকা ধূমকেতুর মতো উদয় হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। দেশ-বিদেশে এখন ক্রীড়ানুরাগী মানুষমাত্রই জানে মুস্তাফিজের নাম। এখন তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং সব ক্লাবের কাছে পরম আরাধ্যের ক্রিকেটার। ২০ বছর বয়সী এ বাঁহাতি এবার আইপিএলে ৮ উইকেট শিকার করেছেন ৭ ম্যাচে। কিন্তু ইকোনমি আর নিয়ন্ত্রণে অন্য যে কারও চেয়ে সেরা মুস্তাফিজ। সম্প্রতিই ইএসপিএন ক্রিকইনফোর এক জরিপে বিশ্ব টি২০ ক্রিকেটে সর্বশেষ ১২ মাসে সেরা গড়ের মালিক এবং ইকোনমি রেটে দ্বিতীয় অবস্থানে। তার ট্রেডমার্ক হচ্ছে ভয়ঙ্কর অফকাটার এবং সেøায়ার। আর সেটা দিয়েই তিনি গত বছর জুনে সফরকারী ভারতীয় দলকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছিলেন। এ কারণেই আইপিএল তাকে লুফে নিয়েছে এবার। নিজের ক্যারিয়ার শুরুর বিষয়টি নিয়ে মুস্তাফিজ বলেন, ‘আমার ভাই আমাকে সাতক্ষীরা শহরে নিয়ে যেতেন প্রতিদিন এবং অনুশীলন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে রেখে আসতেন। সেটা ছিল খুবই কঠিন একটা কাজ।’ স্বভাবে লাজুক স্বভাবের মুস্তাফিজকে দেখলে মনেই হবে না তিনি বল হাতে এতটা ভয়ঙ্কর এবং সেজন্য ‘দ্য ফিজ’ নাম পেয়ে গেছেন। মুস্তাফিজ বলেন, ‘সাতক্ষীরায় অনেক একাডেমি আছে যেগুলোতে আমি নিয়মিত অনুশীলন করতাম। কিন্তু সেটা কোনভাবে সম্ভব না হলে স্কুল মাঠে একাকী করতে হতো প্র্যাকটিস।’ মুস্তাফিজ এখন তার গ্রামের মানুষের কাছে নয়নের মণি। প্রতিনিয়তই তার বাড়ির ঠিকানায় মুস্তাফিজের নামে চিঠি আসে। তরুণীরা মোবাইল নাম্বার চায়। এ বিষয়ে মুস্তাফিজের ৭০ বছর বয়সী বাবা মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাকে নিয়মিতই পোস্ট অফিসে গিয়ে বলতে হয় যেন এ ধরনের চিঠি বাড়িতে না আসে। কারণ এখনও সে অনেক ছোট এবং নিজের খেলার উন্নতির দিকেই বেশি মনোযোগ দিতে হবে। সে অসাধারণ ভাল একটি ছেলে।’ গত মাসেই পরিবারে প্রথম গাড়ি নিয়ে গেছেন মুস্তাফিজ। দিয়েছেন বাবাকে উপহার। যেদিন সানরাইজার্সের খেলা থাকে সেদিন তার ভাই মোখলেসুর রহমান প্রজেক্টর দিয়ে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেন এবং আশপাশের গ্রামের মানুষও চলে আসেন সেটা দেখতে। এ বিষয়ে মুস্তাফিজ বলেন, ‘আমি সবসময় আশা করি আমার দেশ সবার উঁচুতে থাকবে। শুধু ক্রিকেটেই নয়, যেকোন খেলায় যেন সেটা হয়। আমি সবসময়ই চাই বাংলাদেশের পতাকা মর্যাদার সঙ্গে ওড়াতে। সেটা আইপিএল হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।’ এবার কাউন্টি ক্রিকেট আসরও তাকে লুফে নিয়েছে। সাসেক্সের হয়ে খেলবেন এ মৌসুমে। তবে ফরমেট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সব ধরনের ক্রিকেট খেলাই উপভোগ করি। কিন্তু যেসব ম্যাচ একদিনেই শেষ হয়ে যায়, যেমন টি২০ ও ওয়ানডে সেগুলোই আমি বেশি পছন্দ করি। তবে টেস্ট খেলাটাও উপভোগ করি।’
×