ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রফতানি আয় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৬ মে ২০১৬

রফতানি আয় বাড়ছে

রহিম শেখ ॥ দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে। অর্থবছরের ১০ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ২২ শতাংশ। গত ৭ মাস ধরে রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। একক মাস হিসেবে এপ্রিলে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দেশ থেকে ২ হাজার ৭৬৩ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। প্রথম ১০ মাসের এই রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। একক মাস হিসেবে এপ্রিলে আগের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ১১.৮২ শতাংশ। এই মাসের ২৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ৫ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। সে মাসে আয় কমে যায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে আগস্টে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত নবেম্বর শেষে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৭১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি হয়েছে প্রকৃত রফতানি আয়। এদিকে শুধুমাত্র গত এপ্রিল মাসে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের চেয়ে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। গত মার্চ মাসে ২৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আর প্রৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অর্জিত দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি আয়ের মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকেই এসেছে ২ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের পোশাক খাতে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ৫৬ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, রফতানি আয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান খুবই সন্তোষজনক চিত্র প্রকাশ করছে। পোশাক খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল। তবে কৃষিপণ্যের চিত্র ভাল নয়। পণ্যটির মান নিয়ন্ত্রণ, মোড়কীকরণ ও তালিকাভুক্ত রফতানিকারকদের উন্নয়নের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে ভাল করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে হিমায়িত খাদ্য রফতানি আয় ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে। এ বিষয়ে হিমায়িত খাদ্যসংশ্লিষ্ট রফতানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএর সভাপতি এসএম আমজাদ হোসেন বলেন, চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রফতানি আয়ে আগামীতে আরও বড় ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রধান কারণ ইউরোপে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। এ খাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ রফতানি আয় আসে ইউরোপ থেকে। আর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ দাম কম পেয়েছি আমরা; যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে রফতানি আয়ে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য ৭০ শতাংশ। এছাড়া টেক্সটাইল খাতে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, রাবার ও রাবার পণ্য রফতানিতে ৩১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য রফতানিতে ৭৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি পণ্যে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ, পশম ও পশমি জাতীয় পণ্যে ৮৬.৭৯ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল খাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছর তিন হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ইপিবি। লক্ষ্যমাত্রাটি অর্জন করতে হলে চলতি মে ও আগামী জুন মাসে বাকি ডলারের পণ্য রফতানি আয় করতে হবে। গত অর্থবছর দেশের পণ্য রফতানি আয় ছিল তিন হাজার ১২০ কোটি ডলার।
×