ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজামীর ফাঁসি বহাল

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৬ মে ২০১৬

নিজামীর ফাঁসি বহাল

আর বাধা নেই। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন। এখন ফাঁসির দড়ি ভয়ঙ্কর বদর কমান্ডার নিজামীর সামনে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর করা রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। বৃহস্পতিবার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। রায়ের মধ্য দিয়ে নিজামীর বিরুদ্ধে এ মামলার রায় চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো। পুনর্বিবেচনার রায় হচ্ছে কোন মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ। আপীল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করলেও রাষ্ট্রপতির কাছে এখন প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সর্বশেষ সুযোগ অবশ্য থাকছে নিজামীর। তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে তার দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি আসবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যকর হোক ফাঁসির রায়। অপরাপর ঘাতক-দালালের তুলনায় নিজামীর প্রতি দেশবাসীর ঘৃণা স্বভাবতই অনেকটা বেশি। কারণ, যে দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল এই নিজামী সে দেশেরই মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পায় সে। আর সে সুযোগ যে তারই দোসররা করে দেয়, সে কথা সবার জানা। এ জন্য সেই দোসর বিএনপি জাতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা দূরে থাক, অনুশোচনা পর্যন্ত ব্যক্ত করেনি। জাতির ইতিহাসের অত্যন্ত বিয়োগান্তক অধ্যায় হলো বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার যে বাংলার মাটিতে হতে পারে, তা অনেকেরই ধারণার বাইরে চলে গিয়েছিল। এর আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যরা কিছুটা সান্ত¡না পেয়েছিলেন। এবার কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় চূড়ান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ওই পরিবারগুলো এবং বিচারের রায়ের অপেক্ষায় থাকা দেশবাসী আরও বেশি স্বস্তি লাভ করবেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার দায় যে প্রধানত আলবদর বাহিনীর, সে বিষয়ক দলিল-প্রমাণাদি ১৯৭১ থেকেই ছিল প্রকাশ্য এবং তার সত্যতা নিয়ে কার্যত কারও মনে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। নিজামী যে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর সহযোগী সংস্থা হিসেবে স্বীকৃত আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিল, তাও প্রমাণিত। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণআদালতেও নিজামী মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে নিজামী। ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে চলতি বছর ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। গত ১৫ মার্চ আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এর পর ২৯ মার্চ নিজামীর আইনজীবীরা সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দেন; যা শেষাবধি খারিজ হয়ে যায় বৃহস্পতিবার। ধূর্ত জামায়াতে ইসলামী তার নামের সঙ্গে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ শব্দটি যুক্ত করেছে। কিন্তু তারা জাতির কাছে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চায়নি। উপরন্তু তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত করার জন্য গোড়া থেকেই নানা ওজর-আপত্তি তুলে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে চলেছে। তাদের উচিত ছিল রায় মেনে নেয়া এবং জাতির কাছে আন্তরিকভাবে অনুশোচনা ব্যক্ত করা। অথচ তার বদলে তারা নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দফায় দফায় হরতাল ডেকেছে। এটি শুধু দুর্ভাগ্যজনক বললে সঠিক হবে না, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ধৃষ্টতাও। এই হরতাল অত্যন্ত নিন্দনীয়। যদিও দেশবাসী বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
×