ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীতে বহুতল ভবনের মহাযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ৫ মে ২০১৬

কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীতে বহুতল ভবনের মহাযজ্ঞ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ এবার বাঁকখালী নদীতে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বড় বড় স্তুপ করা হয়েছে ইট আর কনক্রিটের। এস্কেবেটর দিয়ে মাটি ও ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে বাঁকখালী নদী। শীঘ্রই ভবনের নির্মাণ কাজও শুরু হবে বলে জানা গেছে। এভাবে প্রকাশ্যে বাঁকখালীতে দখলদারদের মহাযজ্ঞ চললেও খবর নেই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিপ্তরের। সূত্রে জানা গেছে, শহরের ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি খননের মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে বাঁকখালী নদীর একটি বিশাল অংশ। টানা তিন সপ্তাহ ধরে ডাম্পার দিয়ে মটি গুলো ফেলে দখলদার চক্র বাঁকখালী নদী দখল করলেও প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এ পর্যন্ত। যার কারণে ভরাটকৃত জায়গায় বর্তমানে ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত দুই দিন ধরে এস্কেবেটর দিয়ে দখলদাররা নতুন করে নদী ভরাট করেছে। সূত্র মতে, সময়ের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়ে সঙ্কির্র্ণ হয়ে পড়ে বাঁকখালী নদী। এর ফলে ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড়। জেগে উঠা নদীর এ পাড়ে কুদৃষ্টি পড়ে অবৈধ দখলদারদের। পেশকার পাড়া, নুর পাড়া, বদরমোকাম এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার দখলদার সিন্ডিকেট করে একের পর দখল করে স্থাপনা তৈরী করে চলছে। পরে জায়গাসহ ওই সব স্থাপনা গুলো বিক্রিও করে দেয়া হচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে প্রশাসনও ওইসব অবৈধ দখলদারের স্থাপনায় ডু মারে। তড়িগড়ি করে দু’একটি স্থাপনায় হস্তক্ষেপও করে। কিন্তু সে গুলো শুধুমাত্র ফটোসেশনই। না হলে একের পর এক দখলদারের তালিকা তৈরী করলেও উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখেনা। এদিকে গত কয়েক বছর ধরে বাঁকখালী নদীর দক্ষিণ পাড়ের কস্তুরাঘাট পুরাতন পোনা মার্কেট এলাকায় পৌরসভার বর্জ্য ফেলা শুরু করে। এতে আরও ভরাট হয়ে উঠে বাঁকখালী নদীর পাড়। বর্জ্য ফেলার সুযোগকে কাজে লাগায় বাঁকখালীর দখলদাররা। বাঁকখালী নদী রক্ষায় ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ‘বেলা’র পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলার প্রেক্ষিতে বাঁকখালী নদীর বর্জ্য ফেলা বন্ধসহ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি ওই রুলের শুনানিতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে এ বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কক্সবাজার পৌর মেয়রকে নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ১৫ ফেব্র“য়ারির মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু বাঁকখালী উচ্ছেদে এখনও দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। একই সঙ্গে পৌরসভাও চালু রেখেছে বাঁকখালীতে বর্জ্য ফেলার কাজ। সম্প্রতি শুরু হয় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি ‘লালদীঘি’র খনন কাজ। ওই খননের মাটি গুলো দিয়ে বাঁকখালী নদীর জেগে উঠা জায়গায় ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা ভরাট করছে দখলদার সিন্ডিকেট। গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে নদী ভরাট চলে আসলেও প্রশাসনের নজরে না আসায় ভাবিয়ে তলেছে ওয়াকিবহাল মহলকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল বিশাল তিনটি ইট আর কনক্রিটের স্তুপ করা হয়েছে। আর সম্প্রতি ডাম্পার দিয়ে ফেলা মাটি আর ময়লা গুলো একটি এস্কেবেটর দিয়ে সরিয়ে নতুন করে বাঁকখালী ভরাট করা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানান, লালদীঘির খনন কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই মাটি গুলো ফেলে অবৈধ দখলদাররা বাঁকখালী নদীর জেগে উঠা চরে ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা ভরাট করছে। এরই মধ্যে বিশালকার জায়গা ভরাট করা হয়েছে। প্রতিদিন সেখানে ভোরে ও রাতে দুইটি ডাম্পার দিয়ে মাটি ফেলা হয়। বর্তমানে লালদীঘির মাটি শেষ হওয়ায় এখন পাহাড়ের মাটি ফেলা হচ্ছে দেদারছে। তিনি জানান, বিশাল আকৃতির দুইটি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা নিয়েছে তালিকা ভুক্ত দখলদার পেশকারপাড়ার ফরিদ ও তার ভাতিজা দেলোয়ার। তারা প্রতিদিন পাহাড়কাটা মাটি ফেলে জায়গা ভরাট করছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসককে প্রধান করে একটি নদী রক্ষা কমিটি গঠণ করা হলেও এ কমিটির এখনও কোন দৃশ্যমান কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা জানান, খোঁজ খবর নিয়ে অব্যশই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×