ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যালারি ভরানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ইডেন ছাড়লেন শাহরুখ

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৫ মে ২০১৬

গ্যালারি ভরানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ইডেন ছাড়লেন শাহরুখ

অনলাইন ডেস্ক ॥ অবশেষে তিনি এলেন। তাঁর প্রাণের কেকেআরের খেলা দেখতে। প্রিয় নাইটদের হয়ে গলা ফাটাতে। কিন্তু বাজিগরের টানে সাতষট্টি হাজার মানুষের ঢল নামল কই ইডেনের গ্যালারিতে? ইডেনে শাহরুখ খান। ফর্মে নাইটরা। কিন্তু শাহরুখকে অর্ভ্যথনা জানাতে ক্রিকেটের নন্দনকাননে মাত্র হাজার তিরিশ! নাইটদের জয়ের পর যখন মাঠে নামলেন তিনি, তখন গ্যালারি প্রায় ফাঁকা! শাহরুখ খানের জন্য কলকাতা দেরি করে বাড়ি ফিরতেও রাজি নয়! হতাশ শাহরুখ না বলে থাকতে পারলেন না, “ভেবেছিলাম ভরা ইডেনকে দু-চারটে নাচের স্টেপ দেখাব। প্র্যাকটিসও করে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে তো দেখছি মাঠ ভরেইনি। আশি হাজারের ইডেন দেখতে অভ্যস্ত আমি। তাই আজ আর নাচা হল না। এর পরের বার যখন আসব, তখন নিশ্চয়ই ইডেনের গ্যালারি ভরবে। তখন নাচ দেখাব সবাইকে।” একটা সময় ছিল, যখন শাহরুখ ইডেনে কেকেআরের প্রায় প্রতি ম্যাচ দেখতে আসতেন। তাঁর বলিউডি বন্ধুদের ঝাঁক নিয়ে। এখন সেই শাহরুখও নেই আর তাঁর বলিউড গ্যাংও নেই। আসছি, আসব করে শেষ পর্যন্ত শাহরুখ বুধবার ইডেনে এলেন। কেকেআরের ন’নম্বর ম্যাচে। আগের আট ম্যাচে তাঁকে পাননি গম্ভীররা। নিজের শহর মুম্বইয়ে তিনি থাকা সত্ত্বেও ওয়াংখেড়েতে আসতে পারেননি। কথা দিয়েছিলেন দিল্লির ম্যাচে থাকবেন, তাও পারেননি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, কেকেআর নিয়ে কি তাঁর আগ্রহ হারিয়েছে? সোশ্যাল মিডিয়াতেই কাজ সেরে দিচ্ছেন শুধু। মাঠে আসার নাম নেই। অবশেষে তিনি এলেন। সঙ্গে তিন বছরের ছোট্ট আব্রাম। ছেলেকে নিয়ে ইডেনে আসার খবর শাহরুখ এ দিন নিজেই দেন তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে। দুপুর বারোটা নাগাদ কেকেআর ফ্যানদের সারপ্রাইজ দিয়ে টুইট করে দেন, “আব্রাম আর আমি ডান্স মুভ প্র্যাকটিস করছি। কলকাতায় প্রথম ম্যাচ দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কলকাতা, আমরা আসছি। ইডেনে দেখা হবে।” কিন্তু ইডেনে এসে যা দেখলেন, তাতে কেকেআরের টিম মালিক হতাশ হবেন না তো কী? বুঝলেন তিনিও যেমন আগের মতো ছুটে আসছেন না ইডেনে, তেমন কলকাতাও যেন আর আগের মতো তাঁর টানে ছুটে আসছে না ক্রিকেটের নন্দনকাননে। আসছে না গত ম্যাচে জিতে আসা নাইটদের টানেও। দু-তিন বছর আগের সেই খচাখচ ভরা ইডেনে এসে যে রকম ছটফট করতে দেখা যেত তাঁকে। সেই শাহরুখকেও যেন পাওয়া গেল না এ দিন। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা একের পর এক আউট হতে লাফিয়েও উঠলেন না। আবার তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কা দেখে “করব, লড়ব, জিতব রে” বলে পতাকা নিয়ে ব্যালকনির রেলিং থেকে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ার উপক্রমও হল না তাঁর। জয়ের পর একবার ব্যালকনির রেলিংয়ে চড়ে বসলেন বটে, কিন্তু ততক্ষণে ব্যালকনির সামনের গ্যালারির প্রায় সব আসনই ফাঁকা। কেন গ্যালারির এই দুর্দশা? সিএবি কর্তারা কেউ বলছেন, বিশ্বকাপ থেকে টানা ক্রিকেট দেখে ক্লান্ত শহরের ক্রিকেটপ্রেমীরা। কারও আবার বক্তব্য, কিংগস ইলেভেন পঞ্জাবকে অনায়াসে কেকেআর হারাবে ধরে নিয়েই হয়তো মাঠে লোক আসেনি। পুণে, আরসিবি ম্যাচগুলোর জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন সবাই। তাই যদি হয়, তা হলে কমপ্লিমেন্টারি টিকিটের গ্যালারিতেও এত ফাঁকা সিট কেন? এ প্রশ্নের অবশ্য ব্যাখ্যা নেই। শোনা গেল সৌরভের কাছেও নাকি শাহরুখ এই ব্যাপারটাই জানতে চান। তাতে সৌরভ নাকি টানা ক্রিকেটের তত্ত্বই দিয়েছেন। ইডেনের গ্যালারির এই হাল দেখেই কি শাহরুখের মন খারাপ? সে রকমই বললেন এ দিন ম্যাচের পর আব্রামের সঙ্গে কিছুক্ষণ বল নিয়ে ক্যাচ-ক্যাচ খেলার পর। গম্ভীরদের ব্যাটিংয়ের সময় ব্যালকনির একেবারের পিছনের সারির চেয়ারে বসেই কাটালেন। আর ম্যাচের শেষ ওভারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু হাততালি দিতে দেখা গেল তাঁকে। উচ্ছ্বাস নেই সেরকম। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তখন তাঁর পাশে। সেই সৌরভ। যাঁকে কেকেআর থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা তাঁর বিরুদ্ধে রব তুলেছিল ‘নো সৌরভ, নো কেকেআর, গো ব্যাক শাহরুখ’। সে সব দিন চলে গিয়েছে। তাই মিলার-ম্যাক্সওয়েলরা ব্যাট করার সময় প্রায় অর্ধেক ইনিংস পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করে গেলেন দু’জনে। নাইটরা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতার পর তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বিদায় নিলেন সৌরভ। এ দিন বিকেলে শহরে ঢোকার পর নাইটদের এসআরকে একপ্রস্থ পেপটক দেন বলে শোনা যায়। কী বললেন গৌতম গম্ভীরদের? এক নাইট কর্তা বললেন, “দলের ছেলেদের এসআরকে সাফ জানিয়ে দেন, জেতো হারো, কুছ পরোয়া নেহি। ভাল ক্রিকেট খেলে সকলের মন মাতিয়ে দাও। আমি হার-জিত বুঝি না। ভাল ক্রিকেট ভালবাসি। সেটাই দেখতে এসেছি।” ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক রাত পৌনে ন’টা, তখন ছোটখাটো কনভয় নিয়ে ইডেনে এসে পৌঁছয় তাঁর কালো লিমুজিন। সামনের সিটে আব্রামকে কোলে নিয়ে তার সুপারস্টার বাবা শাহরুখ। ইডেনের দু’নম্বর গেটের সামনে গাড়ি থেকে নেমে আব্রামকে উপর দিকে আঙুল তুলে কী যেন দেখালেন। কিন্তু কেন এত দেরি তাঁর? বোধহয় আব্রামের জন্যই। বাবা হোটেল থেকে বেরনোর জন্য ছটফট করলে কী হবে, ইডেনের পথে রওনা হওয়ার আগে শাহরুখ জুনিয়রের আবার ছোট্ট করে একটা ‘বাবল-বাথ’ না নিলে চলছিল না। ইডেনে ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টা আগে শাহরুখ নিজেই টুইট করে জানান সে কথা। লেখেন, “ম্যাচের আগে বাবল বাথ নিতেই হবে। না হলে লি’ল নাইট ঘর ছেড়েই বেরোবে না। উফফ কেকেআরের জন্য কত ত্যাগই না করতে হয়।” যখন কেকেআরের বক্সে ঢুকলেন, তখন ইডেন শাহরুখময়। এক দিকে হাজারো ওয়াটের গমগমে সাউন্ড সিস্টেমে বেজে চলেছে, বাজিগরের সেই বিখ্যাত গান ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে, ইয়ে গোরে গোরে গাল’। জায়ান্ট স্ক্রিনে শাহরুখের লেটেস্ট অ্যাড ফিল্ম। আর গ্যালারিতে সাদা টি শার্ট ও কার্গো ট্রাউজারে সশরীরে শাহরুখ। ইডেনের সবুজ গালিচায় যে তখনও গৌতম গম্ভীর আর রবিন উথাপ্পা রীতিমতো দাপট দেখাচ্ছেন, সে দিকে কারও লক্ষ্যই নেই বোধহয়। বক্সের সামনের ব্যালকনিতে যখন আব্রামকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এলেন বাদশা, তখন গমগম করছে ‘রঙ দে তু মোহে গেরুয়া’। সবই হল। সবই পেলেন। কিন্তু পেলেন না ভরা ইডেন। তবু কথা দিয়ে গেলেন, “আবার ইডেনে আসব। তখন নিশ্চয়ই ভরা গ্যালারি দেখব।” যেন পরোক্ষে ইডেনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গেলেন বাজিগর। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×