ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিবাজির জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে ফিরে আসা যায়

প্রকাশিত: ২০:৫০, ৫ মে ২০১৬

শিবাজির জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি যে ফিরে আসা যায়

অনলাইন ডেস্ক ॥ সাবেকি মৌর্য শেরাটন হোটেলের এই সতেরো তলার লাউঞ্জটা তাদের বেসরকারি টিমরুম। চমকপ্রদ সাজানো গোছানো আর শীলিত আড়ম্বরে মোড়া। কিন্তু একটা টিমের ধারাবাহিক দৈন্য চলতে থাকলে বিলাসবহুল হোটেল পরিবেশ আরও অসহ্য মনে হতে পারে। তা, রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের এমনই অবস্থার মধ্যে বুধবার একান্তে এবিপি-র সঙ্গে বসলেন অজিঙ্ক রাহানে ॥ প্রশ্ন: ভারতীয় টেস্ট টিমের ক্যাপ্টেন বিরাট। সহ-অধিনায়ক আপনি। কম্বিনেশন হিসেবে একেবারে আগুন আর বরফ। রাহানে: হা হা, হ্যাঁ আমি একটু চুপচাপ আর বিরাট খুব অ্যাগ্রেসিভ। প্র: এই যে আপনি এত ঠান্ডা আর চুপচাপ। আজকালকার ক্রিকেটারকে তো এ রকম ভাবাই যায় না। রাহানে: আমার আসলে ছোটবেলা থেকেই মুখচোরা ধরন। ছোটবেলায় বাড়িতে লোক এলে আমি স্ট্রেট খাটের তলায় ঢুকে যেতাম বা দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়তাম। মানুষজন দেখলেই আমার প্রবলেম হত। প্র: বলছেন কী, আর এক মাস পর ইন্ডিয়ান টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে আপনি জিম্বাবোয়েতে দল নিয়ে যাবেন। বিরাট খেলবেন না ধরে নেওয়া যায়। ইন্ডিয়ান ক্যাপ্টেন এত মুখচোরা হলে কী করে হবে? রাহানে: (হাসি) না এখন আর সেই ফেজটা নেই। অ্যাকচুয়ালি আমি যখন ক্যারাটে ক্লাসে ভর্তি হলাম তখন শিখলাম আক্রমণটাও সমান ভাবে দরকার। তুমি চুপচাপ থাকতে পারো তা বলে পদদলিত নয়। প্র: আপনার ঘনিষ্ঠদের মুখে শোনা, একটা বই নাকি আপনার জীবনদর্শন সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে— শিবাজি দ্য রিয়েল হিরো। রাহানে: একদম ঠিক কথা। বছরখানেক আগে বইটা আমি প্রথম পড়ি। এর আগেও শিবাজি সম্পর্কে আমি বেশ কিছু পড়েছি। কিন্তু এই বইটা দু’বার পড়ার পর আমার চোখ খুলে যায়। মনে হতে থাকে শিবাজিকে আমরা চিরকাল অসমসাহসী যোদ্ধা হিসেবে জেনে এসেছি। অথচ উনি ছিলেন দারুণ স্ট্র্যাটেজিস্ট। গ্রেট থিঙ্কার। দারুণ ম্যান ম্যানেজমেন্ট বুঝতেন। ছক তৈরি রাখতেন নানা রকম। এ না খাটলে বি। বি না খাটলে সি। প্র: আর? রাহানে: আরও কত কিছু বইটা থেকে শিখেছি যে, কী করে আপনাকে নেতা হিসেবে টিমমেটদের আস্থা অর্জন করতে হবে। কী করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নির্মম থাকতে হবে। কঠিন সময়ে ঘাবড়ে না গিয়ে কী করে সামলাতে হবে। প্র: শিবাজি একজন ক্রিকেট ক্যাপ্টেন ছিলেন বলা যায়? রাহানে: হ্যাঁ (হাসি) বলতে পারেন। একজন দক্ষ ক্যাপ্টেনের সব গুণই ওঁর মধ্যে ছিল। প্র: শিবাজি থেকে এই ভেঙে পড়া বিধ্বস্ত পুণে সুপারজায়ান্টস কী টিপস পেতে পারে? রাহানে: শিখতে পারে যে, কোনও কিছুতে হাল ছেড়ে দিতে নেই। একেবারে সর্বনেশে পরিস্থিতি থেকেও উদ্ধার পাওয়া এবং জেতা সম্ভব। প্র: কিন্তু আপনাদের যা অবস্থা তাতে তো বাকি ছ’টা ম্যাচের অন্তত পাঁচটা জিততে হবে। রাহানে: আমি বলি এই ভাবে কেন ভাবব না যে, আমরা ছ’টাতে ছ’টাই জিতব। তা ছাড়া যখন আমাদের ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি! এই রকম পরিস্থিতি যে জীবনে বহুবার সামলেছে। প্র: কালকের বিপক্ষ দলের সর্বাধিনায়ককে সবাই জানে আপনার অঘোষিত মেন্টর হিসেবে— রাহুল দ্রাবিড়। একটু বলবেন দ্রাবিড়ের থেকে কী শিখেছেন? রাহানে: রাহুলভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। অনেক কিছু শিখি। অনেক কিছু জানতে পারি। প্র: আইপিএল চলাকালীন কথা হল? রাহানে: হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়মিত হল, হয় উনি টেক্সট করছিলেন বা আমি। প্র: দ্রাবিড়ীয় দর্শন কী শিখেছেন? রাহানে: শিখেছি যে জিনিস তুমি কন্ট্রোল করতে পারবে না সেটা নিয়ে মাথা খারাপ কোরো না। যা তোমার হাতে শুধু সেটাতেই মাথা গলাও। প্র: ঘনিষ্ঠরা এটাও বলে যে, আপনার ক্রিকেট কফিনে নাকি ‘ভক্তিসাগর’ বলে একটা আধ্যাত্মিক বই পড়ে থাকে। টিমে কানে দুল, শরীরে ট্যাটু সমন্বিত আপনার সহকর্মীদের ভিড়ে ভক্তিসাগর কিন্তু আজব। রাহানে: এই বইটা আসলে আমায় মেডিটেশনে হেল্প করে। আমার ভেতরটা ঠান্ডা রাখে। ব্যাট করার সময় ভেতরটা ঠান্ডা রাখা খুব জরুরি। তার জন্য ব্রিদিংটা ঠিক হওয়া চাই। প্র: অবাক লাগছে আপনার মুখে ব্রিদিংয়ের কথাটা শুনে। সবাই ব্যাটের গ্রিপ, স্টান্স আর টেকনিকের কথা বলে। সচিন বাদে কাউকে ক্রিজে ঠিকঠাক শ্বাস নেওয়ার স্কিল তৈরি নিয়ে বলতে কখনও শুনিনি। রাহানে: আমি তো এই ব্যাপারে খুব জোর দিই। প্রত্যেকটা বল খেলার পর লম্বা করে তিন-চারবার শ্বাস নিই আবার ছাড়ি। এটা করলে দেখেছি পরের ডেলিভারিটা একই রকম সজাগ থেকে খেলা যায়। ফোকাস রাখা যায়। প্র: আপনার কোচ প্রবীণ আমরে আপনাকে একজন মোটিভেশনাল এক্সপার্টের কাছেও নাকি নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরে আপনাকে শর্ট বল খেলা শিখিয়েছেন এটাই তো যথেষ্ট ছিল। আবার ধর্মগুরু কেন? রাহানে: উনি ঠিক ধর্মগুরু নন। স্বামী পার্থসারথি একজন দার্শনিক গোছের মানুষ। আমার মেন্টাল ট্রেনিংটা ওঁর কথা শুনে আরও ধারালো হয়েছে। প্র: যেমন? রাহানে: যেমন উনি বলেছেন, নিরন্তর স্বপ্ন দেখে যাবে। জিনিসটার পেছনে অবিরাম ধাওয়া করবে। আর কোনও কিছু পেতে হলে প্রথমে সেটাকে হারানোর জন্য তৈরি থেকো। প্রথমে যত হারাবে, পরে তত জিতবে। আমি সে ভাবে ভাবি। অবিরত ভিসুয়ালাইজ করি। প্র: অন্তত টেস্ট আর ওয়ান ডে দু’টো ফর্ম্যাটে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ হলেন আপনি। আনন্দবাজার পাঠকদের প্লিজ বলুন, কী স্বপ্ন আপনাকে এখন ভরপুর রাখছে? রাহানে: আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের ইন্ডিয়ান টিম পরের পর ম্যাচ জিতছে আর আমি দেশকে ধারাবাহিক জিতিয়ে দিচ্ছি। প্র: আর এখনকার স্বপ্ন— পুণে সুপারজায়ান্টস? রাহানে: ঠিক স্বপ্ন বলব না, যেহেতু আমরা জানি কী করতে হবে। প্র: কী করতে হবে? রাহানে: ফল কী হতে পারে এত সব না ভেবে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। চাপ না নিয়ে জিনিসটা এনজয় করতে হবে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×