ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিল্লীতে প্রশংসিত ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৫ মে ২০১৬

দিল্লীতে প্রশংসিত ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’

বাংলাদেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন প্রাঙ্গণেমোর তাদের নতুন প্রযোজনা নূনা আফরোজ রচিত ও নির্দেশিত ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি নিয়ে সম্প্রতি দিল্লী সফর করেছে। দিল্লীতে গ্রিনরুম থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজিত ইন্দোবাংলা নাট্য উৎসবে নাটকটি মঞ্চায়নের পর স্থানীয় দর্শকদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। দলের দিল্লী সফর নিয়ে লিখেছন প্রাঙ্গণেমোরের নাট্যকর্মী ও অভিনেতা সরোয়ার সৈকত নাটক শেষে দর্শকদের করতালি স্বাভাবিক ঘটনা- নাটক ভাল হোক বা না হোক নাটক শেষ হলে সৌজন্যতাবশত দর্শক করতালি দিয়েই থাকে। তবে করতালির ধরন দেখে বোঝা যায় মঞ্চায়িত নাটকটি আসলে দর্শকদের কতটা ভাল লেগেছে বা তাদের কতটা আনন্দিত করেছে। ১৮ এপ্রিল, দুপুর ৩টা। ‘ইন্দো-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৬’-এর শেষদিন। দিল্লীর মুক্তধারা অডিটোরিয়ামে মঞ্চায়িত হয় বাংলাদেশের প্রথম সারির নাটকের দল প্রাঙ্গণেমোরের নাটক ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’। নাটক শেষে দর্শকদের করতালি যেন থামতেই চায় না। আয়োজক দল ‘গ্রিনরুম থিয়েটার’-এর কর্ণধার অঞ্জন কাঞ্জিলাল আবেগে আপ্লুত হয়ে দর্শকদের বললেন স্ট্যান্ডিং ক্লাপস দিতে। আর সঙ্গে সঙ্গে সব দর্শক দাঁড়িয়ে করতালি দিতে থাকেন। অঞ্জন বললেন- ‘বাংলাদেশের কোন নাটকের দল এর আগে দিল্লীতে এত ভাল নাটক করেনি। আমরা মুগ্ধ, অভিভূত। আর দর্শকরাও সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন। দিল্লীতে নাটক মঞ্চায়ন হলেও প্রায় সবাই ছিল বাঙালী দর্শক। নাটকের ভাব-ভাষা বুঝতে তাদের কারও কোন সমস্যা হয়নি। আগেরদিন সন্ধ্যায় এই নাটকের নির্দেশক নূনা আফরোজকে দিয়ে গ্রিনরুম থিয়েটারের কর্ণধার অঞ্জন কাঞ্জিলাল দর্শকদের উদ্দেশে ঘোষণা দিয়েছিলেনÑ বাংলাদেশের নাটক দেখতে আসুন, আর একটি দিন অফিস ছুটি নিন। মিলনায়তন দর্শকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল দর্শক সেই ঘোষণাকে সম্মান করেছেন। বাইরে প্রচ- রোদ, দিল্লীর তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রীর কাছাকাছি। এরই মধ্যে অফিস ছুটি নিয়ে মধ্য দুপুরে নাটক দেখতে চলে আসেন দর্শক। আয়োজকদের ক্রেস্ট ও নানা উপহার দেয়ার পাশাপাশি চলে সুধীজন ও দর্শকদের প্রশংসাসূচক নানা প্রতিক্রিয়া। দর্শকরা জানতে চায় প্রাঙ্গণেমোর নাটক নিয়ে দিল্লী আবার কবে আসবে! মনে হলো মুক্তধারা অডিটোরিয়াম যেন বাংলাদেশের প্রশংসায় ভাসছে। আর প্রাঙ্গণেমোর যেন তার হাল ধরেছে। নাটক শেষে দর্শক আর বাড়ি ফিরে যায় না। অডিটোরিয়ামের বাইরে বসার জন্য প্যান্ডেল করা হয়েছিল। সেখানেই তারা অপেক্ষা করছেন এই নাটকের নাট্যকার, নির্দেশক ও মূল চরিত্রের অভিনেত্রী নূনা আফরোজকে কাছ থেকে দেখার জন্য, তাঁর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য। নূনা আফরোজ গ্রিনরুম থেকে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সবাই তাকে ঘিরে ধরেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। না দেখলে বোঝার উপায় নেই। দর্শকদের অধিকাংশই বয়স্ক ও শিক্ষিত মহিলা। তারা সবাই নূনা আফরোজকে জড়িয়ে ধরছেন, হ্যান্ডশেক করছেন, ছুঁয়ে দেখছেন, ছবি তুলছেন, খাবারের অফার করছেন। তাদের নানা প্রশ্ন- এত সুন্দর করে এতগুলো রবীন্দ্রনাথ সাজালে কী করে গো! নাটকের কেউ কেউ আবার স্ক্রিপ্ট চাইলেন এটি মঞ্চে আনার জন্য। এক বয়স্ক মহিলা বলেই ফেললেনÑ আজ আর ওকে (নূনা আফরোজ) ছাড়ছি নে, সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যাব। নূনা আফরোজের নিজের ভাষায়- আমার অভিনয় জীবনের ৩০ বছরে এত ভালবাসা আর প্রশংসা কখনো পাইনি। এর আগে দেশ বিদেশে এত জায়গায় অভিনয় করেছি কিন্তু এই দিনটি ছিল একেবারেই অন্যরকম। নিজের অভিনয় জীবনকে সার্থক মনে হলো। গর্ব হলো যে, আমরা দিল্লীতে এসে বাংলাদেশের সম্মান রাখতে পেরেছি। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের নাট্যদল হিসেবে প্রাঙ্গণেমোরের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও আনন্দের। দিল্লীর পত্র-পত্রিকায়ও ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটক নিয়ে রিভিউ বের হয়েছে। সেখানেও নাটকের প্রশংসা আর স্তুতি ছাড়া কিছু নেই। ইন্দো-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৬-তে এবারই প্রথম বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে। এই নাট্যোৎসবে আমন্ত্রিত ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত অভিনেতা প্রসেনজিৎ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ এবং কলকাতার প্রখ্যাত মঞ্চ নির্দেশক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। যা নাট্যোৎসবকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। বলা যায় বর্ণিল এ নাট্যোৎসবে বাংলাদেশ ছিল একটি গর্বিত নাম। যেখানে জ্বলজ্বল করছে প্রাঙ্গণেমোর নাট্যদল ও নূনা আফরোজ। জয় হোক বাংলাদেশের, জয় হোক বাংলা নাটকের। প্রসঙ্গত, প্রাঙ্গণেমোরের ৯ম প্রযোজনা নূনা আফরোজের রচনা ও নির্দেশনায় ‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’ নাটকটি মঞ্চে আসে ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ইতোমধ্যে নাটকটির ৭টি প্রদর্শনী হয়েছে। নাটকে অভিনয় করেছেন- নূনা আফরোজ, অনন্ত হিরা, আউয়াল রেজা, রামিজ রাজু, তৌহিদ বিপ্লব ও সরোয়ার সৈকত। নির্দেশনার পাশাপাশি এর পোশাক ও মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন নূনা আফরোজ। সঙ্গীত পরিকল্পনায় রামিজ রাজু ও আলোক পরিকল্পনায় তৌফিক রবিন। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় রবীন্দ্র ভক্ত অথৈ একদিন তার বন্ধুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে বেড়াতে যায়। কুঠিবাড়ি দেখতে দেখতে এক সময় অথৈ একাই দোতলার সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যায়। হঠাৎ অথৈয়ের সামনে এসে হাজির হন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি অথৈকে কুঠিবাড়ি ঘুরিয়ে দেখার আহ্বান জানান। অথৈ ভুলে যায় তার বন্ধুসহ পৃথিবীর সবকিছু। সে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কথা বলতে থাকে। অথৈয়ের সামনে পর পর হাজির হয় ২৯ বছর, ৬৯ বছর, ২১ বছর ও ৮০ বছরের ভিন্ন ভিন্ন রবীন্দ্রনাথ। এই চার বছরের রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথা হয় সেই সময়ের রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন ও তাঁর সৃজনশীলতা নিয়ে। আর রবীন্দ্রনাথের প্রতিটি বয়সের সঙ্গে অথৈও বদলে যেতে থাকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও বয়সে। বিভিন্ন বয়সী রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অথৈয়ের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম ও তাঁর ব্যক্তি জীবনের নানা দিক।
×