ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ষোড়শ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে মুদ্রিত সংবিধান বিতরণ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ মে ২০১৬

ষোড়শ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে মুদ্রিত সংবিধান বিতরণ শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ষোড়শ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান ছাপানো হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল ছাপানোর পর বুধবার তা বিতরণও শুরু করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে এ সংবিধান বিতরণ শুরু হয়েছে। এছাড়া বিতরণ করা হয়েছে জাতীয় সংসদের সকল সদস্যের মধ্যেও। জাতীয় সংসদে মোট ৪শ’ কপি বিতরণ করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের সকল বিচারপতির কাছেও এ সংবিধান পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে মোট ১২৫ কপি সংবিধান বিতরণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির দফতরেও বুধবার ১০ কপি প্রদানের প্রক্রিয়া চলছিল। আইনমন্ত্রীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে উন্নত মোড়কে এবং উন্নতমানের কাগজে এ সংবিধান মুদ্রিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে এ বিলটি অনুমোদন লাভ করে। এটি ২০১৪ সালের ১৩নং আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। আর এই গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়েই শেষ হয় ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ এর আইনে পরিণত হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে জন্য জাতীয় সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোন বিচারককে অপসারণ করা যাবে। অসদাচরণ, অসামর্থ্য তদন্ত পদ্ধতি সংসদ আইন দ্বারা নিরূপণ করতে পারবে। এতদ সংশ্লিষ্ট আইন সম্প্রতি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। প্রকাশ থাকে যে, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কমনওয়েলথভুক্ত ৩৮ শতাংশ রাষ্ট্রে সংসদের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের বিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালে অনুরূপ বিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল, যা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মৌলিক কাঠামো। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনার সময় ড. কামাল হোসেন ছিলেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারকদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে কারণে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে অপসারণ করা যাবে মর্মে বিধান করেন, যা ভারত, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইত্যাদি রাষ্ট্রের অনুকরণে তখন তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক আইন জারি করে ১৯৭৮ সালে সামরিক ফরমান বলে বিচারকদের অপসারণের জন্য পাকিস্তানের অনুকরণে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদের ক্ষমতা খর্ব করে সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এবং অপর দুই সিনিয়র বিচারকের সমন্বয়ে একটি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সায়েম। সামরিক শাসনামলে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বলবত থাকা সত্ত্বেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী এবং বিচারপতি এসএম হোসেনকে অবৈধভাবে জবরদস্তিমূলক বিচারকের পদ থেকে অপসারণের খারাপ নজির স্থাপিত হয়। বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজির এলএলবি’র জাল সনদ, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী কর্তৃক প্রকাশ্যে জাতীয় সংসদের সদস্যদের উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্য ও কটাক্ষ করা এবং সর্বশেষ বিচারপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক গণজাগরণ মঞ্চ এবং রাজাকারদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মীদের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে প্রচার ও লিফলেট বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। এতে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যক্রম ও ফলপ্রসূ নয় মর্মে জনগণের নিকট প্রতীয়মান হয়। সেই প্রেক্ষাপটে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী পাস করা হয়। মূল সংবিধান অনুসারে সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক, এমনকি জাতীয় সংসদের স্পীকার, রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সংসদ কর্তৃক অপসারণযোগ্য, যা রাষ্ট্রের সকল অঙ্গের দায়বদ্ধতা/জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে।
×