ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টের রুল

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ মে ২০১৬

উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সড়কে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ঢাকা, জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১০ জনকে উক্ত রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত স্টিকার ছাড়া গাড়িতে সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবী বা এ ধরনের কোন আলগা স্টিকার লাগানো যাবে না। এ ধরনের স্টিকার লাগিয়ে আইন অমান্য করে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আদায় ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন ও হুটার (সাইরেন) নিয়ন্ত্রণে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে। বুধবার মিডিয়া সেন্টারে যানজটসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। রাজধানীর সড়কে উল্টোপথে গাড়ি চলাচল বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম ও জমির উদ্দিন বাবুল। পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, মোটরযান অধ্যাদেশ আইনের বিধান অনুযায়ী রং সাইডে (নির্দিষ্ট পথের উল্টোদিকে) গাড়ি চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে যানজট বাড়ছে এবং দুর্ঘটনাও ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বহনকারী ও ভিআইপিদের গাড়ি বেশিরভাগ গাড়ি এই আইন ভঙ্গ করছে বলে আমরা রিট আবেদনে উল্লেখ করেছি। তাই উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই বুধবার আদালত এই রুল জারি করেছে বলে জানান এই আইনজীবী। স্টিকার লাগানো যাবে না ॥ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত স্টিকার ছাড়া গাড়িতে সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবী বা এ ধরনের কোন আলগা স্টিকার লাগানো যাবে না। এ ধরনের স্টিকার লাগিয়ে আইন অমান্য করে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আদায় ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন ও হুটার (সাইরেন) নিয়ন্ত্রণে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে। বুধবার মিডিয়া সেন্টারে যানজটসংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন গাড়িতে সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবীসহ এ ধরনের আলগা স্টিকার লাগিয়ে আইন অমান্য করে চলে থাকে। যা অনেক সময়ই যানজটের সৃষ্টি করে। এছাড়া অপরাধীরা এ ধরনের স্টিকার লাগিয়ে বাড়তি সুবিধা নিয়ে থাকে। যা নানা ধরনের অপরাধ তৎপরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কারণ এ ধরনের স্টিকার লাগানো গাড়িতে সাধারণত চেকিং হয় না। এমন সুযোগটিকেই কাজে লাগায় অপরাধীরা। তারা এ ধরনের স্টিকার লাগিয়ে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জঙ্গী হামলা, বোমাবাজি বা অস্ত্রবাজির মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। এ জন্য আলগা স্টিকার লাগানো যাবে না। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদিত স্টিকার লাগানো যাবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে দেয়া স্টিকার সংসদ সদস্যদের নিজেদের ব্যবহৃত গাড়ি, তাদের পরিবারের গাড়ি, সংসদে কর্মরত অন্যান্য সংস্থার গাড়ি, সংসদ সচিবালয়ের নিজস্ব গাড়ি এবং সংসদ সচিবালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগ বা সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহৃত হবে। এমন নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যানজটের বিষয়ে কমিশনার বলেন, একটি আদর্শ শহরে যানবাহন চলাচলের জন্য শহরের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ রাস্তা প্রয়োজন অথচ ঢাকায় রয়েছে মাত্র আটভাগ। ঢাকায় তিন লাখ যানবাহনের চলাচলের রাস্তা আছে অথচ চলছে প্রায় ৯ লাখ যানবাহন। প্রয়োজনের তুলনায় থাকা কম রাস্তায় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে। পাশাপাশি এসব রাস্তায় যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, অপর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অভাব, সর্বোপরি ট্রাফিক আইন অমান্যের কারণে প্রতিদিন যানজট বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঢাকায় প্রায় ৪ হাজার ট্রাফিক পুলিশ সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করছেন। তারপরও যানজট কিছুতেই সহনীয় পর্যায়ে আনা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঢাকায় মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে। এছাড়া মোটরসাইকেলের ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের কারণে যানজট সৃষ্টিসহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ২ জনের বেশি মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন, হেলমেট না থাকা, উল্টোপথে, ফুটপাতে এবং হেডফোন ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। গত ২ মে পর্যন্ত মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে প্রায় ১০ হাজার এবং অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার মামলা করা হয়েছে। গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার দ-নীয় অপরাধ। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে চার শ’র বেশি মামলা হয়েছে। এছাড়া গাড়িতে হুটার বা বিকন লাইট ব্যবহারের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত আছে। মাইক্রোবাস দিয়ে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- বন্ধ করতে অস্বচ্ছ কাঁচ বা টিন্টেড পেপার ব্যবহার করা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিক্সা মুক্ত রাস্তায় রিক্সা চলাচল বন্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই ৪০ লাখ ভাড়াটিয়া ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সাংবাদিক, পুলিশ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হবে। তারা এলাকায় নতুন লোকের গতিবিধি লক্ষ্য রেখে তা পুলিশকে জানাবেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলামসহ ডিএমপির উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×