ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে চার ছাত্রীর মামলা

আহসানউল্লাহ ভার্সিটির শিক্ষক মাহফুজুর ফেরদৌস রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৫ মে ২০১৬

আহসানউল্লাহ ভার্সিটির শিক্ষক মাহফুজুর ফেরদৌস রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ঢাকার আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রশিদ ফেরদৌসকে ২ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে অনেক তথ্য মিলেছে। প্রায় দেড় বছর ধরে বেপরোয়াভাবে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করে আসছিল এই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে চার ছাত্রীর লিখিত অভিযোগ ছাড়াও আরও ছয় ছাত্রী মৌখিকভাবে একই অভিযোগ করেছে। রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাত আড়াইটায় রাজধানীর রমনা থানাধীন ইস্কাটন গার্ডেনের ১২/এ নম্বর বাড়ির এগারোতলার ১১০৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকালে ওই শিক্ষক ও তার পরিবার পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি বাড়িতে পুলিশের পোশাক পরিধান করে ডাকাত প্রবেশ করার অভিযোগ এনে ঝামেলা সৃষ্টির চেষ্টাও করা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা বিফলে গেছে। মামলার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যায়। রাতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে ছয় ছাত্রী তাদের পরিচয় গোপন রেখে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। কোর্ট রিপোর্টার জানান, বুধবার দুপুরে শিক্ষককে ঢাকা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত শুনানি শেষে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুল্লাহ আল সায়েম কলাবাগান থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে ঝামেলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মামলার প্রেক্ষিতে ঝামেলা এড়িয়ে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। শিক্ষককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার এজাহারে চার ছাত্রীর নাম রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক গ্রেফতারের পর ৬ ছাত্রী মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। তারাও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই ওই শিক্ষক ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন করে আসছিলেন। তবে গত বছরের প্রথম থেকে অনেকটাই বেপরোয়াভাবে ওই শিক্ষক তার ছাত্রীদের উপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছিল। এমনকি কোন কোন ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলা, যৌন নির্যাতনের অভিও, ভিডিও বা কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও পরিবার এবং পরিচিতদের মধ্যে প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আসছিল। অনেক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের পর ব্ল্যাকমেল করেছে ওই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কম করে হলেও অন্তত ২০-২৫ ছাত্রী ওই শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি পরবর্তীতে তাদের অনেককেই ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হয়েছে। ছাত্রীদের কলাবাগান থানাধীন একটি বাসায় ডেকে নিয়ে নানাভাবে যৌন নির্যাতন চালানো হতো। ওই শিক্ষকের স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বাদ দিয়ে আন্দোলনে নামে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে। কর্তৃপক্ষের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা, আইনের আওতায় আনাসহ চার দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষার্থীরা।
×