ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহের ৮ ও পটুয়াখালীর ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট চূড়ান্ত

ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৫ মে ২০১৬

ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের ৮ এবং পটুয়াখালীর ৫ জনসহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। এদের মধ্যে ময়মনসিংহের ৪ এবং পটুয়াখালীর ৫ জন কারাগারে আছেন। বাকি ৪ আসামি পলাতক। এদিকে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেছেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকের নামে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। ১৩ জনের মধ্যে পটুয়াখালীর গ্রেফতারকৃত পাঁচজন হলো ইছাহাক শিকদার, আব্দুল গণি, মোঃ আউয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সোলেমান মৃধা। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অপহরণ, অগ্নিসংযোগসহ ১৬ অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। ময়মনসিংহ ও জামালপুরের আটজন হলো রেজাউল করিম, এবিএম ইউনুস আলি, ইউসুফ আলি, ওমর ফারুক, নাসির উদ্দিন, ইসমাইল, একেএম বেলায়েত হোসেন ও কাজী বদরুজ্জামান। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা ও গণহত্যাসহ আটটি অভিযোগ রয়েছে। এই আটজনের প্রথম চারজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। বুধবার ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান এবং জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক। তারা জানান, ময়মনসিংহের ৮ জনের বিরুদ্ধে চার খ-ে ৪শ’ ২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আট অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় ২০১৫ সালের ১ মে থেকে তদন্ত শুরু করে ২০১৬ সালের ৪ মে পর্যন্ত তদন্ত শেষ করে প্রতিবদন চূড়ান্ত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মতিউর রহমান ও রুহুল আমিন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষী ৪৬। অপরদিকে, পটুয়াখালীর ৫ জনের বিরুদ্ধে ৫০৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে ১৫ নারীকে ধর্ষণসহ সম্মিলিতভাবে ১৭ অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন (আইও) সত্য রঞ্জন রায়। ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের তদন্ত চলছে ॥ সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকের নামে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৩ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রস্তুতির তথ্য জানানোর সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওসমান ফারুকের বিষয়ে এ তথ্য দেন তিনি। সানাউল হক বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের ১১ প্রফেসরের নাম পাওয়া গেছে। যারা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকা- করেছেন। তাদের মধ্যে ড. ওসমান ফারুকের নাম রয়েছে। তখন তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার ছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের জাতীয় পার্টির এমপি এমএ হান্নানের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ড. ওসমান ফারুকসহ এমন অনেক চমক সামনে রয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান এ তদন্ত কর্মকর্তা। ওসমান ফারুক বা বাকি দশজনের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ এসেছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি তদন্ত সংস্থা। তবে গত বছর অক্টোবরে ময়মনসিংহ-৭ আসনে জাতীয় পার্টির সাংসদ এমএ হান্নানকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারের সময় যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছিল, তাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর ‘টর্চার সেলের’ কথাও আসে। ময়মনসিংহের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন ময়মনসিংহের আদালতে হান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করলে বিষয়টি গত বছর ট্রাইব্যুনালে আসে। রহিমার করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর আব্দুর রহমানকে ধরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনা ক্যাম্পে নেয়া হয় এবং সেখানে নির্যাতন চালানোর পর তাকে গুলি করে হত্যা করেন হান্নান ও তার সহযোগীরা। স্থানীয় রাজাকার সদস্যরা সে সময় ময়মনসিংহ শহর থেকে নারীদের ধরে এনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যেত বলেও ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, একাত্তর সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সেখানে ক্যাম্প খোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথিশালায় বানানো হয় আঞ্চলিক কমান্ড হেডকোয়ার্টার আর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরসংলগ্ন একটি বাড়িতে চালু হয় সেই নির্যাতন কেন্দ্র। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় ধরে আনা অসংখ্য নারী-পুরুষকে সেখানে হত্যার পর পাশেই নদের তীরে মাটিচাপা দেয়া হয় সে সময়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই স্থানটিকে ‘বধ্যভূমি’ ঘোষণা করে।
×