ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের অঙ্গীকার

বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে চার চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৫ মে ২০১৬

বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে চার চুক্তি স্বাক্ষর

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ উন্নয়ন, সামরিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা ও ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত চারটি চুক্তি সই হয়েছে। এসব চুক্তির ফলে বাংলাদেশে কুয়েতি বিনিয়োগের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ ও কুয়েত একযোগে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বুধবার একান্ত বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল সাবাহর উপস্থিতিতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চামেলী হলে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে প্রথমেই স্বাক্ষরিত হয় বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি। বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং কুয়েতের শিক্ষামন্ত্রী ড. বদর আহমদ আল ইসা এ চুক্তিতে সই করেন। এরপর স্বাক্ষরিত হয় কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা সহজীকরণ সংক্রান্ত চুক্তি। এতে সই করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান ও কুয়েতের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ সুলেইমান আল জারাল্লাহ। তারপর সই হয় সামরিক খাতে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা চুক্তিটি। এতে স্বাক্ষর করেন ঢাকার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান ও কুয়েতের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ সুলেইমান আল জারাল্লাহ। সবশেষে স্বাক্ষরিত হয় ঋণ সহায়তা চুক্তি। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে কুয়েতের আরব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফান্ডের (কেফায়েদ) সঙ্গে স্বাক্ষরিত এ ঋণচুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম ও কেফায়েদের মহাপরিচালক আবদুল ওয়াহাব আল বদর। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে লেবুখালী সেতু নির্মাণে ঋণের বিষয়টি। দক্ষিণের এই দুই জেলায় এই সেতুটি নির্মাণ হলে আর কোন ফেরি থাকবে না। এই চুক্তির আওতায় লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে দেড় কোটি দিনার (৫ কোটি ডলার) ঋণ দেবে কুয়েত সরকার। এটি লেবুখালী সেতু নির্মাণে দ্বিতীয় ঋণচুক্তি। এই প্রকল্পে এক কোটি ৪০ লাখ দিনার (৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার) ঋণ পেতে ২০১২ সালে কুয়েতের সঙ্গে প্রথম ঋণচুক্তিটি হয়েছিল। সূত্র জানায়, সরকারী পর্যায়ে কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যোগাযোগ বাড়াতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে কুয়েত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। এদিকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা অব্যাহতির সুযোগ পাবেন। এ চুক্তির মাধ্যমে কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন। কুয়েতের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরাও বাংলাদেশে এ সুযোগ পাবেন। বর্তমানে ১৪টি দেশের সঙ্গে কূটনীতিক, বিশেষ ও সরকারী পাসপোর্টধারীদের এই ভিসা অব্যাহতির সুবিধা চালু রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চীন, চিলি, তুরস্ক, লাওস, বেলারুশ, ব্রাজিল ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে। কুয়েতের সঙ্গে চারটি চুক্তি সই ও দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, কুয়েতের সঙ্গে যেসব চুক্তি সই হয়েছে, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা করতে দুই দেশ মতৈক্য হয়েছে। সন্ত্রাস ও চরমপন্থা মোকাবেলায় দুই দেশের কৌশলগত প্রচুর মিল আছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ॥ কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানান শেখ হাসিনা। এরপর দুই নেতা একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। শিমুল হলে বৈঠকটি স্থায়ী হয় প্রায় বিশ মিনিট। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এতে আলোচনা হয়। এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে গুরুত্ব দেন। কুয়েত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জনশক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় হয়েছে। তারপর দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ ও কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ। কুয়েতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফান্ডের (কেফায়েদ) মহাপরিচালক আবদুল ওয়াহাব আল বদরসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তিন দিনের সরকারী সফরে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা পৌঁছান শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সফরের মূল কার্যক্রম শুরু করেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের। জাতীয় সংসদে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ॥ দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনের ৭ম কার্যদিবসে সংসদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে সফররত কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। বুধবার বিকেলে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়টি সংসদকে অবহিত করেন। এ সময় সংসদ সদস্যরা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীসহ আগত অতিথিদের স্বাগত জানান। কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদ সুলেইমান আল জারাল্লাহ, শিক্ষামন্ত্রী ড. বদর হামাদ আল ইসাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। জাতীয় সংসদ ভবন থেকে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের জান বঙ্গভবনে। এখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় তার সৌজন্যে হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও নৈশভোজের আয়োজনে অংশ নেন তিনি। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এশিয়ার পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশের পর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এ সফরে এসেছেন। কুয়েত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শ্রম বাজার। তবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়ার হার কমে গেছে। ১৯৭৬ থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ জন বাংলাদেশী শ্রমিকের কুয়েতে কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৭ হাজার ৬৫৮ জন নারী। ২০০৬ সালেও দেশটিতে ৩৫ হাজার ৭৭৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশ করে। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধীরে ধীরে শ্রমিক পাঠানো কমে যায়। এ সংখ্যা এখন বাড়াতে চায় সরকার। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭৩ সালে কুয়েত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর এই দুই মুসলিম দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার দৃঢ় ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেই আস্থা এখনৗ অটুট রয়েছে। এর আগে দুই দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। রাশিয়া ও ইরান অব্যাহতভাবে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন-চার বছর বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের এই পতন অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী। কম মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়া কুয়েতের অর্থনীতির জন্য অগ্রাধিকার হওয়ায় এমন কর্মী পাওয়ার জন্য বাংলাদেশই সবচেয়ে ভাল স্থান বলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি মনে করে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কুয়েতে বর্তমানে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। দেশটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও রয়েছে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচী। এর মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। তিন দিনের সফর শেষে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা ছাড়বেন তিনি। দুই দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হবে ॥ বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র আগামীতে আরও বিস্তৃত হবে। দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সে কথাই বললেন, ঢাকায় সফররত কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। তার কথায় কথা মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, মুসলিম উম্মাহর জন্য দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করতে চায়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসব তথ্য জানান। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব বার বারই একটি বিষয়ে জোর দিচ্ছিলেন। বলছিলেন বন্ধুপ্রতীম দুটি দেশের মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হৃদ্যপূর্ণ ছিল। পররাষ্ট্র সচিব জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ক্রমেই একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার প্রশংসা করেছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মোটা দাগে ছয়-সাতটি বিষয় আসে এই আলোচনায়। যার মধ্যে অন্যতম হিসেবে গুরুত্ব পায় মুসলিম উম্মার শান্তির পক্ষে দুই দেশের সহঅবস্থান। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই নেতাই তাদের স্ব স্ব অবস্থানের কথা উল্লেখ করেন এবং সন্ত্রাস নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আলোচনায় আসে বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। আর কুয়েতি প্রধানমন্ত্রী তাদের এ বিষয়ে আগ্রহের কথা স্পষ্ট করেন। তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্পায়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা এতে উঠে আসে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির দিকটি আলোচনায় আসে এবং এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে একটি যৌথ সভার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। যা দ্রুততার সঙ্গে আয়োজনের উদ্যোগ নিতে দুই পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পররাষ্ট্র সচিব জানান, আলোচনায় আসে কুয়েতে বর্তমানে কর্মরত দুই লাখ বাংলাদেশীর কথা। এই সংখ্যা আরও কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কথা হয়। এ নিয়েও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করে দ্রুত আলোচনায় বসার উদ্যোগের ব্যাপারে দুই নেতা সম্মত হন। সামরিক খাতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। এই সহযোগিতা আরও দৃঢ়, বিস্তৃত করার বিষয়েও সম্মত হন তারা। এছাড়াও কারিগরি ও অর্থনৈতিক খাতেও সহযোগিতা আরও বাড়ানোর কথা বলেন দুই নেতা। তিনি জানান, কুয়েতের আমিরকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনাকে সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হলো বলেই মনে করছে উভয়পক্ষ।
×