ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শিল্পে আসছে বড় বিনিয়োগ ;###;লক্ষ্য পূরণে আগামী বাজেটে নেয়া হচ্ছে নানামুখী বিশেষ কৌশল

৬০ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ মে ২০১৬

৬০ বিলিয়ন ডলার

এম শাহজাহান ॥ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পোশাক খাতের রফতানি হবে ৫০ বিলিয়ন ডলার। বাকি ১০ বিলিয়ন ডলার আসবে চামড়া, ওষুধ, জাহাজ, আইসিটি, পাটজাতপণ্য, প্লাস্টিক এবং এ্যাগ্রো-প্রোডাক্টস ও প্রসেসড পণ্য রফতানি করে। এ লক্ষ্যে পোশাক শিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগ করা হবে। বর্তমান সেলাই করার বিদ্যমান শিল্পের সঙ্গে সুতা ও কাপড় উৎপাদনের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সুতা, কাপড় ও পোশাক বাংলাদেশে তৈরি করা হবে। রফতানি বাড়াতে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে রফতানি বৃদ্ধির প্রয়াস জোরদার করার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌক্তিকভাবে বাণিজ্য ভারসাম্যের উন্নয়ন করার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, উৎপাদনে নৈপুণ্যের উন্নয়ন, চীন ও ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাজার সম্প্রসারণে এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) এবং পিটিএ’র মাধ্যমে নতুন নতুন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হবে। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রফতানি শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, রফতানি পণ্যের গুণগতমান ও প্রতিযোগী মূল্য নিশ্চিত করা হবে। সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক পণ্য ও সেবা রফতানির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান, প্রাধিকার নির্ধারণ, রফতানি সম্প্রসারণে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ, বাণিজ্যিক উইংসমূহের কার্যক্রমকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী বাজেটে বিশেষ কৌশল নেয়া হবে। তিনি বলেন, পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি এবং প্রচলিত মার্কেটের পাশাপাশি নতুন বাজার অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে। বৈদেশিক মিশনসমূহকে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব করে তোলা হবে। তিনি বলেন, রফতানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকবে আগামী বাজেটে। বিশেষ করে পোশাক শিল্পের বিদ্যমান বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়ানো হবে। রফতানি বৃদ্ধির সুবিধার্থে বিদ্যুত, পানি, গ্যাসসহ অবকাঠামোগত সুবিধা সহজলভ্য করা, বন্দরসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বন্দরমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। জানা গেছে, রূপকল্প-২১ বা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই ঘোষণা বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও উদ্যোক্তারা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি সম্ভব। এজন্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির তাগিদ দেয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের আওতায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। রফতানি বাণিজ্য ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যে শুধু পোশাক শিল্পে আরও ২৯ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এ শিল্পে ৪০ লাখ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এছাড়া পোশাক শিল্পে এখন প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী ২০ বছর নাগাদ এ শিল্পের গ্রোথ এ হারেই বাড়বে। এই গ্রোথ ধরে রাখার জন্য গার্মেন্টস পল্লী স্থাপনসহ অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সহসভাপতি ফেরদৌস পারভেজ বিভন জনকণ্ঠকে বলেন, রূপকল্প-২১ অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করা সম্ভব। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিবছর গড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। এই প্রবৃদ্ধি এখন হচ্ছে। তাই আশা করা যায়, ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করতে সক্ষম হবে এদেশের উদ্যোক্তারা। তবে তিনি এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারী সহযোগিতা বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া পোশাক খাত থেকে গত ১০ বছরে যে আয় হয়েছে তা হিসাব করলে দেখা যায়, এতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০২০-২১ অর্থবছরে আয় হবে ৬০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জনে আগামী পাঁচ-ছয় বছরে সেই পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, যা গত ৩৫ বছরে হয়েছে। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আমাদের পরিবেশ এবং টেক্সটাইল শিল্পের টেকসই উন্নয়নের কথাও মাথায় রাখতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে অবকাঠামো উন্নয়নেও। বর্তমানে চার লেনের কাজ চলছে। ছয় লেন বা এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে হবে। জানা গেছে, নতুন আমদানি-রফতানি নীতিমালায়ও রফতানি বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি করা হচ্ছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। পাশাপাশি দেশের রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রফতানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশের রফতানি আরও বৃদ্ধির জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, জাহাজ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং ফার্নিচার রফতানির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার এ সকল ক্ষেত্রে রফতানি বৃদ্ধির জন্য রফতানিকারকদের চাহিদা মোতাবেক সকল সহায়তা প্রদান করছে। সরকারের উদ্যোগ ও রফতানি বাজার সম্প্রসারণে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব নয় বলে বলে দাবি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য-উপাত্তসহ বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের ১৯টি বাণিজ্যিক উইংয়ের কাছে দেশভিত্তিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা হচ্ছে পোশাক রফতানির প্রচলিত মার্কেট। এই ২৯টি মার্কেটের বাইরে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি হচ্ছে। ল্যাটিন আমেরিকার ব্রাজিল, চিলি, পেরু, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনাসহ রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক, চীন, জাপান, কোরিয়া ও ভারত অপ্রচলিত মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম। আশার কথা হলো, প্রচলিত মার্কেটের রফতানি প্রবৃদ্ধি যখন কমছে তখন অপ্রচলিত এসব মার্কেটের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
×