ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুসান্না সাজ্জিল

মার্কিন সরকারের দেনা ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ৪ মে ২০১৬

মার্কিন সরকারের দেনা  ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার

মার্কিন ফেডারেল সরকারের কাঁধে এখন ১৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের বোঝা। তাছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে নেয়া মার্কিন পরিবারগুলোর ঋণের পরিমাণ ১৪.২২ ট্রিলিয়ন ডলার। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর দেনা আছে ১২.৭৮ ট্রিলিয়ন ডলার। রাজ্য ও স্থানীয় সরকারগুলোর ঋণ ২.৯৮ ট্রিলিয়ন ডলার। সোজা কথায় আমেরিকানদের সবশুদ্ধ ঋণের পরিমাণ ৪৩.৮৯ ট্রিলিয়ন ডলার আর জনপ্রতি আমেরিকানের কাঁধে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৬ ডলার। এই হিসাব চলতি ২০১৬ সালের। ফেডারেল সরকারের ঋণ যে ১৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে সেটা কিভাবে হলো? এর পিছনে বিভিন্ন খাতের ভূমিকা আছে। সরকার যখন তার সংগৃহীত রাজস্ব বা আয় দিয়ে ব্যয় মেটাতে পারে না তখন তাকে ঋণ নিতে হয়। খরচগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যয়Ñ যেমন আফগান ও ইরাক যুদ্ধ, সামরিক বাহিনী ও প্রতিরক্ষা ব্যয়, প্রবীণ সৈনিকদের প্রদত্ত সুবিধা। তাছাড়া আয়কর হ্রাস, পেরোল ট্যাক্স হলিডে, বেকারত্ব বৃদ্ধি ও মজুরি হ্রাসের কারণে কর খাতে ফেডারেল সরকারের রাজস্ব কমে গেছে। মন্দার কারণে সরকারকে বাড়তি কিছু ব্যয় করতে হচ্ছে। যেমন অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিতে হচ্ছে সেফটি নেট প্রোগ্রাম চালাতে হচ্ছে, বেকারভাতা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও আছে খাদ্য স্ট্যাম্প, সামাজিক নিরাপত্তা, চিকিৎসা, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান গবেষণা, আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং ঋণের সুদ পরিশোধের পিছনে ব্যয়। আয় ব্যয়ের ভাবসাম্য রক্ষা করতে না পারার জন্য মার্কিন সরকারকে বরাবরই ঋণগ্রস্ত থাকতে হচ্ছে। আমেরিকান বিপ্লবের সময় থেকেই কার্যত এই সরকার ঋণী। তখন এই রাষ্ট্রে স্থপতিরা লড়াইয়ের খরচ মেটানোর জন্য ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে অর্থ ঋণ নিয়েছিলেন। তারপর থেকে শুধু একবারই মাত্র দেশটা ঋণমুক্ত থেকেছে। সেটা প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জ্যাকসনের আমলে। তিনি ব্যাপকভাবে সরকারী ব্যয় হ্রাস করেছিলেন এবং সরকারী জমি বেঁচে আয় বাড়িয়েছিলেন। বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য সরকারের যখন বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হয় তখন সরকার বন্ড, ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি সিকিউরিটির আকারে ঋণপত্র বিক্রি করে। সাধারণ মানুষ সেগুলো কিনে। তেমনি কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারী সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্র। চলতি বছর ফেডারেল সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ১৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার। বেশিরভাগ ঋণ ফেডারেল ব্যাংকের কাছে করা যার পরিমাণ প্রায় ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এরপর চীন ও জাপানের স্থান। সরকারের এই ঋণ এখন ম্যানেজ করার অসাধ্য অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। ঋণ ও ঘাটতির মধ্যে তাহলে পার্থক্য কোথায়? সরকার কর থেকে যা পায় আর যা ব্যয় করে তার মধ্যে বার্ষিক পার্থক্যটাই হলো ঘাটতি। প্রতিবছরের ঘাটতিই ঋণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় এবং এভাবে ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলে। কারণ সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তির তুলনায় তার ব্যয় সর্বদা বেড়েই চলে। গত ৫০ বছরে মার্কিন সরকারের বাজেটে মাত্র ৫ বার উদ্বৃত্ত হয়েছে। অষ্টাদশ শতকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ডলারকে সোনার বা রূপার সমান হিসেবে ধরা হতো। আমেরিকানরা কাগজী মুদ্রা নিয়ে কারবার করত না তা নয়। তবে সেগুলো সোনার মতো মূল্যবান ধাতব বস্তুতে রূপান্তরযোগ্য ছিল। এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ‘ডলারের মতো শক্তিশালী’ কথাটা চালু হয়ে গিয়েছিল। শক্তিশালী ডলারের পাশাপাশি ছিল সুষম বাজেট। যুদ্ধের সময় সরকারের ঋণ বেড়ে যেত এবং শান্তির সময় কমে আসত। ১৯৩০-এর দশকের মন্দা ও ১৯৪০-এর দশকের যুদ্ধের সময় এই ধারাটির ব্যত্যয় ঘটে। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ডলারকে সোনায় রূপান্তর যোগ্যতা তুলে দেন এবং ঘোষণা করেন যে ডলারের মূল্য সরকার যেভাবে নির্ধারণ করবেন সেভাবে হবে। ফেডারেল রিজার্ভ তার সাধ্যানুযায়ী ডলার নোট ছাপতে পারবে। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। শেয়ার, বন্ড ও বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের দাম বৃদ্ধি পায়। বাড়িঘরের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। গাড়ি বিক্রিও বেড়ে যায়। মানুষের হাতে ডলার এসে জোটে। ডলারের বিস্তারের ফলে ঋণগ্রহণও বেড়ে যায়। অতিসামান্য সুদের হার ঋণগ্রহণকে উৎসাহিত করে। মার্কিন অর্থনীতিতে ভোগবাদের রাজত্ব কায়েম হয়। লোকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় আর খরচ করতে থাকে। আমেরিকানরা যত সহজে ঋণ শোধ করতে পারবে তার চেয়ে বেশি সহজে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ততই ডলার ছেপে চলে। ঋণের পরিমাণ সর্বত্রই বাড়তে থাকে। ২০০৮-২০১২ এই ৪ বছরের ফেডারেল ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় মোট ৫.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এই সময়ের মধ্যে সরকারের নেয়া ঋণও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১১.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ওদিকে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নতুন ১.৬ ট্রিলিয়ন ডিজিটাল ডলার বাজারে ছাড়ে। আমেরিকান জনগণের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলে। এই নিরাপদ চিত্রের মধ্যে সামান্য একটু আলোর রেখা আছে। গত জানুয়ারিতে পূর্ববর্তী ১২ মাসের ঘাটতি হিসাব করে দেখা গেছে। ওটা ছিল ৪০ হাজার ৫শ’ কোটি ডলার। ২০০৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন ১২ মাসের ঘাটতির পরিমাণ এটাই হলো ন্যূনতম। তবে মনে রাখতে হবে ৪০ হাজার ৫শ’ কোটি ডলারও এক বিশাল অঙ্ক। এই ঘাটতি মেটাতে ফেডারেল রিজার্ভ আরও ডলার ছেপে বাজারে ছাড়বে। কিন্তু তাতে কি মার্কিনীদের কিছু যায় আসে, অবশ্যই যায় আসে। ফেডারেল সরকার ডলার ছাপতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সরকার তা পারে না। তাদেরকে তখন ঘাটতি মেটাতে নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। কর বাড়াতে হবে, সেবামূলক ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ও সঙ্কুচিত করতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকানরা নিজেরাই। সূত্র : টাইম
×