ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভা

শহীদ জননীর আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা দিয়েছিল

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৪ মে ২০১৬

শহীদ জননীর আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা দিয়েছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদ জননী জাহানার ইমাম বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন কিন্তু ’৭১ তাঁর জীবনকে পাল্টে দেয়। তিনি কোনভাবেই সন্তানের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গঠিত তাঁর প্রতীকী গণআদালতের কোন তুলনা হয় না। শহীদ জননীর এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। জাহানারা ইমামের এ আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় পর্ব। আর সেপথ ধরেই দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। পাকিস্তানী সেনাদেরও বিচার হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই ১৯৫ জন পাকি সেনার বিচার সম্ভব, তাদের বিচার করতে আইনী কোন বাধা নেই। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের বিচারে বাধা কোথায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালল নির্মূল কমিটি ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় সাংবাদিক কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পদ্মভূষণ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, সার্ক ল’র প্রাক্তন মহাসচিব ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ (অব) ও শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একাত্তরের ঘাতক দালল নিমর্ূূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৯৯২ সালে আজ থেকে ২৪ বছর আগে শহীদ জননী এমন একটি আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যা দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। ওই আন্দোলনকে অবজ্ঞা করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারেনি, পারবেও না। জাহানারা ইমাম যখন গণআদালত গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের সাজা প্রদান করলেন, তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধের ২য় পর্ব শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রসঙ্গে রায়ের কথা উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, সুপ্রীমকোর্টের দায়িত্ব ছিল ওই অসঙ্গতি দূর করা। তারা সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসেনি, বরং উল্টোটা করেছে। সামরিকজান্তাদের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিয়েছে। হাইকোর্টের এ রায়কে ধিক্কার জানাচ্ছি। তাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের সেবা প্রদান করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি না, তাই আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি আরও বলেন, ওলামা লীগ নামক একটি সংগঠন হেফাজত জামায়াতের কথা পুনরাবৃত্তি করছে। কেন এই সংগঠনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হচ্ছে না? ওলামা লীগ প্রধান যখন প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করে, হিন্দু বিচারপতির অপসারণ দাবি করা সত্ত্বেও তাকে কেন আদালত অবমাননার জন্য ডাকা হলো না? এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পদ্মভূষণ বলেন, জাহানারা ইমাম বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, ’৭১-র তার জীবন ধারাকে বদলে দিয়েছিল। তাঁর সন্তানের মৃত্যু তিনি কোনভাবে মেনে নিতে পারেননি। ১৯৯১ সালে গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে প্রতীকী গণআদালত গঠনের তুলনা হয় না। ক্যান্সার সঙ্গে করে তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ’৯৬-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো, তার পেছনে জাহানারা ইমামের অবদান ছিল। ১৯৫ জন পাকি সেনার বিচারের নৈতিক অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে উল্লেখ করে প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, পাকিস্তানীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রাখেনি। যেহেতু প্রতিশ্রুতি রাখেনি, তাই এ বিচারের দায়িত্ব বাংলাদেশকেই নিতে হবে। যে বিচারের নৈতিক অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, কোন রাজনৈতিক দল যদি বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতির সুযোগে দেশের মাটির বিরুদ্ধেই আচরণ করে তবে তাদের নিষিদ্ধ চাইব। ঠিকই একইভাবে যারা এদেশে জামায়াত ও জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করে আমি তাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে যদি রাজনীতি করতে হয়, তাদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই করতে হবেÑঅন্যথায় তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। সেজন্যই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, সমাজ-সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাড়তে দিতে হবে। অপশক্তির সঙ্গে আপোষের যে মনোবৃত্তি তা আমাদের হতাশ করে। সততা ও স্বচ্ছতা নিয়ে এগুতো হবেÑতার মধ্যে কোন আপোষকামিতা চলবে না। বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, পুলিশ কমিশনার বলছেন অভিজিতের খুনীরা পালিয়ে গেছে, তাহলে তারা খুনীদের চিনত, তাহলে পালালো কিভাবে? তিনি আরও বলেন, নীতি নির্ধারকদের মন একরৈখিক, তারা মনে করেন তারা যা করছেন তাই ঠিক, অন্যরা ভুল। এই মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
×