ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্ত্রী ও তার দুই সহযোগী গ্রেফতার

পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় চকবাজারে স্বামীকে জবাই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ মে ২০১৬

পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় চকবাজারে স্বামীকে জবাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় রাজধানীর চকবাজারের এক ব্যবসায়ীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ নিহতের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার এবং তার দুই সহযোগী আসলাম ও আল আমিনকে গ্রেফতার করেছে। পরে পুলিশ বাসার খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, স্ত্রীর পরকীয়ার জের ধরে ওই ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত ব্যবসায়ীর নাম মোঃ জামিল হোসেন (৩৬)। তিনি চকবাজারে স্কচটেপসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর একটি দোকান চালাতেন। চকবাজার থানার রহমতগঞ্জ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৫৯ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার ভোরে ওই বাসার খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো জামিলের লাশ উদ্ধারের পর তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জামিলের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান আরও জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর ব্যবসায়ী জামিলের বোন শাহেদা পারভীন ও ভাগ্নি রুমা পারভীন চকবাজার থানায় এসে অভিযোগ করেন, সকাল থেকে জামিলের কোন খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। এ সময় তারা জানান, সোমবার সকালে দোকানে যাওয়ার কথা বলে জামিল বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। এই কথা তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু দোকানের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, জামিল দোকানে যাননি। ওসি (তদন্ত) জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে মৌসুমী আক্তারকে খবর দিয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তার কথায় অসংলগ্নতা দেখে ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাসায় মৌসুমীকে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসায় ঢুকতে চাইলে প্রথমে মৌসুমী চাবি হারিয়ে ফেলার কথা বলেন। পরে চাপের মুখে চাবি বের করে দেন। ওসি (তদন্ত) হাফিজুর আরও জানান, দ্বিতীয় তলার দুটি শোয়ার ঘরের দুটোই তালা দেয়া ছিল। প্রথম ঘরে ঢুকেই তারা লাশের গন্ধ পান। খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় জামিলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেন। ব্যবসায়ী জামিলের লাশ উদ্ধারের পরই খুনের রহস্য বেরিয়ে পড়ে। এ সময় মৌসুমীকে আটক করে থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মৌসুমী প্রথমে বলেন, রবিবার রাত ১২টার দিকে আসলাম ও আল আমিন নামের দুই যুবক তাদের বাসায় এসে তার স্বামীকে খুন করে যায়। তার দাবি, জামিলকে যখন খুন করা হয় তখন তিনি পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে অন্য ঘরে ছিলেন। মৌসুমীর দাবি, আসলাম ও আল আমিন খুন করে চলে যাওয়ার আগে তাকে শাসিয়ে যায়। জানাজানি হলে ছেলেকেও হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয় তারা। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভোরের দিকে চকবাজার থেকে আসলাম ও আল আমিনকেও গ্রেফতার করা হয়। ওসি (তদন্ত) হাফিজুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত আসলাম চকবাজারের একটি দোকানের ম্যানেজার। ব্যবসায়িক সূত্রে জামিলের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। মৌসুমী তাদের কাছে স্বীকার করেছে, আসলামের সঙ্গে তার প্রণয় ছিল। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদে মৌসুমী পুলিশকে জানায়, দুধের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয় জামিলকে। তারপর আসলাম ও আল আমিন বঁটি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে জবাই করে। পরে তার মরদেহ পলিথিনে ভরে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। পরকীয়ার বাধা দূর করতেই স্বামী জামিলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে মৌসুমী পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। নিহত ব্যবসায়ী জামিলের ভগ্নিপতি আনোয়ার জানান, সাত বছর আগে জামিল মৌসুমীকে বিয়ে করেন। জামিল ও মৌসুমীর ঘরে তাজ নামের পাঁচ বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সম্প্রতি মৌসুমী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আর এ কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। তিনি জানান, জামিলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শাশুড়ি মোরা বেগম সোমবার রাতে আমাকে ফোন দেন। পরে পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়। নিহতের ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন আরও জানান, জামিল হোসেন চকবাজারের রহমতগঞ্জের ১৭৭ ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের সফি আহমেদের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে একই রোডের কালাম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার একটি স্কচটেপ কারখানাও আছে। জামিলের পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে বসবাস করেন।
×