ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে দুই শীর্ষ নেতার পুরনো বিরোধ ফের প্রকাশ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৪ মে ২০১৬

চট্টগ্রামে দুই শীর্ষ নেতার পুরনো বিরোধ ফের প্রকাশ্যে

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ মহানগর কমিটির দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র ও কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের মধ্যে গ্রুপিং দিন দিন বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামীতে বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কাও করছেন দলের শান্তিপ্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বড় একটি অংশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের ঘটনাটিও এই দু’নেতার কোন্দলের জের হিসেবে ঘটেছে বলে চাউর হয়ে আছে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের এ দু’নেতাকে প্রকাশ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করার তাগাদা দিলেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, মহিউদ্দিন চৌধুরী টানা তিনবার মেয়র থাকা অবস্থায় আ জ ম নাছির উদ্দিন যখন কমিটির সদস্য তখনও তাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তবে তা প্রকাশ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশ পায়নি, এখন যা পাচ্ছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দু’জনই চট্টগ্রামে সরকারী দলের প্রধান কমিটির প্রভাবশালী নেতা। গত মেয়র নির্বাচনের পর থেকে দু’জনের সম্পর্কে চরম অবনতি ঘটে। তবে তা জনসমক্ষে কেউ কখনও প্রদর্শন করেননি। এখন সে পরিস্থিতি নেই। দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি এখানও। এ বিষয়ে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, মেয়র হওয়ার পর নাছির কর্পোরেশনের কাক্সিক্ষত কোন উন্নয়ন করতে পারেননি, উপরন্তু নগরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। সে কর পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে পত্রিকায় নাম ছাপিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সম্পত্তি ক্রোক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা কখনও কাম্য হতে পারে না। অপরদিকে, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, সাবেক মেয়র বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, এক পয়সা করও বৃদ্ধি করা হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৯৮৫ গেজেট মূলে পৌরকর আদায় করছে মাত্র। সরকার নির্ধারিত ট্যাক্সের এক টাকাও অতিরিক্ত ধার্য করা হয়নি। কর্পোরেশন পরিচালনার কর্মকা- নিয়ে সাবেক ও বর্তমান মেয়রের উপরোক্ত বক্তব্য হলেও বাস্তবে একে অপরের প্রতি বৈরী মনোভাবের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কর বৃদ্ধির বিষয়টি নামমাত্র ইস্যু। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, সাবেক এক মেয়র ও বিশিষ্টজনরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কর্পোরেশনের কর্মকা- নিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করলেও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিই যে এ ইঙ্গিত করেছেন তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। জবাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী আরেক সমাবেশ থেকে বলেছেন, ‘নগরপিতাকে বলছি, সংযত হয়ে কথা বলুন।’ শীর্ষ পর্যায়ের দু’নেতার এহেন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যই প্রমাণ করে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরোধ অনেক পুরনো। একজন সাবেক মেয়র, অপরজন বর্তমান মেয়র। এই দু’নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ এমনকি খুনোখুনীর ঘটনাও কম হয়নি। তবে সর্বশেষ কমিটিতে আ জ ম নাছির উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সে বিরোধ সমন্বয়ে রূপ নেবে বলে আশা করা হয়েছিল। শুরুতে কিছু সময় পাশাপাশি থাকলেও দূরত্ব এখন ক্রমেই বাড়ছে। মনস্তাত্ত্বিক বিরোধটি শুরু হয়েছিল বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন আদায়কে কেন্দ্র করে। তিন-তিনবারের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ইচ্ছা ছিল মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আ জ ম নাছির উদ্দিন পান দলীয় সমর্থন। এর পরও বিরোধটা ছিল সহনশীল পর্যায়ে, যা অনেকটাই চাপা ছিল। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে ততই এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যকার বিরোধ তীব্র রূপ ধারণ করছে। মঞ্চে দু’নেতা কখনওবা একত্র হলেও তাদের সম্পর্ক যে শীতল তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, একজন বক্তৃতা দিয়ে চলে যাওয়ার পর আরেকজন আসেন। প্রসঙ্গত, চাপা ক্ষোভ প্রকাশ্যে রূপ লাভ করতে শুরু করে গত ২৯ মার্চ প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে এক ছাত্র খুনের ঘটনার পর। নিহত এই শিক্ষার্থীর পরিচিতি ছিল মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কাকে করা হবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের মারামারিতে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান নাসিম আহমেদ সোহেল।
×