ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নবীন শিল্পীদের প্রদর্শনী

ঢাকার চেনা মুখ, জীবন তেলরঙের ডনরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৪ মে ২০১৬

ঢাকার চেনা মুখ, জীবন তেলরঙের ডনরীক্ষা

মোরসালিন মিজান ॥ চার্লস ড’য়লী ঢাকাকে এঁকেছিলেন। সেটা ১৮০০ সালের কথা। ‘এ্যান্টিকুইটিজ অব ঢাকা’ নামে পরিচিত ড্রইংগুলো এখন ইতিহাসের অমূল্য স্মারক। ড’য়লীর পরেও অনেকে নিয়মিতভাবে প্রিয় শহরকে এঁকেছেন। এঁকে চলেছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছে ঢাকা। ঠিক এই মুহূর্তের রূপটি কেমন? উত্তর জানতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ঘুরে আসা যেতে পারে। এখন ৫ ও ৬ নম্বর গ্যালারিজুড়ে কেবল ঢাকার ছবি। অপেক্ষাকৃত নবীন শিল্পীদের চমৎকার সব কাজ। শিল্পিত বাংলাদেশ আয়োজিত প্রদর্শনীর শিরোনাম- আমাদের ঢাকা। শিল্পিত বাংলাদেশের কথাটি আগে বলা যাক, চারুকলার শিক্ষার্থী ও তরুণ শিল্পীদের এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে গড়েছেন। শিল্পী মানস ও সামাজিক দায়Ñ দুটো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংগঠনটি কাজ করে। ঢাকা নিয়ে বরাবরই বিশেষ আবেগ। সেই আবেগ থেকেই প্রিয় শহরকে ক্যানভাসে তুলে আনার প্রয়াস। সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। ১৫ নবেম্বর শুরু হয়ে সেটি চলেছিল ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কর্মশালায় অংশ নেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কয়েক শিক্ষার্থী। ছিলেন ইউডা, কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট, নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরাও। আরিফুর রহমান তপু, মুসতারি ফাহমিদা আফরিন শান্তা, হিমু, নাইম হাসান খান, সজল সুত্রধর, ময়না, উপমা, রাইসা, আবু লায়েস, আনোয়ার পাশাসহ মোট ৩৫ জন ছবি আঁকেন। প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, মোট ১৫৬টি ছবি। বর্তমান সময়ের ঢাকাকে তেলরঙে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস। প্রচলিত আঁকাআঁকি আছে বটে। নীরিক্ষাগুলো দারুণ নজড় কাড়ে। যেন পরিণত শিল্পীর ক্যানভাস। অভিন্ন জায়গায় বসে আঁকা হলেও স্বতন্ত্র শিল্পভাষা। একটি ক্যানভাসের সঙ্গে অন্যটি হুবহু মিলে যায় না। একেকজন একেক দৃষ্টিকোন থেকে দেখেছেন। এঁকেছেনও সেভাবেই। বেশিরভাগ ক্যানভাসে জঞ্জালের শহর। ইট-সিমেন্টে ঢাকাপড়া আকাশ। এই তার ওই তার কু-লি পাঁকিয়ে আছে। রাস্তায় ঘন যানবাহন। অথচ চাকা ঘুরছে না। মজার ব্যাপার এই যে, পেপারে চমৎকার ওয়াটার কালার ট্রিটমেন্ট এই অচলাবস্থাকে আশ্চর্য গতি দেয়। কোনটাই আর জঞ্জাল অর্থে সামনে আসে না। বরং শিল্পের দারুণ অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে! ছবিগুলোয় খুঁজে পাওয়া যায় রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ঐতিহাসিক নিদর্শন। উদাহরণ হতে পারেÑ কার্জন হল, সংসদ ভবন, আহসান মঞ্জিল। পুরনো ঢাকা, সদরঘাট, বাবুবাজারের ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা। ডকইয়ার্ডের বেশ কিছু ছবি। দেখে বোঝা যায়, কর্মশালা বিস্তৃত হয়েছিল কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান তপু। ইউডা চরুকলা থেকে সদ্য পাস দিয়েছেন। বললেন, কর্মশালায় আঁকা মোট ছবির সংখ্যা ১৬০০! সেখান থেকে বাছাই করা ১৫৬টি নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন। কোন্ চিন্তা থেকে ঢাকাকে আঁকা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অতিপ্রিয় শহর ঢাকা নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের সময়টাকে ধরে রাখার একটা চেষ্টা করেছি। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক শিল্পী মুসতারি ফাহমিদা আফরিন শান্তা। শহর ঘুরে ছবি আঁকার অভিজ্ঞতা কী? কেমন হলো সব মিলিয়ে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক রোদের মধ্যে ছবি আঁকার কাজ করতে হয়েছে। খোলা জায়গায় বসে সবার সঙ্গে এঁকেছি। এটা আবার খুবই আনন্দের। নিজের দেখার সঙ্গে কিছু কল্পনার রং মিশিয়ে ছবি এঁকেছেন বলে জানান তিনি। অবশ্য মুখে এই শিল্পী যা বলেন, তার অধিক বলাবলি নিজের আঁকা ছবিতে। অন্যরাও যে যার মতো করে বলেছেন। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি ঢাকা পরিভ্রমণ। ২ মে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত।
×