ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দূরপাল্লায় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে কমল তিন পয়সা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ মে ২০১৬

দূরপাল্লায় বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে কমল তিন পয়সা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ১৫ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরী বাদে সারাদেশে ডিজেল চালিত বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা কমিয়েছে সরকার। এই হিসেবে প্রতি কিলোমিটারে এখন থেকে এক টাকা ৪৫ পয়সার স্থলে এক টাকা ৪২ পয়সা ভাড়া হবে। মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ভাড়া পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমানোর ফলে মালিকদের লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, মাত্র তিন পয়সা ভাড়া কমানোর ঘোষণা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে আন্তঃজেলা রুটে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় কিলোমিটার প্রতি এক টাকা ৪৫ পয়সা। এর আগে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১৫ পয়সা করে বাড়িয়ে এক টাকা ৩৫ পয়সা করা হয়। ২০০৮ ও ২০০৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পর বাসের ভাড়া কমানো হলেও যাত্রী পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন না হওয়ার অভিযোগ যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আওতায় সাত জেলায় পরিবহনের ভাড়া কমবে না। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী। চট্টগ্রামেও বাস ভাড়া কমবে না। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এসব জেলায় সিএনজি চালিত গ্যাসে গাড়ি চলায় ভাড়া কমবে না। সিএনজি চালিত পরিবহনের জন্য পৃথক ভাড়া নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছেন তারা। ভাড়া কমানোর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জনকণ্ঠ’কে বলেন, প্রজ্ঞাপনে পরিবহন মালিকদের প্রস্তাবের প্রতিফলন হয়নি। মন্ত্রণালয় কোন রকম বৈঠক ছাড়াই প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এমন বাস্তবতায় আমাদের মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। তবে সরকারী এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভাড়া কমানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আমরা চাই না পরিবহন সেক্টরে অসন্তোষ দেখা দিক। আনুপাতিক হারে ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি। গত ২৫ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে অকটেন ও পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ১০ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেলের দাম তিন টাকা কমিয়েছে সরকার। তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর আগে বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। সে যুক্তি দেখিয়ে এবার ভাড়া কমানোরও দাবি ওঠে যাত্রী অধিকার আন্দোলনে যুক্তদের। অবশ্য যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’র মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুই বা তিন পয়সা ভাড়া কমিয়ে যাত্রীর কোন লাভ হবে না। এক্ষেত্রে দূরপাল্লায় তিন থেকে চার টাকা ভাড়া কমতে পারে। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এর কয়েকগুণ ভাড়া বৃদ্ধি হতো। এ ধরনের বৈঠক একটি আইওয়াশ বলেও মনে করেন তিনি। জ্বালানি তেলের দাম কমার পর দূরপাল্লায় বাস ভাড়া কমানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিভিন্ন মহলে দাবির প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন, তেলের দাম কমার পর ভাড়া কমানো হবে। লিটারপ্রতি এক টাকা জ্বালানি তেলের দাম কমলে কিলোমিটারপ্রতি এক পয়সা ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত কথা রাখেন তিনি। সিপিবির প্রত্যাখ্যান ॥ জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রেক্ষিতে দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৩ পয়সা কমানোর ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে ‘নামমাত্র’ হারে বাস ভাড়া কমানোর প্রস্তাব বিআরটিএ করেছে, তা হাস্যকর, অগ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবায়ন-অযোগ্য। এটা জনগণের সঙ্গে নির্মম তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জ্বালানির দাম বাড়লে বাস ভাড়া বাড়বে এক হারে, আর জ্বালানির দাম কমলে বাস ভাড়া কমবে তার চেয়ে অনেক কম হারে- এটা হতে পারে না। বিআরটিএর প্রস্তাবে শহরের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ভাড়া কমানোর কোন কথা নেই। দূরপাল্লার বাসভাড়া যে হারে কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, তা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়িত হবে না। ফলে জ্বালানির দাম কমার পরও, প্রকৃতপক্ষে জনগণকে আগের হারেই বাসভাড়া দিতে হবে। সিপিবির নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার অসাধু বাস-ট্রাক মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জনগণের প্রতি সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে জ্বালানির দাম কমার সুবিধা জনগণ পাবে না, সুবিধা পাবেন বাস মালিকরা। প্রতিবছর ৯৯০ কোটি টাকা চলে যাবে জ্বালানি তেলে চালিত বাস ও ট্রাকের মালিকদের পকেটে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জ্বালানির দাম আরও কমানো এবং দূরপাল্লার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অভ্যন্তরীণ রুটে সঙ্গতিপূর্ণ, যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হারে বাসভাড়া কমানোর দাবি জানান।
×