ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনা

সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে ঢাকায় কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৪ মে ২০১৬

সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে ঢাকায় কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে জনশক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পরিধি বাড়াতে তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ। মঙ্গলবার বিকেলে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় পৌঁছান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। পরে সফররত কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার ও লালগালিচা সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। বিমানবন্দরে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীও তার সফরসঙ্গীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রমুখ। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা ও কুয়েতের কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বিমানবন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়ার পর তাদের মোটরর‌্যালির মাধ্যমে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা সফরকালে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা হোটেল লা মেরিডিয়ানেই অবস্থান করবেন। তিন দিনের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এসেছেন দেশটির প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালেদ আল হামাদ আল সাবাহ, অর্থমন্ত্রী ও তেলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনাস খালেদ আল সাবাহ, শিক্ষামন্ত্রী ড. বদর হামাদ আল ইসা, বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী খালেদ সুলেমান আল জাহারাল্লাহ প্রমুখ। এছাড়া কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল এসেছেন। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ সফরকালে আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এশিয়ার পাঁচ দেশ সফরের অংশ হিসেবে প্রথমেই ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশের পর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও হংকং সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী এ সফরে এসেছেন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সুরক্ষা, সামরিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা সহজীকরণসংক্রান্ত তিনটি চুক্তি সই হবে। এরই মধ্যে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সুরক্ষা ও পাসপোর্ট বিষয়ে হতে যাওয়া চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা। এছাড়াও কুয়েত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জনশক্তি ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণসহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ, কুয়েতের অর্থায়নে তেল শোধনাগার স্থাপনসহ অন্য বিষয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে কুয়েতের অর্থায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কুয়েত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি শ্রমবাজার। তবে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়ার হার কমে গেছে। ১৯৭৬ থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ বাংলাদেশী শ্রমিকের কুয়েতে কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে ৭ হাজার ৬৫৮ নারী। ২০০৬ সালেও দেশটিতে ৩৫ হাজার ৭৭৫ বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবেশ করে। তবে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ধীরে ধীরে শ্রমিক পাঠানো কমে যায়। এ সংখ্যা এখন বাড়াতে চায় সরকার। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭৩ সালে কুয়েত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর এই দুই মুসলিম দেশের মধ্যে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার দৃঢ় ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেই আস্থা এখনও অটুট রয়েছে। এর আগে দুই দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়েত সফর করেন। রাশিয়া ও ইরান অব্যাহতভাবে তেল উত্তোলনের ঘোষণা দেয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন-চার বছর বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যের এই পতন অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েত এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহী। কম মজুরিতে দক্ষ কর্মী পাওয়া কুয়েতের অর্থনীতির জন্য অগ্রাধিকার হওয়ায় এমন কর্মী পাওয়ার জন্য বাংলাদেশই সবচেয়ে ভাল স্থান বলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি মনে করে। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী জাবের আল মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কুয়েতে বর্তমানে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত আছেন। দেশটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, নির্মাণ শ্রমিক নিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল মুবারক ঢাকা ত্যাগ করবেন।
×