ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ;###;’২২ সালের মধ্যেই রেল সংযোগ সম্পন্ন করতে হবে

পদ্মা সেতুতে রেল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ মে ২০১৬

পদ্মা সেতুতে রেল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ নয় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ হাজার ২৬৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। একনেকের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। একনেক বৈঠকে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন মূল্যে ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতু এবং ২০২২ সালের মধ্যে রেল সংযোগের কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোন যৌক্তিকতাই যেন সময় ও ব্যয় না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণের সুদ বিষয়ে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তাকে জানানো হয় কোন গ্রেস পিরিয়ড ছাড়াই ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে সুদের হার ২ শতাংশের বেশি হবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে বিদ্যুতের ম্যাপিং করার নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে আরইবি এবং পিডিবি যার যার এলাকায় সে কাজ করবে। ব্রিফিংয়ের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি বিদ্যমান ঢাকা স্টেশন হতে শুরু হয়ে গে-ারিয়া-মাওয়া-পদ্মা সেতু (নির্মাণাধীন)-ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত সংযুক্ত করবে এবং ভাঙ্গা জংশন হতে বিদ্যমান কাশিয়ানী জংশন স্টেশন হয়ে পদ্মাবিলা জংশন হয়ে বিদ্যমান রূপদিয়া এবং সিঙ্গিয়া স্টেশনকে সংযুক্ত করবে। ঢাকা-গে-ারিয়া সেকশনে ৩ কিলোমিটার ডবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ঢাকা-যশোর, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-দর্শনার মধ্যকার দূূরত্ব যথাক্রমে ১৮৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, ২১২ দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার, ৪৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার হ্রাস পাবে এবং যাতায়াতের সময়ও হ্রাস পাবে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় এত বেশি হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নতুন করে অনেক ভূমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম করতে হবে ফলে এত টাকা লাগবে। তা ছাড়া ব্যয়ের বিষয়ে আমি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে দেখেছি। ব্যয় ঠিকই আছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিঙ্ক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪ লেনে উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জাতীয় মহাসড়ক এন-৭ এর মাগুরা শহর অংশের রামনগর মোড় হতে আবালপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ৯৪ লাখটাকা। বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, সিলেট বিভাগ, ব্যয় এক হাজার ৮৯০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, ব্যয় ৫৩৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রাণী রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প (২য় পর্যায়), ব্যয় ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। উদ্যান তাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরন এবং চর এলাকায় উদ্যান ও মাঠ ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রকল্প, ব্যয় ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ১৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাক। বাংলাদেশ বেতারের মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র এক হাজার কিলোওয়াট মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটার স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় ৭৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের নতুন রুট নির্মাণ করা হবে। নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংযোগ প্রকল্পে চারটি সেকশনে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আড়াই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করে ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দিন থেকে রেল চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার। নতুন রুটটি হবে ঢাকা থেকে গে-ারিয়া হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার টাকা । এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণ ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং বাকি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, হাজার ৭০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৬৯ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ, ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং ও ৩ কিলোমিটার ডবলসহ মোট ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেল ট্র্যাক নির্মাণ, ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, এক দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র‌্যাম্বপস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, একটি হাইওয়ে ওভারপাস, ২৯টি লেভেল ক্রসিং, ৪০টি আন্ডারপাস, ১৪টি নতুন স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণ, ছয়টি বিদ্যমান স্টেশনের উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ২০টি স্টেশনে টেলিযোগাযোগসহ কম্পিউটার বেজ রেলওয়ে ইন্টারলক সিস্টেম সিগন্যালিং ব্যবস্থা এবং ১০০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ করা হবে। খুবির অভিনন্দন ॥ অন্যদিকে খুলনা অফিসের স্টাফ রিপোর্টার জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় এটিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। একই সঙ্গে তিনি অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ একনেকের সকল সদস্য ও ইউজিসিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
×