ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিবচর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা ॥ ঘর তৈরির হিড়িক

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৪ মে ২০১৬

টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা ॥ ঘর তৈরির হিড়িক

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে প্রাথমিক অবস্থাতেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিবচর উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর মৌজার অধিগ্রহণ করা জমিতে জমির মালিকরা নানা অনিয়ম ও চতুরতার আশ্রয় নিয়ে নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব করা হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী মহলের ছত্র-ছায়ায়। জানা গেছে, রেললাইনের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রাথমিকভাবে শিবচর উপজেলার বিভিন্ন মৌজার ২১৩.২৮১৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ ধারার নোটিস প্রদান করা হয় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে। পরবর্তীতে যৌথ তদন্ত শেষে করা হয়েছে। বর্তমানে ৬ ধারা চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতুর রেললাইন সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে শ্রেণী পরিবর্তন করে নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরির হিড়িক পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে ৫০ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় সক্রিয় চক্রটি অত্যন্ত তৎপর। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক নতুন ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। যার সম্ভাব্য মূল্য ১০ কোটি টাকা। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবির প্রস্তাবনা দাখিলের পায়তারা চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিপূরণের বিল দাখিল করা হবে ভিন্ন-ভিন্নভাবে, যাতে বড় অংকের টাকা কর্তৃপক্ষের চোখে না পড়ে। আর এসব কৌশল শিখিয়ে দিবে এলএ শাখার কেরানীরা, যারা রেলপথ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যাদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের বিল পরিশোধের সময় ১৫% নেয়ার অভিযোগ উঠেছিল, তাদের কেউ কেউ এখনও এল.এ শাখায় বহাল তবিয়তে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও মাস তিনেক আগে ফসলী জমি ছিল সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে কাঁচাবাড়ি আবার কোথাও দালান, কোথাও টিনশেড বাড়ি। ফসলী জমিতে পুকুর কেটে তৈরি করা হয়েছে মৎস্য খামার। আবার কোথাও নতুন ঘর তৈরি করে মুরগির খামারের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিলেও খামারে নেই মুরগি। এভাবেই বিভিন্ন এলাকায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কিছু অসাধু সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তাদের যোগসাযোশে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরির কাজ চলছে। অভিযোগে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে অধিগ্রহণ করার নির্ধারিত ফসলী ও জলাবদ্ধ পতিত জমি শ্রেণী পরিবর্তন করে ভিটা, আবার কাঁচা বাড়িঘরকে পাকা বাড়িঘরে কিম্বা টিনশেড বিল্ডিংকে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয়েছে। এতে লাভবান হবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী মহল, জমি এবং ঘরবাড়ির সুবিধাবাদী মালিক। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ৩ ধারা নোটিসের পর যদি তারা ৪০ তলা বিল্ডিংও করে তাহলে তারা ক্ষতিপূরণ পাবে না। ৩ ধারা নোটিসের পূর্বে আমরা ভিডিও করে রেখেছি। ওই ভিডিও অনুযায়ী ক্ষতি পূরণ পাবে।
×