ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মগের মুল্লুক নাকি!

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৪ মে ২০১৬

মগের মুল্লুক নাকি!

কথা ছিল বাস ভাড়া কমবে, তার পরিবর্তে কোথাও কোথাও বাড়ানো হয়েছে। তাও আবার শতকরা প্রায় তিরিশ ভাগ হারে। যুক্তি না মানার এবং স্বেচ্ছাচারিতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাস মালিকরা। ভাড়া কমানোর প্রস্তুতির মধ্যেই আরেক দফা বাড়ানো হলো দূরপাল্লার বাসের ভাড়া। ঘোষণা ছাড়াই দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই। সঙ্গত কারণেই এ নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত দুই দশকে পরিবহন ব্যবসায়ীরা ১৪ দফায় বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়েছেন ৪৫৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯ দফায়ই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে। সম্প্রতি ডিজেলের দাম তিন টাকা কমানো হয়েছে। নিয়মানুযায়ী কিলোমিটার প্রতি বাস-মিনিবাসের ভাড়াও কমবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশানুযায়ী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভাড়া পুনর্নির্ধারণে প্রস্তাব দিয়েছে। এরই মধ্যে মালিক সমিতি রক্ষণাবেক্ষণ, চালকের বেতনসহ ২১টি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে ভাড়া কমানোর পরিবর্তে আরও দাবি করেছে বাড়ানোর। ভাড়া বিশ্লেষণ কমিটির বৈঠকে দূরপাল্লায় প্রতি কিলোমিটার বাস ভাড়া তিন পয়সা করে কমানোর প্রস্তাব করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। পক্ষান্তরে তিন পয়সা কমানো হলে ব্যবসায় ক্ষতি হবে বলে যুক্তি উপস্থাপন করে পরিবহন মালিকরা দুই পয়সা কমানোর প্রস্তাব দেন। মালিকপক্ষ ‘এক পয়সা’ নিয়ে তাদের বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। কী অবাক কা-! সভা শেষে সভার সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে; সেখান থেকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে ৩০০ কিলোমিটারের জন্য বাস ভাড়া তিন পয়সা হারে কমানো হলে সর্বোচ্চ মাত্র নয় টাকা কমে। এতেও মালিকদের আপত্তি! কিন্তু কথা হচ্ছে বাসযাত্রীদের এমন কী সাশ্রয় হবে ওই মূল্য হ্রাসে? যাত্রীদের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে মালিকদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতাকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। মালিক-যাত্রী-পরিবহন শ্রমিকÑ সব পক্ষেরই স্বার্থের সুরক্ষা সরকারকে দিতে হবে। এই সুরক্ষাদানের বিষয়টিও হতে হয় ভারসাম্যপূর্ণ ও জনমুখী। যাত্রীসাধারণ যেখানে অসংগঠিত, অসহায়, সেখানে মালিক শ্রেণী প্রভাবশালী ও সংঘবদ্ধ। তাই সরকারকেই পরিবহন সেক্টরে সুষ্ঠু নীতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। যাত্রীসুবিধার দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রভাবশালী ক’জন রাজনীতিক গণপরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ফলে গণপরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরগুলোর ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থের কাছে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। তেলের দাম কমার সুবিধা অবশ্যই জনগণকে দিতে হবে। সেইসঙ্গে সরকারী সিদ্ধান্তের আগেই যারা বাস ভাড়া বাড়াতে চায় ও বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এই দেশটাকে যারা মগের মুল্লুক মনে করে তাদের প্রতি কোন করুণা নয়।
×