ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সর্বোচ্চ প্রাধান্য তিন বিষয়ে

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩ মে ২০১৬

এবার সর্বোচ্চ প্রাধান্য তিন বিষয়ে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত বাফুফের নির্বাচন শেষ। এবার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে দেশের ফুটবলে উন্নয়নের জন্য আবারও নতুন করে কাজ শুরু করার পালা। কথায় আছেÑ মুকুট পরার চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন। আগামী চার বছরের জন্য দেশের ফুটবলের ভার থাকছে কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের হাতেই। গত আট বছর তিনি সভাপতি ছিলেন। কিন্তু প্রশংসার চেয়ে ব্যর্থতার দায়ে সমালোচিতই হয়েছেন বেশি। এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ আগামী চার বছরের জন্য কী করবেন তিনি? নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলÑ সারাদেশে ফুটবল ছড়িয়ে দেয়া, শেরেবাংলা কাপ ও সোহরাওয়ার্দী কাপ চালু করা, ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক ফুটবল লীগ বিএসএল নিয়মিতভাবে আয়োজন করা, সব জেলা ক্লাবগুলোর সমন্বয়ে ক্লাব কাপ পুনরায় চালু করা ইত্যাদি। সোমবার সালাউদ্দিন তার পুরো প্যানেল নিয়ে সকালে যান ধানম-ির ৩২ নম্বর রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে। তারপর বনানী যান শেখ জামাল, শেখ কামাল ও শেখ রাসেলসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যদের কবর জিয়ারত করতে। সেখান থেকে সদলবলে দুপুরে চলে আসেন বাফুফে ভবনে। পরে নিজ কার্যালয়ে বসে মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমের। এ নিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন সালাউদ্দিন সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়ে। নির্বাচিত হয়ে সোমবারই প্রথম অফিস করেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রথমেই তিনি জানান, ‘তিনটি বিষয়ের ওপর এবার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেব। জেলা ফুটবল, ক্লাব ফুটবল এবং বাংলাদেশ জাতীয় দল।’ এছাড়া আগামী চার বছরে যাতে বাংলাদেশ এশিয়ায় টপ লেভেলে খেলতে পারে সে চেষ্টাই করবেন তিনি। সবশেষে কাউন্সিলর ডেলিগেটস এবং ভোটারদের ধন্যবাদ জানান বাফুফে সভাপতি। দায়িত্ব নিয়েই শুনেছেন একটা সুখবর। সোমবার ভারতকে ৪-০ গোলে হারিয়ে এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিনের ভাষ্যÑ ‘ফুটবল তো ২০৯ দেশ খেলে, চার-পাঁচটা দেশ খেলে না। এটা খুব সোজা কাজ নয়। আমরা কাজ আরম্ভ করেছি অনেক আগে থেকেই। চেষ্টা করেছি উন্নয়ন করতে। একটু সময় লাগবে। মেয়েদের অনুর্ধ-১৪ দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরকম অনুর্ধ-১৬ তেও ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমরা যে কাজগুলো করছি তার ফল আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এখন। আরও পাবেন।’ সালাউদ্দিন আরও যোগ করেন, ‘দুই-চারজন যদি না জেনে ফুটবল ফেডারেশনকে দোষারোপ করে টকশো করে, তাহলে সেটি দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। ধৈর্য ধরেন; আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত কমিটিতে যারা আছে, তারা সবাই আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড় এবং সংগঠক হিসেবে কমপক্ষে ২০-২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। আমাদের চেয়ে বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতাও কারও নেই; আগ্রহও নেই। আমাদের আগ্রহই হলো ফুটবল। এটি আমাদের রক্তেই।’ সালাউদ্দিনের গত চার বছরের মেয়াদে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ফুটবলেই সাফল্য বেশি। এর কারণ হিসেবে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘বিশ্বে মেয়েদের ফুটবলটা এখনও সেই পর্যায়ে যায়নি যেটা ছেলেদের ফুটবলে গেছে। তাই সেখানে প্রতিযোগিতা কম। তাই এখানে সাফল্য পাওয়াটা একটু সহজ। তাই বলে মেয়েদের কৃতিত্বকে মোটেই খাটো করছি না।’ পুরুষ জাতীয় দল নিয়ে এখন সালাউদ্দিনের ভাবনাÑ ‘গত দুই মাসে যে নাটক হয়েছে, এই নাটকে নিশ্চিত ছিলাম না যে ভোটাররা আমাকে আনবে কী আনবে না। যদি বিদেশের কোচের সঙ্গে আলাপ করে রাখি তারপর যদি না আসতে পারতাম সেটা বেকার হয়ে যেত। রবিবার রাত থেকে জাতীয় দল নিয়ে কিছু চিন্তা-ভাবনা করেছি যেগুলো আগামী দশ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করব।’ এবার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধান যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটি জেলা ফুটবল। আর এবার জেলা ফুটবলেই বেশি নজর দেবেন সালাউদ্দিন, সেরকমটাই নির্বাচনের আগে কথা ছিল। আগামী চার বছরে জেলা ফুটবলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটা কেমন থাকবে? সালাউদ্দিনের জবাবÑ ‘জেলা ফুটবলটা স্পেশাল। তাই বলে এতটা স্পেশাল নয় যে ক্লাবকে প্রাধান্য দেব না। ক্লাব এবং ফুটবলের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকবে। না হলে ফুটবলটা জাগবে না। যদি শুধু জেলা নিয়েই থাকি, তাহলে দেখা যাবে ঢাকায় কোন খেলা নাই, সে ফুটবলারগুলো কোথায় যাবে?’ যে ২৫টি নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে এবার বিজয়ী হয়ে এসেছেন, তার সবই পূরণ করতে চেষ্টা থাকবে সালাউদ্দিনের। তবে ব্যক্তিগতভাবে প্রধান তিনটি বিষয়ে প্রাধান্য দিতে চান সালাউদ্দিন। এগুলো হলোÑ জেলা, ক্লাব এবং জাতীয় দল। কিন্তু ফেডারেশন চালাতে গেলে দেশের সবকিছু করতে গেলে যে ২৫টি ইশতেহার দেয়া হয়েছে তার সবই করতে হবে। একাডেমি, স্কুলসহ সবই পূরণ করতে হবে। তবে ফুটবলের মূল সাফল্যটা আসবে জেলা ফুটবলের উন্নয়ন, ক্লাব এবং জাতীয় দল থেকে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আট বছর আগে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন খেলা হতো না। এখন খেলা হয়। সম্প্রতি জাতীয় দলের পারফর্মেন্সটা ভাল না। সার্বিকভাবে আমরা একটা স্টেজে চলে এসেছি; এখন ফাইনাল স্টেজে। আগামী চার বছরে ফুটবল পরবর্তী লেভেলে পৌঁছাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার স্বপ্ন আগামী চার বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে এশীয় মানে চলে যাবে।’ আগের মেয়াদে বাফুফের কমিটির অধীনে অনেক সাব-কমিটি ছিল। সেগুলোতে সালাউদ্দিন সম্পৃক্ত ছিল না। এবার থাকবেÑ ‘আমি চাই এবার কমিটি যেন কোন ফাঁকি দিতে না পারে, দিলে অন্য কাউকে আনা হবে। সবার মধ্যে দায়বদ্ধতা থাকবে। এটা যেহেতু আমার শেষ মেয়াদ, তাই আমি চাই এবার যেন কোন ভুল না হয়।’ ‘ভিশন ২০২২’-এর ধারণা থেকে একচুলও সরে আসেননি বলে জানান সালাউদ্দিন। এখন দেখার বিষয়, আগামী চার বছরে কথার সঙ্গে কাজের সমন্বয় করে দেশের ফুটবলকে উঁচু অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন কি-না সালাউদ্দিন।
×