রিজার্ভ চুরিতে জড়িত কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না ॥ সংসদে অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের বিচারবিষয়ক সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থের পুরোটাই (১৯ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) নিউইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জমা হয়েছে। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি দেশী বা বিদেশী যেই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সোমবার জাতীয় সংসদে প্রথমবারের মতো রিজার্ভের অর্থ চুরি বিষয়ে এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরীর শাওনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। অর্থমন্ত্রী জানান, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেয়ার প্রয়োজনীয় আইনী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে ফিলিপিন্স সিনেটের ব্লু রিবন কমিটি এএমএলসিকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সে দেশী বা বিদেশী যেই হোক না কেন, সম্ভাব্য সকল আইনের আওতায় তাকে আনা হবে। এ ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ফিলিপিন্সে পাঠানো চুরিকৃত অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটিতে অনুষ্ঠিত সকল শুনানিতে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। চুরিকৃত অর্থ উদ্ধারে ফিলিপিন্সের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এএমএলসির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ দশমিক ৮২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলিপিন্সের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এএলএমসিয়ের কাছে জমা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান গত ১৫ মার্চ পদত্যাগ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই জন ডেপুটি গবর্নরকে তাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অবসায়নক্রমে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সরকারদলীয় অপর সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের এ বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ঘটনা সম্পর্কে সরকার অবহিত হয়ে গত ১৫ মার্চ সাবেক গবর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অনুরোধ করা হয়। কমিটি ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ঘটনার স্পর্শকাতরতা এবং আন্তর্জাতিকতা বিবেচনা করে কমিটির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞ একটি ফরেনসিক টিমকে তদন্তে নিয়োজিত করেছে। ওই টিমের তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তা বিশ্লেষণ করে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় সরকার পদক্ষেপ নেবে।