ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩ মে ২০১৬

কিশোরগঞ্জের পাঁচ রাজাকারের মামলার রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের মামলার রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চার অভিযোগে শরীয়তপুরের দুই রাজাকার সোলায়মান মোল্লা (৮৪) ও ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের (৬৭) বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ২৯ মে তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলবীবাজারের বড়লেখা উপজেলা থেকে দুই রাজাকার আবদুল মান্নান (৬৫) ও আবদুল আজিজের (৫৫) বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে প্রসিকিউশন পক্ষ। আগামী ১৩ জুলাই চার্জ দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের দুই সহোদর এ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহম্মেদ ও ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদসহ পাঁচ রাজাকারের মামলার রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা এ মামলাটি সোমবার কার্যতালিকায় এলে বিচারক রায় ঘোষণার দিন ঠিক করে দেন।’ এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১১ এপ্রিল আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে। মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে শামসুদ্দিন ছাড়া সবাই পলাতক। বাকি চারজন হলেনÑ শামসুদ্দিনের ভাই সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মোঃ নাসির উদ্দিন আহম্মেদ, ‘রাজাকার কমান্ডার’ গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে আদালতে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি শামসুদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম মাসুদ রানা। পলাতক অপর চারজনের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান শুনানিতে অংশ নেন। শরীয়তপুরের দুই রাজাকার ॥ মুাক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চার অভিযোগে শরীয়তপুরের দুই রাজাকার সোলায়মান মোল্লা (৮৪) ও ইদ্রিস আলী সরদার ওরফে গাজী ইদ্রিসের (৬৭) বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগের শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৯ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা চার্জের ওপর শুনানি করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলোÑ প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২২ মে, আসামিরা পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড় শ’ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ প্রায় ২০০ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে ও বাড়ির মালামাল লুট করে। দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৬ মে জেলার পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলে করে হত্যা করে ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মালোপাড়া থেকে ৩০-৪৫ জন মহিলা ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তানী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে মহিলাদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করে। তৃতীয় অভিযোগ : জুন মাসে একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দু’জনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। চতুর্থ অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করে। মৌলভীবাজারের তিন রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলবীবাজারের বড়লেখা উপজেলা থেকে দুই রাজাকার আবদুল মান্নান (৬৫) ও আবদুল আজিজের (৫৫) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তিন রাজাকারের মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক রয়েছেন। চার্জ দাখিলের জন্য ১৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি। এ মামলার আসামি তিনজন হলেনÑ আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই মিয়া (৬৪), আব্দুল আজিজ ওরফে আবুল (৬৩) ও আব্দুল মতিন (৬১)। আসামিদের মধ্যে দু’জন আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মতিন সম্পর্কে সহোদর। তারা একাত্তরে ছাত্রলীগ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এ দুই সহোদর মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের বারপুঞ্জিতে যান। কিন্তু প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তারা পালিয়ে এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। অপর আসামি আব্দুল মান্নান একাত্তরে স্থানীয় মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন।
×