ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে দর্জি নিখিল হত্যায় আটক ৩ জন ৬ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ মে ২০১৬

টাঙ্গাইলে দর্জি নিখিল হত্যায় আটক ৩ জন ৬ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২ মে ॥ টাঙ্গাইলের গোপালপুরে দর্জি নিখিল চন্দ্র জোয়াদ্দারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে পৃথকভাবে ৬দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল গোপালপুর আমলী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কান্তি দাশের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষ দু’টি মামলায়ই তাদের জামিনের আবেদন করলে, আদালত তা নামঞ্জুর করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডকৃতরা হলো- গোপালপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম বাদশা (৫০), আলমনগর দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট ও দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার গোপালপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম (৩৮) এবং স্থানীয় বিএনপিকর্মী ঝন্টু মিয়া (৩০)। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, সংখ্যালঘু এক দর্জি নিখিলকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় রবিবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উক্ত তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। রবিবার সকালে গোপালপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোকসেদুল আলম বাদী হয়ে গোপালপুর থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একটি এবং শনিবার রাতে নিহত নিখিলের স্ত্রী আরতি রানী বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে গোপালপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা ও আতঙ্ক রিবাজ করছে। অপরদিকে রবিবার বিকেলে নিহত নিখিলের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। রোববার দুপুরে নিহতের পরিবারকে সান্ত¡না দিতে তার বাড়ি আসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। এ সময় তিনি বলেন, সরকারের যেন চৈতন্যের উদয় হয় এবং মানুষ যেন দেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সরকার যেন বাধা না হয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমরা আর কোন নিরীহ মানুষের মৃত্যু দেখতে চাই না। গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল ও এলাকাবাসী জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নিখিল চন্দ্র (৫০) ডুবাইল বাজারে তিথি তীর্থ বস্ত্রালয় এ্যান্ড টেইলার্সের সামনে তার ট্রেইলারিং দোকানে কাজ করছিলেন। এ সময় পূর্বদিক থেকে মোটরসাইকেলে করে ২০-২২ বছর বয়সী তিন যুবক দোকানের সামনে থামে। এর মধ্যে চালকের মাথায় হেলমেট পরা ছিল। যুবকদের একজন মোটরসাইকেল থেকে নেমে নিখিলকে দোকান থেকে ডেকে বের করে। কাছাকাছি আসামাত্র মোটরসাইকেল আরোহী অপর দুই যুবক ব্যাগ থেকে ছুরি ও চাপাতি বের করে নিখিলকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। যুবকরা তার বুকে, ঘাড়ে ও মাথায় ৭-৮টি কোপ দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় নিখিল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে খুনীরা মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে করে সূতি কালিবাড়ির দিকে চলে যায়। এ সময় ঘাতকরা একটি কাপড়ের ব্যাগ ফেলে যায়। খবর পেয়ে গোপালপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে সেখান থেকে পুলিশ ওই ব্যাগ থেকে স্কচটেপ মোড়ানো ৪টি ককটেল, দুইটি চাপাতি উদ্ধার করে। এলাকাবাসী জানায়, নিহত নিখিল বছরখানেক আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে ধর্ম নিয়ে তর্কের সময় হযরত মুহম্মদ (সঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন। পরে এলাকায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২ মে একটি মামলা হয়। সেই মামলায় নিখিল কারাভোগ করে। তারপর থেকে তিনি বিভিন্ন হুমকির মধ্যে ছিলেন। এ কারণেই হয়ত তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে পরিবারের লোকজন। এদিকে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে খবর প্রকাশ করা হয়। টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) জমির উদ্দীন জানান, জঙ্গী হামলা কিনা এখনই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এ হত্যাকা-ে জঙ্গীগোষ্ঠী ‘আইএস-এর দায় স্বীকার’ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশে আইএস-এর কোন অস্তিত্ব নেই। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এখন পর্যন্ত তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল জানান, হযরত মুহম্মদ (সঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলায় গত ২০১২ সালে ২ মে নিখিলকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন দর্জি নিখিল। পরে স্থানীয় ‘মুরুব্বিদের অনুরোধে’ ছয় মাস আগে মামলা তুলে নেন বাদী ও বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া আলমনগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম। নিখিল উগ্রপন্থীদের হাতেই খুন হয়েছেন কি-না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, নিখিল তার ভাতিজি স্বর্ণাকে দুই বছর আগে ঢাকা থেকে ডিভোর্স করিয়ে আনেন। তখন থেকেই স্বর্ণার সাবেক স্বামী রুদ্র এ পরিবারের সবাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল। এলাকার হারুন মিয়া নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নিখিলের দোকানের সামনে ধস্তাধস্তি দেখে তিনি এগিয়ে যান। তখন দুষ্কৃতকারীদের একজন রক্তমাখা চাপাতি দেখিয়ে তাকে বলে, আর সামনে এগোলে তাকেও জানে মেরে ফেলা হবে। চলে যাওয়ার সময় হামলাকারীরা একটি ব্যাগ ফেলে যায়। পরে ওই ব্যাগ থেকে ৪টি ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নিখিল জোয়াদ্দারের স্ত্রী আরতি রানী জোয়াদ্দার ও তার দুই কন্যা টুলটুলি জোয়াদ্দার এবং বন্যা জোয়াদ্দার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। দোকানের সাটারে ঘাতকরা রাতের আঁধারে নীল কালিতে লিখে রেখেছিল ‘আদালত তোমাকে জামিন দিলেও আমরা তোমাকে জামিন দেব না’। এ বিষয়টি নিখিলকে ভয়তাড়িত করে এবং নিজের গতিবিধি সীমিত করে ফেলেন। দু’একজন প্রতিবেশীকে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু ভয়ে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হননি বলে জানান নিহত নিখিলের পরিবারের সদস্যরা।
×