ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাওরানবাজারে ভয়াবহ আগুনে শত কোটি টাকার মাল ছাই

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩ মে ২০১৬

কাওরানবাজারে ভয়াবহ আগুনে শত কোটি টাকার মাল ছাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবিবার রাতে রাজধানীর কাওরানবাজারের হাসিনা মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে অন্তত ১৭০ দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৩ দোকান। আগুনে অন্তত ৩৫ লাখ নগদ টাকাসহ শতকোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। অগ্নিকা-ের কারণসহ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করতে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন জনতা ভবনের পেছনে ৫০ নম্বর প্লটে অবস্থিত হাসিনা মার্কেটে অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ঘটে। প্রায় আড়াই বিঘা সরকারী জমি লিজ নিয়ে মার্কেটটি গড়ে তোলা হয়েছে। ১৮৬ মালিকের নামে বরাদ্দ নেয়া জমিটির ওপর ১৮৩ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানই দোতলা। নিচতলায় দোকান। আর দোতলায় গোডাউন। দোকানের মধ্যে লেপ-তোষক, হলুদ মরিচ গুঁড়া করার কারখানা, কাঁচামালের আড়ত, ফলের আড়ত, বিকাশ এজেন্টের দোকান, সেলুন, মুদি দোকানসহ নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মার্কেটের ভাই ভাই বাণিজ্য বিতানের মালিক স্বপন জনকণ্ঠকে বলেন, আগুনে তার দুটি মুদি দোকান ও একটি বিকাশের দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। মার্কেটের মাঝামাঝি থাকা একটি মুদি দোকানে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট হয়। সেই শর্টসার্কিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোকানে আগুন লেগে যায়। এ সময় উত্তর দিক থেকে প্রচ- বাতাস বইছিল। বাতাসে আগুন ছড়িয়ে আশপাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করি। এদিকে আগুন লাগার পর পরই পুরো মার্কেটে বিদ্যুত চলে যায়। দেখতে দেখতে কয়েকটি দোকানে আগুন লেগে যায়। পনেরো থেকে ২০ মিনিট পর দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস বইতে শুরু করে। এরপর পুরো এলাকায় এলোমেলোভাবে বাতাস বইতে শুরু করে তখন সারা মার্কেটে আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ধাপে ধাপে আসে। দ্রুত গাড়িগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছলে এতবড় ক্ষতি হতো না। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তার সামনেই আগুন লেগেছে। তিনি নিজেও লোকজন নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যখন আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন, তখন প্রাণ বাঁচাতে সরে যান। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই। একটি বিকাশের দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলছিলেন, তার ছোটভাই আলাউদ্দিন দোকানে বসে ছিল। আগুন দেখে হতভম্ব হয়ে দ্রুত দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। দোকানে থাকা ৬ লাখ নগদ টাকা পুড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতি মার্কেটে থাকা প্রায় ১০ বিকাশের দোকানেরই। দোকানগুলোতে থাকা অন্তত ৩৫ লাখ নগদ টাকা পুড়ে গেছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, সবমিলিয়ে অন্তত একশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা পুরো বিষয়টি বিশেষভাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, অগ্নিকা-ের বিষয়টি তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক (অপারেশনস্) জহুরুল আমিন মিয়া, উপ-পরিচালক মোজাম্মেল হক, সহকারী পরিচালক ঢাকা মাসুদুর রহমান আকন্দ, উপ-সহকারী পরিচালক সালাহ উদ্দিন ও তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার তানহারুল ইসলামের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
×