ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস আল কায়েদার নামে টুইট বার্তায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩ মে ২০১৬

আইএস আল কায়েদার নামে টুইট বার্তায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের চেষ্টা

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে গত ৩ বছরে বিদেশী নাগরিক, শিক্ষক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, পুরোহিত, ধর্মযাজক ও পুলিশসহ প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর ৩৪ হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৩ ঘটনায় দায় স্বীকার করে টুইট বার্তা পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক দুই জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। আলোচ্য সময়ে ৩৪ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫ ও আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এসব হামলা ও হতাহতের ঘটনায় দেশীয় জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গীরাই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলোর নাম ব্যাবহার করছে। সর্বশেষ রাজধানীর কলাবাগানের জোড়া খুন ও রাজশাহীতে ভার্সিটি শিক্ষক ও টাঙ্গাইলের দর্জি খুনের ঘটনায়ও জঙ্গী সংগঠনের নামে টুইট বার্তা পাঠানো হয়েছে। একের পর এক এই ধরনের হত্যাকা-ের পর এই ধরনের টুইট বার্তা পাঠিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করানো হচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে রাজশাহীতে অধ্যাপক ও টাঙ্গাইলের দর্জি খুনের ঘটনায় খুনী গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ ও তদন্তকারীদের দাবি। রাজধানীর কলাবাগান জোড়া খুনের ঘটনায়ও তিনজন শনাক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে তদন্তকারী ও তদন্তের তদারককারীরা। কিন্তু কলাবাগান জোড়া খুনের তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এই ধরনের খুনের ঘটনা ঘটলেই দায় স্বীকার করে টুইট বার্তা দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা হচ্ছে। দেশ-বিদেশে জঙ্গী তৎপরতার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বরাবরই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কারা কিভাবে কোথা থেকে এই ধরনের টুইট বার্তা পাঠাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ব্যর্থতার জন্য একের পর এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত যেসব খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে তার মধ্যে ১৫ ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে আইএসের নাম। এর মধ্যে ১৪ ঘটনার সঙ্গে দেশী জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও তদন্তকারীরা। বিদেশী ও ভিন্ন মতাদর্শী হত্যার কয়েকটি ঘটনায় জেএমবির বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্যদিকে আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম, ৭, ৮, ১৩-সহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে দায় স্বীকারের ঘটনাগুলোর সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জঙ্গিদের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, কলাবাগান জোড়া খুনের পর সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজে যে ৩ জনকে দেখা গেছে বা চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের দেখলে কেউই বলবে না যে তারা কেউই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএস কিংবা আল কায়েদার আনসার আল ইসলামের জঙ্গী। কিন্তু তারপরও অনেকটা গায়ের জোরেই দেশী জঙ্গী সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা আছে এমন নাম ভাঙানোর ব্যবহার করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। রাজশাহীতে ভার্সিটি শিক্ষক, কলাবাগানের জোড়া খুন ও টাঙ্গাইলের দর্জি খুনের ঘটনায় এমনভাবে অপপ্রচার ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে যেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করানোর এটা এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্যে পর্দার অন্তরাল থেকে কোন রাজনৈতিক মহল থেকে কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×