ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে খালেদা জিয়া

৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩ মে ২০১৬

৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জোর করে ক্ষমতায় থেকে বর্তমান সরকার লুটপাট করছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, এ সরকার গত ৭ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মহান মে দিবস উপলক্ষে রবিবার বিকেলে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ অভিযোগ করেন। সরকারের মদদে দেশে ধারাবাহিক গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, খুন-গুমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকেরা জড়িত বলেই খুনীদের ধরা হচ্ছে না, তারা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ায়। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, সব গুম-খুনের হিসাব কড়ায়-গ-ায় দিতে হবে। দায় এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য এ সরকার সংবিধান সংশোধন করেছে, নতুন নতুন আইন করছে। নির্বাচনের নামে তারা ভোট কেন্দ্র দখল করে জোর করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। বিএনপির জনসমর্থন নেই বলে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ খ-ন করে তিনি বলেন, আমরা চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চাই না। তাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আপনি ক্ষমতা থেকে সরে নির্বাচন দিয়ে দেখুন বিএনপি ক্ষমতায় আসে কিনা। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা দেশকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে। দেশের মানুষকে মানুষ মনে করে না। তাই তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। এ সরকার কাঁচের ঘরে বসে মে দিবস পালন করে। এ সরকারের কাছে শুধু শ্রমিক কেন, নিজ দলীয় লোক ছাড়া কোন মানুষের অধিকার নেই। তাই নিজেদের অধিকার আদায়ে সবাইকে আন্দোলন করতে হবে, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মে দিবস রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের ইতিহাস। তাই মে দিবসের শিক্ষা নিয়ে আমাদের অধিকার আদায় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে না পেরে নাকি গুপ্তহত্যা করছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ কোথায়? নির্বাচন কী হয়েছে দেশে? বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যেতে চায় না, চোরাপথে ক্ষমতায় যেতে চায় না। সেজন্য বলছি, ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করুন। দেখা যাবে জনগণ কাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন, গুম-খুন বন্ধ না হলে বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করবে। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগকে মানুষ বিশ্বাস করে না। তারা যত উন্নয়ন করে তার চেয়ে বেশি চুরি করে। মানুষ কতো কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠায়। সে টাকা যদি আওয়ামী লীগ চুরি করে নেয়, তাহলে কী মানুষের কষ্ট বাড়বে না কমবে? তিনি বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা দখলবাজি করছে। তাই মানুষ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না বলে ক্ষমতায় থেকে তারা নির্বাচন করতে চায়। এ সরকার উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করে। এসব প্রকল্প পাসের পর কাজ না করে বরাদ্দকৃত অর্থ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাগাভাগি করে নেয়। তিনি বলেন, পানামা পেপারসে যাতে নাম না আসে, সেজন্য ক্ষমতাসীনরা এখন ধরাধরি করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা পাচারের জন্য সরকারকেই জবাবদিহি করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের কাগজপত্র শফিক রেহমানের কাছে ছিল, এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মুক্তি না দিলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে জয়কেও ভেতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন তাহলে সমতা আসবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন অব্যাহত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পদে ব্যাপক পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসানকে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে নিয়ে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে। সেনাবাহিনী থেকে এ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক পদে। সরকারের অন্যায় আদেশ-নির্দেশ তামিল করার পুরস্কার হিসেবে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ এ পদে বসানো হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসানকে। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রমোশন নয়, এ পুলিশ কর্মকর্তার থাকার কথা জেলখানায়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নৃশংস এই ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আবার জামাই আদরে জেলে রাখা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তাদের কোন বিচার হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে এ খুনের বিচার হবে না। তিনি বলেন, এ সরকার বিচার বিভাগসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা প্রতিদিন শুনছেন, বিএনপি নেই, বিএনপি শেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকারী দল এটা বলে যাচ্ছে। আজকে গরমের মধ্যে এই শ্রমিক সমাবেশ প্রমাণ করে, বিএনপি রাজপথেই আছে, মানুষের সঙ্গে আছে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা জনগণকে ভয় পান বলে কাচের ঘরে, এয়ারকন্ডিশনড ঘরে বসে শ্রমিক দিবস পালন করছেন। আপনারা কাচের ঘরে বসেই সব কিছু করবেন। বিএনপি সরকারের সময়ে পোশাক শিল্পসহ শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসেছে। তারা নির্বাচিত নয়। সেজন্য তারা অবাধে লুটপাট করছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সকল দল বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এ কারণেই তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। শেখ হাসিনা যে রকম, নির্বাচন কমিশনও সে রকম। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া বলেন, এ দেশের শ্রমিকরা আজ ভাল নেই। তাঁদের ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন হচ্ছে। এ সরকার শ্রমিকদের জন্য কিছু করছে না। রানা প্লাজায় নিহত-আহত শ্রমিকদের নাম ব্যবহার করে বহু টাকা উঠানো হয়। কিন্তু সেই টাকা শ্রমিকরা পায়নি। সে টাকা গেল কই? শ্রমিকদের ভাগ্যে সেই টাকা গেল না কেন? আওয়ামী লীগের এক নেতা দখল করা জায়গায় রানা প্লাজা গড়েছিলেন। সেই রানা প্লাজা ধসে শত শত শ্রমিক মারা যায়। অনেকে আহত হয়। এখনও অনেক নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজ পায়নি স্বজনরা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হয়েছিল অভিযোগ করে খালেদা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দেয়া হয়েছিল। জিয়া পরিবারকে তারা ধ্বংস করতে চেয়েছে। আমার মা নেই, বাবা নেই, বোন নেই, ছোট ছেলে নেই। আজ আমার একমাত্র ভরসা আপনারা, এদেশের জনগণ, শ্রমিক, কৃষক মেহনতি মানুষ। আসুন, দেশ রক্ষা করতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। শ্রমিক দিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ। দলের নেতাকর্মীরা লাল পতাকা এবং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিভিন্ন নেতাদের ছবি সম্বলিত রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে খ- খ- মিছিল নিয়ে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেয়। এ ছাড়া তারা দলীয় ও সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে মাতিয়ে তুলেন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। সমাবেশে খালেদা জিয়া পৌঁছানোর আগে মঞ্চের পশ্চিম দিকে সামনের অংশে বসা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে পানির বোতল ছোড়াছুড়ি হয়। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদল শাখা দুটি মেডিক্যাল ক্যাম্পে নেতাকর্মীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা ও পানি সরবারহ করে। জয়ের অর্থ পাচারের কথা জনগণ জেনে গেছে -নজরুল ॥ প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের অর্থ পাচারের কথা জনগণ জেনে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন সাংবাদিক শফিক রেহমানকে আটক করে না রেখে আলোচিত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিষয়টি তদন্ত করা হোক। সোমবার দুপুরে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে আমেরিকা -গয়েশ্বর ॥ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দুর্নীতির তথ্য শীঘ্রই আমেরিকা প্রকাশ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে অল কমিউনিটি ফোরাম নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, সরকার দেশকে বানাতে চেয়েছিল সিঙ্গাপুর কিন্তু বানিয়েছে আজিমপুর কবরস্থান। আজকে সবাই আক্রান্ত, চলছে ক্ষমতার রাজনীতি। কারণ একটাই ক্ষমতায় থাকলে বা ক্ষমতায় যেতে পারলে বিনা পুঁজিতে আয় করা যাবে। বিএনপির জন্য নতুন কারাগার তৈরি করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি জেলে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুস সালাম, আব্দুস সালাম আজাদ, কল্যাণ পার্টির সহ-সভাপতি সাহিদুর রহমান প্রমুখ।
×