ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩ মে ২০১৬

কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারী পর্যায়ে কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যোগাযোগ বাড়াতে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এই চুক্তি হলে কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। দুই দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায়োজনে ভিসা সুবিধা পাবেন। এছাড়া কোম্পানি আইনের বিভিন্ন ফির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব পুনর্নির্ধারণের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাবৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেতারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়াতে কোন আপত্তি নেই। তবে অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য থাকতে হবে। তিনি বলেন, খেতাবপ্রাপ্ত অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা হলেন শিক্ষিত এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তাদের দেড় শত বা দুই শত গুণ ভাতা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। সম্মান জানাতে তাদের অন্যন্য মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে বেশি ভাতা দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কথাও ভাবতে হবে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা বরং অনেকেই গরিব। তাই এটি যাচাই-বছাই করে পুনরায় উত্থাপন করতে বলা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রশংসা করে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। সূত্র জানায়, আগামী ৮ মে সামাজিক বেষ্টনী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন পেতে পারে। বৈঠকে এটি অনুমোদন পেলে আগামী জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে। সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রসঙ্গে আলোচনা শেষ হতেই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিচারক অপসারণ আইন প্রসঙ্গে বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে সরকার বিচারক অপসারণ আইন জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ড. কামাল হোসেন এর বিরোধিতা করছেন। তিনিই তো ‘৭২ এর সংবিধানে এটি রেখেছিলেন। তা হলে তিনি কেন আবার এর বিরোধিতা করছেন? আইনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালতে শুনানির সময় ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিচারক অপসারণ আইন ভারতে যেভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে সেভাবে করতে আমাদের সমস্যা কি? তিনি এখন কেন বিরোধিতা করছেন এটিই এখন সকলের প্রশ্ন। তবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কোন মন্তব্য করেননি বলে সূত্র জানিয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এলে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে এই চুক্তি প্রণয়নে কাজ শুরুর পর ২০১৫ সালে কুয়েত খসড়া দেয়। বেশ কয়েকটি সভার পরে গত ১১-১৩ এপ্রিল ঢাকায় বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়াতেই মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। শফিউল আলম বলেন, কুয়েত সরকার জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে। কুয়েতে ভিসা লাগবে না সরকারী কর্মকর্তাদের ॥ বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা অব্যাহতির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাবেও মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ চুক্তি হলে কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন। কুয়েতের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরাও বাংলাদেশে এ সুযোগ পাবেন। বর্তমানে ১৪টি দেশের সঙ্গে কূটনীতিক, বিশেষ ও সরকারী পাসপোর্টধারীদের এই ভিসা অব্যাহতির সুবিধা চালু আছে। এছাড়া সিআইপি (কমার্শিয়ালি ইমপরটেন্ট পারসন) বা বিশেষ সংস্থার প্রতিনিধিসহ আরও কিছু ব্যক্তি ‘বিশেষ পাসপোর্ট’ ব্যবহার করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চীন, চিলি, তুরস্ক, লাওস, বেলারুশ, ব্রাজিল ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে। আরও ১০টি দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রায় দ্বিগুণ বাড়ছে কোম্পানি ফি ॥ কোম্পানি আইনের তফসিল পরিবর্তন করে বিভিন্ন ফির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। এতে দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনসহ সব ধরনের ফিস (কর বহির্ভূত রাজস্ব) বাড়ছে। এই ফিস পুনর্নির্ধারণের ফলে ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী এই ফিস পুনর্নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের দুই নম্বর তফসিল অনুযায়ী ফিস পরিবর্তন আনা হয়েছে। আট বছর পর কোম্পানিগুলোর ফিস পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এর আগে একবার পুনর্বিন্যাস করা হয়। আট বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেক বড়, তাই রাজস্ব সংগ্রহে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ॥ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশনে (ইলেকট্রিসিটি) অনুসমর্থনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কনসার্ন সিগনেটরি সই করলে এটা কার্যকর করব। রেলওয়ে সম্পত্তি আইন ॥ রেলের সম্পত্তি চুরি বা অবৈধ দখল ঠেকাতে আগের মতোই সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান রেখে নতুন ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সামরিক সাশনামলে প্রণীত আইনগুলোকে বাংলায় ভাষান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকায় ১৯৭৯ সালের এ আইনকে নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগের আইনকেই বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির পরিমাণও একই রাখা হয়েছে।
×