ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীন নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনা

ভারত মহাসাগরে নয়া দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৩ মে ২০১৬

ভারত মহাসাগরে নয়া দ্বন্দ্ব

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে সাবমেরিন খুঁজে বের করার কাজে একে অপরকে সহায়তা করতে আলোচনা চালাচ্ছে। সামরিক কর্মকর্তারা এ কথা জানান। এ পদক্ষেপ চীনের সমুদ্রের তলভাগে তৎপরতা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লী ও ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও দৃঢ় করতে পারে। খবর ইয়াহু নিউজ ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। চীনা নৌবাহিনীর পাল্লা ও অভিলাষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এমনই উদ্বিগ্ন। সেই নৌবাহিনীর দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রদর্শন করছে এবং ভারত মহাসাগরে ভারতের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। আমেরিকার সঙ্গে মৈত্রী গড়তে সাড়া দিতে কয়েক দশকের আস্থা ছেড়ে নয়াদিল্লী গত মাসে এর সামরিক ঘাঁটিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুলে দিতে সম্মত হয়। এর বিনিময়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র প্রযুক্তি সুযোগ পাবে, যা চীনের সঙ্গে ব্যবধান কমাতে সহায়ক হতে পারে। দু’পক্ষ আরও জানায়, তাদের নৌবাহিনীগুলো সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধকলা (এএসডব্লিউ) নিয়ে আলোচনা করবে। এক্ষেত্রে এমন সব সংবেদনশীল সামরিক প্রযুক্তি ও গভীর কৌশল জড়িত, যা কেবল মিত্ররাই আদান-প্রদান করে থাকে। এসব ধরনের মৌলিক আলোচনা নৌবাহিনীর সঙ্গে নৌবাহিনীর স্থায়ী সম্পর্ক গড়ার ভিত্তি হবে। এ সম্পর্ক যথাসময়ে এএসডব্লিউ চালানোর অভিন্ন সামর্থ্যে উন্নীত হবে। ভারত যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল এক মার্কিন কর্মকর্তা একথা বলেন। তিনি তার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হন। ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি তিন মাসে গড়ে চার বার চীনা সাবমেরিন চোখে পড়েছে। কোন কোন সাবমেরিন ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের কাছেও দেখা গেছে। এসব দ্বীপপুঞ্জ মালাক্কা প্রণালীর কাছে অবস্থিত। এ প্রণালী দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবশেপথ। চীনের জ্বালানির শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি এ সাগর দিয়ে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই নতুন সংস্করণের পি-৮ বিমান ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে সাবমেরিন অনুসন্ধানের খুবই সূক্ষ্ম কাজ সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করা অপেক্ষাকৃত সহজতর হয়। দুটি দেশ ইতোপূর্বে যৌথ নৌমহড়াও চালায়। পি-৮ ওয়াশিংটনের সবচেয়ে উন্নত সাবমেরিন সন্ধান অস্ত্র। এটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সেন্সর, যা সোনার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে সাবমেরিন খুঁজে বের ও চিহ্নিত করতে পারে। প্রস্তাবিত সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধ সহযোগিতা নিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনীর মুখপাত্র কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু আলোচক সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ভারতীয় নৌবাহিনীর এমন এক সূত্রে বলা হয়, পরবর্তী যৌথ নৌ-মহড়ায় সাবমেরিন বিধ্বংসী যুদ্ধকলার দিকেই দৃষ্টি দেয়া হবে। সেই মহড়া ফিলিপিন সাগরের উত্তর অংশে জুন মাসে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপানও ওই মহড়ায় অংশ নেবে। জাপানের সাবমেরিনগুলোও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনা সাবমেরিনের খোঁজ পেয়েছে। এদিকে ভারত তার পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী নিজস্ব নির্মিত প্রথম সাবমেরিন সাগরে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক যেমন মার্কিন এ্যাটাক সাবমেরিন প্রশান্ত মহাসাগরে চীন পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত সাবমেরিনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে, তেমনি চীনারাও ভারতীয় টহল দাবির ওপর দৃষ্টি রাখতে ভারতীয় মহাসাগরে বেশি সংখ্যায় তাদের নিজস্ব এ্যাটাক সাবমেরিন পাঠাবে বলে মনে করা হয়। সিঙ্গাপুরের রাজারতœম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ কলিন কোহ বলেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন সাবমেরিনের আনাগোনা ও নজরদারি ক্রমশ বেশিমাত্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোহ বলেন, ভারত মহাসাগরের বিশেষজ্ঞ মালাক্কা প্রণালী ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ অভিমুখী পথগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতেও দেখবে। কাজেই ওই অঞ্চলে সাবমেরিন শক্তি অধিকারী বড় দেশ ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
×