ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহৃদয় উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৩ মে ২০১৬

সহৃদয় উদ্যোগ

সমাজের বিত্তহীন বিচারপ্রার্থীদের বিচারপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা এবং বিনা বিচারে আটক থাকার দুর্ভোগ সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আন্তরিক সহৃদয় উচ্চারণ তেমন শোনা যায় না। বৃহস্পতিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তাই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘বিচার চাওয়ার অধিকার সকলেরই রয়েছে। সমাজের সবাই বিচার চাওয়ার অধিকার পেলে অবহেলিত-নিম্নবিত্ত মানুষরা কেন পাবে না? মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যাতে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে থেকে কষ্ট না পায়।’ অতীতেও দেখা গেছে জাতীয় আইন সহায়তা দিবস উদযাপনকালে মানুষকে নানাভাবে দুস্থ বিচারপ্রার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ানোর আবেদন ধ্বনিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে নির্ধারিত সেøাগানের ভেতরও বার বার বর্তমান সরকারের হৃদয়তা ও সহানুভূতির প্রকাশ ঘটছে। ‘গরিব-দুঃখীর বিচার পাওয়ার অধিকার, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার’, ‘গরিবের মামলার ভার বহন করে সরকার’- এসব শুধু কথার কথা হয়ে ওঠেনি। স্মরণযোগ্য যে সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী’। সংবিধানের ১৯নং অনুচ্ছেদে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে: ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে’। বিশ্বখ্যাত ‘ক্রাইম এ্যান্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাস বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দারিদ্র্যপিষ্ট সমস্যা জর্জরিত এক যুবককে নিয়ে। সমাজ উদ্ধারের পথিকৃৎ হওয়ার তাড়না থেকে সে খুন করে সম্ভাবনাহীন জীবনযাপন করা এক পুঁজিপতি বৃদ্ধাকে। পুলিশের চোখকে সে ফাঁকি দিতে সমর্থ হলেও শুরু হয় তার অন্তর্দ্বন্দ্ব। বলাবাহুল্য অপরাধবোধ, অপরাধপ্রবণতা আর অপরাধ সংঘটিত করে ফেলা এক পাল্লায় মাপা হয় না। কারাগারে গিয়ে নিজেকে সোনার মতো পুড়িয়ে শুদ্ধ হয়ে, নতুন উপলব্ধি আর জীবনবোধ নিয়ে প্রকৃত মানব হয়ে ফিরে আসার সুযোগ কয়জনের জীবনে মেলে? জেলবাস না হোক, যিনি কখনও পুলিশের হাতে আটক হয়ে কয়েক ঘণ্টা হাজতবাসও করেননি, তার পক্ষে অন্তরীণ হওয়া কিংবা বন্দিত্ব থেকে মুক্তির অনুভূতিটি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আর যাদের ভাগ্যে জুটেছে বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটক থাকার অপরিসীম কষ্ট- তাদের কল্যাণের কথা তেমনভাবে এর আগে কোন সরকার ভাবেনি। আশার কথা, সহায়সম্বলহীন ও নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী মানুষকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সরকার আইনগত সহায়তা দিতে শুরু করেছে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষ ছাড়াও এ কার্যক্রমের আওতায় বিচারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন এসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও দুস্থ নারী, বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, পাচার হওয়া নারী ও শিশু এবং আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম যে কোন নাগরিক। ‘সরকারী আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা যে কেউ বিনা মূল্যে আইনগত সেবা নিতে পারবে। এছাড়া ইতোপূর্বে প্রতিটি জেলা জজ আদালত ভবনে একটি ‘লিগ্যাল এইড অফিস’ স্থাপন করা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দাতাগোষ্ঠী, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান তাঁর সরকারের আন্তরিকতারই প্রকাশ, যা প্রশংসনীয়।
×