ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাণীনগরে কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি কাটছে ইট ভাটার মালিকরা

প্রকাশিত: ০২:২১, ২ মে ২০১৬

রাণীনগরে কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি কাটছে ইট ভাটার মালিকরা

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ॥ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রায় ১০টি ইট ভাটার মালিকরা ফসলি জমি থেকে অবাধে মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করছে। নির্বিচারে কৃষি জমি থেকে এভাবে মাটি খননের ফলে তিন ফসলের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মাঠে মাঠে জমির উর্বরাশক্তি আর বিলুপ্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র। বর্ষাকালে উম্মুক্ত ধানী জমিগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও সেখানে বুনা, আমন ও উচু জমিতে বোরো ধান হয় বছর জুড়ে। নিম্মাঞ্চলের জলরাশিতে পাওয়া যেতো দেশি প্রজাতির নানা রকমের সুস্বাদু মাছ। এক শ্রেণীর মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। মাছের লোভে নানা প্রজাতির পাখি এসে বিচরণ করতো। ইট ভাটার মালিকদের ফসলী জমি থেকে মাটি কাটার আগ্রাসী মনোভাবের কারণে মারাত্মক ভাবে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাণীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল ছাড়া প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরণের ফসল চাষ করে কৃষকরা। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত কৃষিজাত পন্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণীর কৃষকরা ভাটা মালিকদের লোভনীয় অফারে কোন কিছু খরচ ছাড়াই প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) মাটি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করছে। এতে এক ফুট গর্ত করে প্রতি বিঘায় প্রায় ১৭ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করছে কৃষকরা। ফলে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে আবাদী কৃষি জমি থেকে মাটি খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলী জমি। অন্যদিকে উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। সেখানে সামান্য বৃষ্টিতে সৃিষ্ট হচ্ছে স্থায়ী জলবদ্ধতা। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা অবদি প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর মাটি কেটে ভাটায় পৌঁছে দেয়ার কাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উপজেলার কাশিমপুর, হরিশপুর, নগর বালুর ঠিকি, রামরায়পুর, মন্ডলেরপুল, খট্টেশ্বর হাদিপাড়া এলাকায় কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি কেটে ইট ভাটার মালিকরা ইট তৈরি কাজে ব্যবহার করছে। মাটি কাটার প্রভাবে চলতি বোর্ োমৌসুমে ১৯ হাজার ৪শ’ ১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও শুধু ইট ভাটায় কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হয়েছে। এর মাত্রা বাড়তে থাকলে আগামী রোপা-আউশ মৌসুমে ধান উৎপাদন ধীরে ধীরে আরও মারাত্মক ভাবে কমে যেতে পারে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশংকা করছে। উপজেলার ভাটার মালিকরা ভাটার সামনে মাটি পাহাড়ের মত উচু করে মজুত করে রাখছে। বর্তমানে ধান চাষ করে কৃষকরা তেমন লাভবান না হওয়ায় অধিক লাভের জন্য তারা মাটি কেটে বিক্রি করতে করতে এক সময় কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে পুকুর ও ছোট ছোট ডোবা বানিয়ে মাছ চাষে দিকে আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। এব্যাপারে কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবু জানান, উপজেলার অধিকাংশ ইট ভাটাই আমার ইউনিয়নে। ভাটার মালিকরা ইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত প্রধান উপকরণ মাটি ফসলী জমি থেকে কৃষকদের লোভনীয় অফার দিয়ে অবাধে কেটে নেয়ার ফলে ওই জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে এবং আশানুরুপ ফসল না হওয়ায় পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, কৃষি জমি থেকে অবাধে মাটি কেটে গর্ত করার ফলে ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উর্বরতাশক্তি কমে যাওয়ার ফলে এই জমিতে আর আশানুরুপ ফলন হবে না। এক পর্যায়ে এই জমিগুলোতে ফসল কম হওয়ার কারণে চাষিদেরও আগ্রহ কমে যাবে। তাই যত তারাতারি সম্ভব এই ধরণের কর্মকান্ড বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে সার্বিক উৎপাদনে মারাতœক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
×