ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সালাউদ্দিনের হ্যাটট্রিক

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১ মে ২০১৬

সালাউদ্দিনের হ্যাটট্রিক

রুমেল খান ॥ শনিবার। মধ্য বৈশাখের পড়ন্ত বিকেল। ঘড়িতে ৫টার কাটা অতিক্রম করে গেছে। স্থান হোটেল র‌্যাডিসন। কিছুক্ষণ আগেই বহুল আলোচিত বাফুফের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। জানা গেছে, বাফুফের ইতিহাসে এই প্রথম শতভাগ ভোট (১৩৪) কাস্টিং হয়েছে। জানা গেল, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সবার আগে ঘোষণা করা হবে সভাপতি প্রার্থী পদে ভোটের ফল। এর অনেক আগেই ফল ঘোষণা করা হলো। মাইকে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার। এর পরেই সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিস্থিতির। সভাপতি পদে টানা তৃতীয় বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হলেন সম্মিলিত পরিষদের কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। বাঁচাও ফুটবল পরিষদের কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপির বিরুদ্ধে সম্মিলিত পরিষদের কাজী মোঃ সালাউদ্দিন জিতলেন ৩৩ ভোট বেশি পেয়ে (সালাউদ্দিন ৮৩ ভোট, পোটন ৫০ ভোট, ১টি ভোট বাতিল হয়। এর আগে সভাপতি পদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী হেলাল এবং নুরুল ইসলাম নুরু। হেলাল সমর্থন করেন সালাউদ্দিনকে এবং নুরু সমর্থন করেন পোটনকে। ফলে এরা কোন ভোট পাননি। জয়ের ঘোষণা শোনামাত্র একে অপরকে জড়িয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন টানা আট বছর ধরে বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা সালাউদ্দিন। আবেগের আতিশয্যে কেঁদে ফেলেন তিনি। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দুপুর ২টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণ চলে প্রায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ। বিজয়ী হওয়ার পরপরই সালাউদ্দিনকে অভিনন্দন জানান যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এবারের বাফুফে নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১৩৪ জন। এর মধ্যে জেলার ভোটার ৬৭, ক্লাবের ৫৩, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬, শিক্ষা বোর্ডের ৫, রেফারি এ্যাসোসিয়েশন, কোচেস এ্যাসোসিয়েশন ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ১ জন করে ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই নির্বাচন উপলক্ষে দেশজুড়ে পরিলক্ষিত ছিল টান টান উত্তেজনা। নির্বাচনের আগে সালাউদ্দিনের ওপর অনেক চাপ ছিল। তাকেসহ তার প্যানেলের প্রার্থীদের ফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য। এজন্য একটি হোটেলে নিজ প্যানেলের প্রার্থী পরিচিতি সভার অনুষ্ঠানও করতে পারেননি তিনি। নিরাপত্তার হুমকি, অর্থের প্রলোভন ছিল। বিভিন্ন গুঞ্জন ছিল। হয়তো সভাপতি পদটা আর পাচ্ছেন না সালাউদ্দিন। কিন্তু সব আশঙ্কা ও গুজবের অবসান ঘটিয়ে ভোটের খেলায় জিতলেন সালাউদ্দিনই। খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকবারই হ্যাটট্রিক করেছেন দেশীয় ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। এবার হ্যাটট্রিক করলেন বাফুফে সভাপতি হিসেবে। অনেকেই বলছেন সালাউদ্দিনকে হুমকি দেয়া, চাপে রাখা ... এসব ঘটনা সালাউদ্দিনের পক্ষে গেছে। সালাউদ্দিনের জয় নিশ্চিত হবার পর হোটেলের লবিতে আবেগে আপ্লুত সালাউদ্দিনের মেয়ে কাজী সারাজিন বলেন, ‘এই জয়ে আমরা দারুণ খুশি। সকালে বাবাকে বলেছি আব্বা তুমিই জিতবে। তিনি কিছু বলেননি। চুপ হয়ে ছিলেন। একদম পাথরের মতো! আব্বা যখন খুব চিন্তিত হয় তখন এমন চুপ হয়ে যায়। আমি বলেছি এই নোংরামি কিছু না। এই নোংরামি এড়িয়ে চল। তুমি তুমিই!’ সারাজিনের ইংরেজ স্বামী এ্যালেক্সকেও এর আগে এতটা খুশি দেখা যায়নি। কিছু বলতে চাননি। শুধু হেসেছেন প্রাণ খুলে। হেরে যাবার পরও পোটন অভিনন্দন জানিয়েছেন কাজী সালাউদ্দিনকে, ‘সালাউদ্দিনকে অভিনন্দন। সকালেও চিন্তা করেছিলাম আমিই জিতবো। জিততে পারিনি। তবে ফুটবলের উন্নয়নে সালাউদ্দিন যদি আমাকে সঙ্গে রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই থাকতে রাজি আছি। তবে আপনার বাড়িতে আপনি (সালাউদ্দিন) দাওয়াত দেবেন কি না সেটি তো আপনার ইচ্ছা। আমার ব্যক্তিগতভাবে সঙ্গে থাকার ইচ্ছা আছে।’ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। ২০০৮ সালে প্রথম এবং ২০১২ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর আগে ১৯৭২-২০০৭ সাল পর্যন্ত বাফুফেতে যতগুলো কার্যনির্বাহী কমিটি দায়িত্ব পালন করেছে, সেগুলোর সবগুলোই ছিল সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত। পরে বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে। সেটা হলো কোন দেশে ফুটবল ফেডারেশনে সরাসরি নির্বাচন হবে, এখানে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এর আগে ২০১২ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন সালাউদ্দিন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন আব্দুর রহিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সালাউদ্দিন ৬২-৪৯ ভোটে হারিয়েছিলেন মেজর জেনারেল (অব) আমিন আহমেদ চৌধুরীকে।
×