ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আগামী দু’একদিনের মধ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ মে ২০১৬

বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আগামী দু’একদিনের  মধ্যে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে আগামী দু’দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও সামান্য হ্রাস পায়। কিন্তু অধিদফতরের পূর্বাভাসেও আস্থা পাচ্ছে না দেশবাসী। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ার কথা বলে যাচ্ছে আবহাওয়া অধিদফতর। শুধু তাই নয়, এপ্রিলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও ছিল। কিন্তু পুরো এপ্রিলে সিলেট ছাড়া দেশের কোথাও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। দাবদাহে পুড়ছে সারাদেশ। হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শনিবার হিটস্ট্রোকে রাজধানীর কাওরানবাজারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে ঘণ্টায় গড়ে ২৫ জন নতুন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। মে মাসের জন্যও তীব্র তাপপ্রবাহ, নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। গত মার্চে সারাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৪৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর এপ্রিলে সাতটি বিভাগে মোট এক হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে মাত্র দু’শতাধিক মিলিমিটার। এর বেশিরভাগ হয়েছে সিলেট বিভাগে। অন্য ছয়টি বিভাগ পুড়ছে তাপপ্রবাহে। তাপপ্রবাহ ও প্রখর রোদের পাশাপাশি দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাসের কারণেও অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, গত এক মাস ধরে অস্বাভাবিক আচরণ করছে আবহাওয়া। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সূত্রটি আরও জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে এক থেকে দুটি নিম্নচাপ। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত দুই থেকে তিন দিন বজ্রসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং দেশের অন্যত্র তিন থেকে চার দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসেও থাকবে তাপপ্রবাহ। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দুই থেকে তিনটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে অতি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা আছে। মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ২৯৭ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৩১০ মিমি, সিলেটে ৫১০ মিমি, রাজশাহীতে ১৮৮ মিমি, রংপুরে ২৫০ মিমি, খুলনায় ১৬৯ মিমি ও বরিশালে ২৬০ মিলিমিটার থাকতে পারে। এদিকে, রাজধানীর কাওরানবাজারে হিটস্ট্রোকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তেজগাঁও থানার এসআই মোঃ ফরিদ জানান, শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কাওরানবাজার কাঁচামালের আড়তের সামনে অজ্ঞাত (৫৫) এক ব্যক্তি অতিরিক্ত গরমে মাথা ঘুরে পড়ে যান। পরে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লোকটির পরনে লুঙ্গি ও সাদা গেঞ্জি ছিল। শনিবার সন্ধ্যার সময়ও তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি। ঢামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মশিউর রহমান জানান, অতিরিক্ত গরম এবং পানিশূন্যতার কারণে হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তার লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মে মাসেও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন আবহাওয়াবিদরা। এমন অবস্থায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। গত বছর এমন সময়ে হিটস্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। রাজধানীতে ইতোমধ্যে তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়লে ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর সংক্রমণের ক্ষমতা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়ামুক্ত থাকতে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। অতি প্রয়োজন না হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে কাজ করার সময় মাথা ও শরীরে ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণ তরলজাতীয় কিছু খেতে হবে। ঢিলেঢালা পোশাক বিশেষ করে সুতি কাপড় পরিধান করতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়াচ্ছন্ন স্থানে শুইয়ে দিতে হবে। ঠা-া পানি (রেফ্রিজারেটরের পানি নয়) নিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এতে উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও ইউনিট প্রধান ড. মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই এ দেশের মানুষের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। যতটা সম্ভব প্রখর রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। বেশিমাত্রায় পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আবহাওয়া অফিসের পরামর্শও প্রায় একই। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের তাপমাত্রা এ দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এর উপরে চলে গেলে তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা সহ্য করতে এ দেশের মানুষ অভ্যস্ত নন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা যাবে না। প্রচুর পরিমাণ তরলজাতীয় বিশেষ করে ‘ওরস্যালাইন’ খেতে হবে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। আর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে ছায়ায় নিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। এতে আক্রান্তের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের আগে শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার বেশি থাকবে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। বমি বমি ভাব দেখা দেবে। মাথা ঘুরতে থাকবে। প্রস্রাব কমে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তের চাপও কমে যাবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই ছায়াচ্ছন্ন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিশেষ সতর্ক থাকার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি।
×