ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসন করুন ॥ খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ মে ২০১৬

আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসন করুন ॥ খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে গণতন্ত্র, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও বৈধ সংসদ নেই অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশ-জাতির এক গভীর সঙ্কটকাল চলছে। এভাবে বেশি দিন চলা যায় না। আমি মনে করি বর্তমান শাসকেরা এভাবে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদের বলব, দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করুন। দেশের অভ্যন্তরে যে সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না। শনিবার বিকেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৬তম জাতীয় কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সংসদে কোন কার্যকরবিরোধী দল নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। আজ দেশে সুশাসন নেই। সুবিচার নেই। রাষ্ট্রীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আইনের শাসন নেই। নেই কোন মানুষের নিরাপত্তা। সরকার কাউকে কোথাও কোন নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তবুও দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে থেকে জাগপা দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার কায়েমের সংগ্রামে সাধ্যমতো ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাগপার নেতাকর্মীরাও কারা নির্যাতন ও জুলুম-অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। জাগপা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দল হিসেবে জাগপা ছোট হতে পারে। কিন্তু দেশ-জাতির সঙ্কটের সময়ে আপনারা যে দেশপ্রেম ও সাহসের পরিচয় দিচ্ছেন তা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। তাদের রাখা হয়েছে গণবিচ্ছিন্ন করে। সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচারবহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশের সন্ধানও মিলছে না। জুলুম, নির্র্যাতন, গ্রেফতার, হামলা, মামলা চলছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে কোন সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত তিন মাসে পত্রিকার হিসেবে দেড় হাজার লোক খুন হয়ে গেছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লাখো কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের ৮শ’ কোটি টাকা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। দফায় দফায় অবিশ্বাস্য রকমের ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক, দূতাবাস কর্র্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরনের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে। আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর নামে এসব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বর্তমান সরকার বৈধ নয়। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা তো তারা দখল করে রেখেছে। কাজেই নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব তাদেরই পালন করতে হবে। তারা সে দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। তারা বলছে, সকলকে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। এই কথা বলে এভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে কারও ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুবিচার ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শান্তি ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য যে সেখানে আছেন সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে। তিনি বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে স্বাধীনতাকে সব মানুষের জীবনে অর্থবহ করে তুলতে হবে। আমরা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও মৈত্রীর সম্পর্ক চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের সঙ্গে সব সমস্যা নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। তবে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা সবকিছুই করব সমমর্র্র্যাদার ভিত্তিতে। আমরা কারও কাছে মাথা নত করব না। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কোন গণভিত্তি নেই। জনগণের মধ্যে তাদের কোন সমর্থন নেই। তাই তারা অন্যের শক্তির ওপর ভর করে দেশের মানুষকে পদানত করে রাখতে চায়। খালেদা জিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে একটি মামলার রায় নিয়ে এখন আমাদের দেশে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কি সে মামলা? এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সে মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি এ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ তিন শ’ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এ টাকা কোথা থেকে গেছে? এ টাকার উৎস কী? এভাবে তাদের আরও কত টাকা আছে, বাংলাদেশের মানুষ তা জানতে চায়? দেশের মানুষ মনে করে এই টাকা বাংলাদেশের জনগণের টাকা। এভাবে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এ টাকা ফিরিয়ে আনা দরকার। কিন্তু এ টাকার ব্যাপারে সরকার নীরব। তারা এ টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমা-ে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এ মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, জাগপা সহ-সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে শফিউল আলম প্রধান জানান জাগপার সর্বস্তরে বর্তমানে যে কমিটি আছে পরবর্তীতে একই কমিটি বহাল থাকবে।
×