বিভাষ বাড়ৈ ॥ সাত বছরে সারাদেশে সাত হাজার ৫৬৯ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একাডেমিক ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে আরও দুই হাজার ৪১৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। নতুন করে আরও প্রায় দশ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অডিটরিয়াম নির্মাণ এবং সংস্কার ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) পুরো কার্যক্রম ই- টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে সরকারের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের কারণে প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও বৈষম্য কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উন্নয়ন কাজের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী নিজেই এসব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন। সর্বক্ষণিক নজর রাখছেন প্রতিটি কাজের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট সরকারী-বেসরকারী এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে ৩১ হাজার ৪৪৮। এর মধ্যে ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকল্পভুক্ত দশ হাজার ১২৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে সাত হাজার ৫৬৯ প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি দুই হাজার ৪১৫ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, নতুন করে আরও প্রায় দশ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। দশ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এতে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে পূর্ণাঙ্গ ভবন নির্মাণ, ডিজিটাল শ্রেণীকক্ষ স্থাপন ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। অতীতে অন্য সংস্থা থেকে প্রকৌশলী এনে ইইডিতে প্রধান প্রকৌশলী করা হতো। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই প্রথা বাতিল করে নিজস্ব বিভাগ থেকেই জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করেন। এতে কাজের পরিবেশ ভাল হয়েছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) পুরো কার্যক্রম ই-টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থার পুরো কার্যক্রম ই-টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রকল্প কর্মকর্তারাও চাচ্ছেন দরপত্রের পুরো কার্যক্রম অনলাইনে আসুক। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি কার্যক্রম ই-টেন্ডারিং বা অনলাইনে শুরু হওয়ায় অসাধু ঠিকাদার বা টেন্ডারবাজদের দৌরাত্ম্য কমতে শুরু করেছে। বেড়েছে কাজের মান। এছাড়া উন্নয়ন কাজের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাও বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোমূলক কাজ করে থাকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। সংস্থাটি বর্তমানে ৫০ শতাংশ কাজের দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন, কার্যাদেশ প্রদান ও মনিটরিং করে থাকে ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিতে। ই-টেন্ডারিংয়ের কারণে ঠিকাদারদের অনৈতিক তৎপরতা অনেকটাই কমেছে বলে ইইডি বলছে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ইইডিকে পুরোপুরি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েেেছ ইতোমধ্যেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালকরা বলেছেন, সকল কাজ ই-টেন্ডারিংয়ে হলে যোগ্য ও দক্ষ ঠিকাদাররা কাজ পাবে। এতে প্রত্যেকটি কাজের কমপক্ষে ১০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হবে। কারণ বর্তমানে ঠিকাদারদের পছন্দ অনুযায়ী কাজ দিতে হয়।
এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদার কাজ পায় না। যার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব বেশি তাকেই বেশি কাজ দিতে হয়। ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ হানজালা বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে ইইডির ৫০ শতাংশ কার্যক্রম ইতোমধ্যেই অনলাইনের আওতায় এসেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধা থাকলেও মাঠপর্যায়ে আমাদের সকল দফতরের কার্যক্রমই আগামী জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় শিক্ষা অধিদফতরের পাশের ভবনের নবম তলায়। ইইডির অধীনে সারাদেশে ৩৮ জোনাল অফিস রয়েছে।
প্রতিটি জোনে এক নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ইইডি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন সরকারী/বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল কলেজ স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ/মেরামত ও সংস্কার কাজে নিয়োজিত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: