ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহভাজন খুনীদের ছবি আঁকানোর কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১ মে ২০১৬

সন্দেহভাজন  খুনীদের ছবি আঁকানোর কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের ছবি আঁকানোর কাজ শুরু হচ্ছে। হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা ও সুমন, তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রহিম এবং গৃহকর্মী রেশমার বর্ণনা মোতাবেক হত্যাকারীদের ছবি আঁকানো হবে। আঁকানো ছবির সঙ্গে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে থাকা ছবি মিলিয়ে দেখা হবে। এরপরই সম্ভাব্য খুনীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার অভিযান শুরুর কথা রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমে পরিচয় প্রকাশ হওয়া সন্দেহভাজন দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মামলা দুইটির তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তবে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের সঙ্গে ওই দুই যুবকের কোন সম্পৃক্ততার তথ্য মেলেনি। গত ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের ৩৫ নম্বর আছিয়া নিবাসের দ্বিতীয় তলায় নারায়ের তাকবির, আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে বাসায় ঢুকে চাপাতি দ্বারা কুপিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই, বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা ও ইউএসএআইডির কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করা হয়। হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শী বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ মোল্লা জানান, বিকেল পাঁচটার কিছুটা পর চার যুবক গেটে আসে। তাদের দুই জনের হাতে পার্সেলের প্যাকেট। একজনের হাতের পার্সেলের প্যাকেটটি খানিকটা ছোট। অপরজনের হাতেরটি বড়। তাদের পরনে প্যান্ট। আর গায়ে নীল রঙের টি শার্ট। পায়ে জুতা। সবারই একই পোশাক। দেখে মনে হচ্ছিল, তারা কোন কুরিয়ার সার্ভিসে কর্মরত। সবার পিঠেই ব্যাগ। সবার বয়স বিশ থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে। অনেকটা হালকা পাতলা গড়নের। তারা নিজেদের কুরিয়ার সার্ভিসের লোক বলে পরিচয় দিয়ে বলে, জুলহাস স্যারের পার্সেল আছে। এ সময় তিনি তাদের নিচে রেখে দ্রুত দোতলায় যান। যাওয়ার সময় ভুলে গেটে তালা না লাগিয়েই তাড়াহুড়া করে চলে যান। শুধু পকেট গেটের ছিটকিনি লাগিয়ে যায়। যাওয়ার পর পরই চারজন তার পিছু পিছু দোতলায় যায়। কলিং বেল টিপলে জুলহাস মান্নান দরজা খুলে দেন। তিনি জানান, তার কোন পার্সেল থাকার কথা নয়। এ সময় চারজন যুবক প্যাকেট দেখিয়ে জুলহাসকে বলে, আপনার জন্য একজন পাঠিয়েছে। যুবকরা পার্সেলের প্যাকেট দেখার জন্য জুলহাস মান্নানকে অনুরোধ করে। জুলহাস মান্নান দরজার সামনের দিকে গিয়ে প্যাকেট দেখার চেষ্টা করেন। এ সময় যুবকরা দ্রুত জুলহাস মান্নানকে ঠেলে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পারভেজ বাধা দিলে তার বাম হাতে ও মাথায় চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তিনি চিৎকার দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামেন। বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক আব্দুর রহিম জানান, তিনি বাথরুমে ছিলেন। পারভেজের চিৎকার শুনে তিনি বের হন। তাকে পিস্তলের মুখে বাড়ির নিচে গেট সংলগ্ন গার্ডরুমে নিয়ে আটকে রাখে। ওই দুইজনের বয়স বিশ থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে। তারা হালকা-পাতলা গড়নের। অপর নিরাপত্তাকর্মী সুমন জানান, তিনি নিচে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। পারভেজের চিৎকার শুনে তিনি জেগে ওঠেন। এ সময় তাকেও রহিমের মতো অস্ত্রের মুখে গার্ড রুমে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে। আর চিৎকার দিয়ে নামা পারভেজকে গার্ডরুমের বাইরে অস্ত্রের মুখে ওই যুবক দাঁড় করিয়ে রাখে। এ সময় গেটের বাইরে একজন পিস্তল ও চাপাতি হাতে নিয়ে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিল। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটের মাথায় ওই চার যুবক নেমে সাতজনই একত্রে দ্রুত পালিয়ে যায়। বাড়িটির গৃহকর্মী রেশমা জানান, ঘটনার সময় সে রান্না ঘরে চা বানাচ্ছিল। জুলহাসের চিৎকার শুনে সে বের হয়ে দেখে, চার যুবক জুলহাসকে কোপাচ্ছে। এ সময় সে ভয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মোতাবেক হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত সাতজনের ছবি আঁকানোর প্রস্তুতি চলছে। আঁকানো ছবি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে অভিযান চলবে। যদিও ঘটনার পর থেকেই নানা দিক পর্যালোচনা করে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাম পরিচয়সহ প্রকাশিত সন্দেহভাজন দুইজনের বিষয়ে তিনি বলেন, শনিবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন ওই খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য মেলেনি। এমনকি হত্যাকা-ের প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কারও সন্দেহভাজন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি আরও জানান, হত্যাকা-ের তদন্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে এ সংক্রান্ত কোন আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি। ডিবির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, এবারও অভিজিত রায়ের হত্যাকারীদের মত কলাবাগানের দুই খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন খুনীদের ছবি এঁকে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এফবিআই। পাশাপাশি হত্যাকা-ের আলামত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও আগ্রহ দেখানো হয়েছে এফবিআইয়ের তরফ থেকে। কিন্তু অভিজিত রায়ের হত্যাকা-ের তদন্তের অভিজ্ঞতা থেকে এবার কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত দেশেই ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিষয়টি এফবিআইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ছবি দেশীয় আঁকিয়ে দিয়ে আঁকানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে এফবিআইকে। তবে কি কারণে দেশীয় আঁকিয়ে দিয়ে আঁকানো হচ্ছে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ওই কর্মকর্তা বলছেন, অভিজিত রায়ের খুনীদের যে ছবি এফবিআইয়ের আঁকিয়েরা আঁকিয়েছিলেন তাতে অসঙ্গতি রয়েছে। হত্যাকারীদের ছবি বিদেশী নাগরিকের মতো দেখতে হয়েছে। অভিজিত হত্যাকা-ে দেশীয় জঙ্গীরা জড়িত বলে এখন পর্যন্ত তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ছবির ক্ষেত্রে অমিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এবার এফবিআইয়ের আঁকিয়েদের দিয়ে কলাবাগানের জোড়া খুনের হত্যাকারীদের ছবি আঁকানো হচ্ছে না।
×