ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদলির তদ্বির করলে নেতিবাচক হিসেবে দেখা হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১ মে ২০১৬

বদলির তদ্বির করলে  নেতিবাচক হিসেবে  দেখা হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মফস্বল থেকে রাজধানীর পছন্দের কলেজে বদলি হয়ে আসতে তদ্বিরকারী শিক্ষকদের কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ সম্মেলনে শিক্ষকদের ঢাকায় বদলি হয়ে আসার প্রবণতার দিক তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের বলি এখন থেকে অনলাইনে আবেদন করবেন। জেনুইন হলে অবশ্যই বদলি করব, এটা করা উচিত। কিন্তু কোন তদ্বির চলবে না। মন্ত্রী, সচিব, ডিজির কাছে কেউ এমন রিকমেন্ডেশন নিয়ে এলে তার জন্য সেটি নেতিবাচক হিসেবে দেখা হবে। এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর আয়োজিত প্রথম এ সম্মেলনে অধ্যক্ষদের কথাতেই উঠে আসে সরকারী কলেজগুলোতে চলমান ভয়াবহ শিক্ষক সঙ্কটের কথা। অধ্যক্ষরা লিখিতভাবে জানান, তাদের কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের ভয়াবহ তারতম্যের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন সরকারী কলেজ, ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন কলেজের ২৯৮ জন অধ্যক্ষ অংশ নিয়েছেন। কেবল অধ্যক্ষদের নিয়ে সরকারী উদ্যোগে এ ধরনের কর্মসূচী এটাই প্রথম। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন। দ্বিতীয় পর্বে ছিল শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় নিয়ে আলোচনা। দিনব্যাপী কর্মসূচীতে শিক্ষার মানোন্নয়ন, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক বিধি-বিধান, আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ও অধ্যাপক মোঃ জুলফিকার রহমান, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান এবং চট্টগ্রামের হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অঞ্জন কুমার নন্দী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষক সঙ্কট বিশেষত মফস্বলের কলেজগুলোতে ভয়াবহ শিক্ষক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, একটি কলেজে ৩৭টি পদ আছে। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ছয়জন। সবার শুধু ঢাকা ভাল লাগে। ঢাকার বাইরের ছেলেমেয়েরা কি পড়বে না? মন্ত্রী বলেন, তার নিজ এলাকার কলেজেই শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে বলে পত্রিকায় এসেছে। আমাদের অনেক টিচার আছেন, সবাই উদগ্রিব, তার পছন্দের জায়গায় যাওয়ার জন্য। আমার কাছে যদি ১০০ জন লোক আসে, তার ৮০ জন আসে কেবল ঢাকায় আসার জন্য। সরকারী চাকরি করতে হলে সরকার যেখানে দেয়, সেখানে যাওয়া নিয়ম। তারা নানা রকম ক্ষমতাবান লোক দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এটা অন্যায়, নিয়ম নেই। এই প্রবণতা বন্ধে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রী, সচিব, ডিজির কাছে কেউ এমন রিকমেন্ডেশন নিয়ে এলে তার জন্য সেটি নেতিবাচক হিসেবে দেখা হবে। যিনি বদলি হতে চান তিনি অনলাইনে আবেদন করবেন। জেনুইন হলে অবশ্যই বদলি করব, এটা করা উচিত। কিন্তু কোন তদবির চলবে না। কলেজের অধ্যক্ষদের শিক্ষক হিসেবে ভাল হওয়ার পাশাপাশি পরিচালক হিসেবে দক্ষ হওয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী। যেসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়, সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ না বলার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, অতি উৎসাহের কারণে আমরা দু-একটার নাম দিয়ে দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বলে কিছু নেই। এটা খুশির জন্য বলেন, আনন্দের জন্য বলেন। কিন্তু এটা কিন্তু অফিসিয়াল কোন নাম না। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ বলে কিছু নেই। শিক্ষামন্ত্রী আবারও পাবলিক পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, দীর্ঘতম পরীক্ষা চলতে পারে না। ১০ দিনের বেশি পরীক্ষা চলতে পারে না। আমাদের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে বড় সমস্যা, এত দীর্ঘ সময় নিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, এই পরীক্ষা নিতে গেলে কলেজ-স্কুলে ক্লাস করানো যায় না। এক স্কুলের পরীক্ষা অন্য স্কুলে নেয়া হয়। এবারের এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের ৩ তারিখে শুরু হয়ে ১০ জুন শেষ হবে। এভাবে দীর্ঘ সময় পরীক্ষা চলতে পারে না। মন্ত্রী শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কম সময়ের মধ্যে কৌশল করে এই পরীক্ষা নিতে হবে। এজন্য ডেডিকেটেড ও কমিটেড শিক্ষক দরকার। যিনি সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে পরীক্ষা নিতে পারবেন। এদিকে অধ্যক্ষ সম্মেলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসাসহ সরকারী কলেজ পর্যায়ের ৩২৯টি প্রতিষ্ঠান আছে। অধ্যক্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা মাউশির তৈরি নির্ধারিত ছকে শিক্ষক সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন। অধিদফতরের কলেজ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সম্মেলনের আগে অধ্যক্ষদের কাছে নির্ধারিত একটি ছকে কলেজসংক্রান্ত কয়েকটি তথ্য চাওয়া হয়। এতে মোট ৩০৯টি কলেজের অধ্যক্ষরা তথ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে ২১২ জন অধ্যক্ষই তাদের কলেজে শিক্ষক সঙ্কট থাকার কথা জানিয়েছেন। শিক্ষক সঙ্কটের পরেই শ্রেণীকক্ষ, অবকাঠামোসহ সমস্যার কথা জানিয়েছেন তারা। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সরকারী কলেজে মোট ১৫ হাজার ২৮৯টি অনুমোদিত পদের মধ্যে তিন হাজার ৭৫৪টি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ পদই শূন্য। অধ্যক্ষদের দেয়া প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মফস্বল এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোতেই শিক্ষক সঙ্কট বেশি। লক্ষ্মীপুর সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, তার কলেজে মোট ছাত্রী এক হাজার ৮০০ জন। অথচ কলেজে মোট ৩১টি সৃষ্টপদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। শিক্ষামন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে মোট শিক্ষার্থী আট হাজার ৩২০ জন। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পড়ানো হয়। অথচ এই কলেজে ৪৭টি সৃষ্টপদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩২ জন। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বলেছেন, পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এজন্য পদ সৃষ্টি ও শূন্যপদে নিয়োগ দিতে হবে।
×